মঙ্গলবার, ১৩ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি

প্রতিশ্রুতি পূরণে দিল্লিকে যত্নবান হতে হবে

পানির অভাবে বাংলাদেশের তিস্তা অববাহিকায় এখন হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। একসময়ের প্রমত্তা তিস্তা পানি সংকটে ভুগছে উজানে বাঁধ বেঁধে অনুদারভাবে পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ার কারণে। আন্তর্জাতিক আইনে অভিন্ন নদীর পানির ওপর অববাহিকা এলাকার বাসিন্দাদের সমানাধিকারের বিষয়টি স্বীকৃত। উজানের দেশ ভারতও এ অধিকারের প্রতি দৃশ্যত শ্রদ্ধাশীল। তবে তিস্তাসহ বেশ কয়েকটি নদীর পানি বণ্টনে যে অচলাবস্থা চলছে তা ভারতের আন্তরিকতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের আমলে সমঝোতা হয়েছিল তিস্তার পানি সমানভাবে বণ্টন করা হবে। ২০১১ সালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে এ বিষয়ে চুক্তিতে উপনীত হওয়ার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তির মুখে সে চুক্তি শেষ পর্যন্ত হয়নি। পরে ভারতের শাসনক্ষমতায় আসে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিক বৈঠকে দুই সরকারের বর্তমান মেয়াদেই তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। চলতি বছরই বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। কিন্তু এখনো চুক্তির ব্যাপারে কোনো আশার আলো জ্বলে ওঠেনি। ভারত সফররত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, সব পক্ষকে নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সইয়ের বাধাগুলো দূর করার চেষ্টা করছেন। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট যে, তারা তিস্তা চুক্তির বিষয়ে আগের অবস্থানেই আছেন। বাংলাদেশকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে দিল্লির বর্তমান সরকার আন্তরিক আমরা তেমনটি বিশ্বাস করতেও চাই। তবে চলতি বছরের মধ্যে চুক্তি না হলে তা বাংলাদেশের জন্য কতটা বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়াবে, সে বিষয়টিও বিবেচনার দাবি রাখে। পানি প্রত্যাহারের কারণে তিস্তা অববাহিকায় যে হাহাকার অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করলে তা হবে সবার জন্য দুর্ভাগ্যজনক। এ বিসংবাদ এড়াতে তিস্তা চুক্তি সম্পাদনে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের চেষ্টায় আরও গতি সৃষ্টি করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের বন্ধুত্বের স্বার্থেই নয়াদিল্লিকে প্রতিশ্রুতি পূরণে যত্নবান হতে হবে। দ্রুত চুক্তিতে উপনীত হওয়ার জন্য ভারত সরকার তৎপর হবে— আমরা এমনটিই দেখতে চাই।

সর্বশেষ খবর