শুক্রবার, ৯ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

চাকরিতে কোটাপ্রথা

সময়োপযোগী সংস্কার কাম্য

সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগে কোটার কোনো পদ যোগ্য প্রার্থীর অভাবে পূরণ করা না গেলে তা মেধা তালিকা থেকে পূরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি আদেশ জারি করেছে এবং তা সরকারি কর্মকমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স ও মিডওয়াইফ পদে কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় কোটাপ্রথা শিথিলের এ আদেশ দেওয়া হলেও তা আগামীতে সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। বর্তমানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরির শূন্যপদের ৪৫ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে পূরণ করা হয়, বাকি ৫৫ শতাংশ পূরণ করা হয় অগ্রাধিকার কোটায়। কোটাপ্রথায় মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরেই চলছে এমন আলোচনা-সমালোচনা। বিভিন্ন সময়ে চাকরিতে কোটা সংস্কারের জন্য শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি উঠলেও তা বাস্তবায়নে সরকার কোনো আগ্রহ দেখায়নি। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র সংরক্ষণ পরিষদ’ কোটাব্যবস্থা ১০ শতাংশে নিয়ে আসা, কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে শূন্যপদে নিয়োগ দেওয়া, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ পরীক্ষা না নেওয়া, সরকারি চাকরিতে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা এবং চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটাসুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করার দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছে। কোটা শিথিলের নতুন সিদ্ধান্তে তাদের দাবি কিছুটা হলেও পূরণ হবে। তবে সরকারের এ সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হতে পারেননি আন্দোলনকারীরা। তাদের আশঙ্কা, কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশজুড়ে ছাত্রদের মধ্যে যে ঐকমত্য গড়ে উঠেছে তা থামিয়ে দিতে সরকার হয়তো এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশে বর্তমানে যে কোটাপ্রথা রয়েছে তাতে সরাসরি লাভবান হচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা। সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশকে এগিয়ে নিতেও কোটাপ্রথাকে কাজে লাগানো হচ্ছে। কোটাপ্রথার যৌক্তিকতা থাকলেও মোট সরকারি চাকরির ৫৫ ভাগ কোটার ভিত্তিতে পূরণ করা কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে প্রশ্ন কম নয়। এর ফলে মেধাবীরা প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে সরকার মেধাবীদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কোটাপ্রথা যুক্তিসংগত পর্যায়ে সীমিত করা হলে একদিকে যেমন সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণ হবে, অন্যদিকে যেসব উদ্দেশ্যে কোটাপ্রথা চালু রাখা হয়েছে তার প্রতিও সুবিচার করা হবে। কোটাপ্রথার ফলে মেধাবীরা সরকারি চাকরির ব্যাপারে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে উৎসাহ হারাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে কোটা শিথিল অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তবে এ বিষয়টি নিয়ে যে অসন্তুষ্টি রয়েছে তা নিরসনে কোটাব্যবস্থার যুক্তিসংগত সংস্কারের বিষয়ে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর