শুক্রবার, ৯ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ

এ কলঙ্কের অবসান হোক

খেলাপি ঋণ বাংলাদেশের ব্যাংকব্যবস্থার কলঙ্ক হিসেবে বিবেচিত। এ কলঙ্ক মোচনের বদলে তার শ্রীবৃদ্ধিকেই যেন কর্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন একশ্রেণির ব্যাংক পরিচালক ও কর্মকর্তা। ‘এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই’ তত্ত্বে বিশ্বাসী এসব চোর-মহাচোর ব্যাংক থেকে যে ঋণ বরাদ্দ করেন তার উদ্দেশ্য থাকে ব্যাংকের জন্য মুনাফা অর্জন নয়, নিজেদের পকেট ভরা। ফলে প্রতি বছরই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। গত মঙ্গলবার আইএমএফ প্রতিনিধি দল অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠকে মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ সম্পর্কে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। আইএমএফ বলেছে, মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণের ছোবল বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে অনবরত রক্তক্ষরণ ঘটাচ্ছে। তাদের অভিমত, এই রক্তক্ষরণ ব্যাংকিং খাতকে ক্রমে দুর্বলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। দুর্বল ব্যাংকিং খাত কখনই অগ্রসরমাণ অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হতে পারে না। তাই এ রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে হলে খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতিতে লাগাম টেনে ধরতে হবে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে আইএমএফের উদ্বেগ তাৎপর্যের দাবিদার। ব্যাংক থেকে যে ঋণ বিতরণ করা হয় তা ব্যাংকের পরিচালক বা কর্মকর্তাদের কারও পৈতৃক অর্থ নয়, গ্রাহকদের সঞ্চিত টাকা। এ টাকার মালিক-মোক্তার সাধারণ গ্রাহক তথা দেশের সাধারণ মানুষ। ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করে মুনাফার আশায়। এ বাবদ তারা যে সুদ বা সার্ভিস চার্জ পায় তা ব্যাংকের মূলধন বাড়ায়। এ অর্থ সঞ্চয়ীদের মুনাফাও নিশ্চিত করে। নিশ্চিত করে সঞ্চিত অর্থের নিরাপত্তা। এ নিরাপত্তা ব্যাংকগুলোকে শিল্প খাতে বা ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে নতুন নতুন ঋণদানের সক্ষমতা জোগায়। বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা শুরু থেকেই বেপরোয়া লুটপাটের মৃগয়া ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহূত হওয়ায় তা বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। সরকার নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলোয় লুটপাটের প্রক্রিয়ায় প্রতি বছরই হাজার হাজার কোটি টাকা হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি কোনো কোনো ব্যাংকের পরিচালকরা তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাকংকে লুটপাটের মৃগয়া ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলো লুটপাটের ক্ষেত্রে এগিয়ে। ঋণ বিতরণের নামে লুটপাটের অপখেলা ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থায় চির ধরাচ্ছে। দেশের অর্থনীতির জন্য সৃষ্টি করছে বিসংবাদ। এ ব্যাপারে সরকার তথা অর্থ মন্ত্রণালয় সজাগ হবে, এমনটিই কাম্য। ঋণ খেলাপ সংস্কৃতির ইতি ঘটাতে খেলাপি ঋণ আদায়ে কড়া আইন প্রণয়নেও সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

এটি তাদের কর্তব্য বলেই বিবেচিত হওয়া উচিত।

সর্বশেষ খবর