মঙ্গলবার, ১৩ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
ইতিহাস

নীল কুঠিয়ালদের দৌরাত্ম্য

নীল চাষের পেছনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মদদ ছিল। হ্যালিডে যখন বাংলায় ছোটলাট হয়ে আসেন, তখন তিনি নীল কুঠিয়ালদের নীল উৎপাদনের প্রধান জেলাগুলোয় সহকারী অবৈতনিক ম্যাজিস্ট্রেট পদে বহাল করেছিলেন। নীল কুঠিয়ালরা ম্যাজিস্ট্রেট পদে বহাল হওয়ায় রায়তদের ওপর অত্যাচার আরও বেড়ে গিয়েছিল। কৃষকের ওপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালানো হতো।

খেজুরবাগান কেটে বাধ্য করা হতো নীল চাষ করতে। যেসব কৃষক অত্যাচারের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতেন তাদের ভিটেমাটিতে লাঙ্গল দিয়ে নীলের আবাদ করানো হতো। কারও কারও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হতো। ঘটি, বাটি, থালা, গরু-ছাগল ইত্যাদি লুটপাট করে নিয়ে যাওয়া হতো। কোনো কিছুই তাদের হাত থেকে রেহাই পেত না। প্রতিটি নীলকুঠিতে ছিল কয়েদখানা। অবাধ্য প্রজাকে ধরে উত্তমমধ্যম দিয়ে আটকে রাখা হতো তার মধ্যে। কোনো কোনো গ্রামে নীল চাষ না করার অপরাধে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। এর পরও ছিল স্ত্রীলোকের ওপর অত্যাচার।

অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় নীল চাষের বিরুদ্ধে চাষিরা ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেন এবং চারদিকে দেখা দিয়েছিল বিদ্রোহের ধুয়া। যশোর, নদীয়া, পাবনা প্রভৃতি যেসব জেলায় নীল চাষ বেশি হতো, সেসব অঞ্চলেই বিদ্রোহ প্রবল আকার ধারণ করে। যশোরে সর্বপ্রথম বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস ও দিগম্বর বিশ্বাসের নেতৃত্বে চৌগাছায়। তারপর মহেশপুরের ইলিশমারীর কুঠিরের পাশের গ্রাম নারায়ণপুর ও বড়খানপুরের চাষিরা সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে বনগাঁর জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেটের এক সাক্ষ্যে জানা যায়, নীল বোনা নিয়ে কুঠিয়ালদের সঙ্গে কৃষকের একটা বিবাদ বেধেছিল। কৃষক উত্তেজিত হয়ে বাগদা থানা আক্রমণ করেছিল। ঝিকরগাছার বেনেয়ালী গ্রামেও একই ধরনের একটা সশস্ত্র হামলা সংঘটিত হয়।

নীলকরদের মাল বহনের যোগাযোগের রাস্তা কৃষকের বিদ্রোহের ফলে বন্ধ হয়ে যায়। যেসব জমিতে নীলের গাছ ছিল, চাষিরা অস্ত্র দিয়ে কেটে নষ্ট করে দেয়। কুঠির পর কুঠি লুটতরাজ করে সব রকমের হিসাবের খাতা আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়।

সশস্ত্র কৃষক সরকারি অফিস, স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাচারি প্রভৃতির ওপর আক্রমণ চালায়। তাদের অস্ত্র ছিল বর্শা, তরবারি, বাঁশের লাঠি আর ঢাল। এই বিদ্রোহে হিন্দু-মুসলমান কৃষক ধর্মবর্ণনির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে যোগ দিয়েছিল। সিন্দুরিয়া কানসারণের কুঠিয়াল জর্জ ম্যাকনেয়ারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সিন্দুরিয়া ও জোড়াদহের কৃষক সাধুহাটির জমিদার মথুরানাথ আচার্য ও তার অন্যতম অংশীদার দিকপতির বাবুর নেতৃত্বে বিদ্রোহ করেছিল।

সর্বশেষ খবর