সোমবার, ২৬ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

স্বাধীনতা সবচেয়ে বড় নেয়ামত

মাওলানা মুহম্মাদ সাহেব আলী

মানুষকে আল্লাহতায়ালা যতগুলো নেয়ামত দিয়েছেন তার মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ নেয়ামত হলো স্বাধীনতা। আর কোনো সৃষ্টিকে আল্লাহতায়ালা এমন সুমহান নেয়ামত দেননি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘তোমরা যদি মহান আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর তবে তা শেষ করতে পারবে না।’ (সূরা নাহল, আয়াত ১৭)। স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। যারা মানুষের স্বাধীনতা হরণ করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা মুমিনের একান্ত কর্তব্য। নিজের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করাকে মুমিনের বৈশিষ্ট্য বলা হয়েছে কোরআনে। ‘প্রকৃত বিশ্বাসী ও আল্লাহর ওপর ভরসাকারী তারাই, যারা অত্যাচারিত ও নির্যাতিত হলে প্রতিরোধ করে।’ (সূরা শুরা, আয়াত ৩৯)। এ প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করতে গিয়ে কেউ যদি নিহত হয় তবে রসুলের হাদিসে তাকে শহীদ বলা হয়েছে। সাঈদ ইবনে যায়িদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিজের সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয় সে শহীদ। নিজের পরিবার-পরিজন রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত সে শহীদ। নিজের জীবন অথবা ধর্ম রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয় সেও শহীদ।’ (তিরমিজি)। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিজের অধিকার আদায় করতে গিয়ে যে নিহত হয়েছে সে শহীদ। (নাসায়ি)। অন্য একটি হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কতই না চমৎকার মৃত্যু তার, যে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে নিহত হলো। (মুসনাদে আহমাদ)।

মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদারদের ভয়ে এক কোটি মানুষ দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। সবারই জানা ১৪০০ বছর আগে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও পৌত্তলিকদের অত্যাচারের মুখে মক্কা ছেড়ে মদিনায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। যাওয়ার সময় তিনি পেছন ফিরে বারবার মক্কার দিকে তাকাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, ‘আল্লাহর কসম! হে মক্কা, নিশ্চয়ই তুমি সবচেয়ে প্রিয় ও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম স্থান। আমাকে যদি এখান থেকে বের করে না দেওয়া হতো আমি কিছুতেই তোমাকে ছেড়ে যেতাম না।’ (জামে তিরমিজি : ৫/৭২২)। 

পবিত্র কোরআন এবং হাদিসের আলোকে বলা যায় দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অর্জনের জন্য যেসব বিশ্বাসী প্রাণ জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন তারা সবাই শহীদি মর্তবা পেয়েছেন। আমাদের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা তাদের জন্য উৎসর্গ করতে হবে। প্রতিদিনকার প্রার্থনায় তাদের শরিক রাখতে হবে। তাদের রুহের মাগফেরাতে বিভিন্ন ধরনের দোয়া-দুরুদ, মিলাদ-মাহফিল এবং কল্যাণমুখী কাজ করতে হবে। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যদি কেউ তোমাদের কোনো উপকার করে তবে তাকে প্রতিদান দেবে। যদি প্রতিদান দিতে না পার তবে তার জন্য এমনভাবে দোয়া করবে যেন তোমাদের মন সাক্ষী দেয়, হ্যাঁ তোমরা তার প্রতিদান দিয়ে দিয়েছ।’ (আবু দাউদ)। শুধু স্বাধীনতা দিবসেই নয়, বছরের প্রতিটি দিন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে মোনাজাত করতে হবে। কারণ, তাদের অসিলায় আমরা আজ স্বাধীন। তাদের কারণেই স্বাধীনভাবে ডাকতে পারছি মহান আল্লাহকে। কৃতজ্ঞতা মহান আল্লাহর কাছে। কৃতজ্ঞতা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে স্বদেশকে ভালোবেসে আমাদের জন্য দেশপ্রেমের আদর্শ রেখে গেছেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্বদেশ মক্কাকে ভালোবাসতেন, মক্কার জনগণকে ভালোবাসতেন। তাদের আল্লাহর পথে আনার জন্য তিনি অপরিসীম অত্যাচার সহ্য করেছেন। তারপরও কখনো স্বদেশবাসীর অকল্যাণ কামনা করেননি। তায়েফে নির্যাতিত হওয়ার পরও কোনো বদদোয়া করেননি।

হিজরতের পর মদিনায় হজরত আবুবকর (রা.) ও হজরত বেলাল (রা.) জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। অসুস্থ অবস্থায় তাদের মনে প্রিয় স্বদেশ মক্কার স্মৃতিচিহ্ন জেগে উঠেছিল। তারা জন্মভূমি মক্কার কথা স্মরণ করে আবেগে আপ্লুত হয়ে কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের মনের এ দুরবস্থা দেখে প্রাণভরে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! আমরা মক্কাকে যেমন ভালোবাসি, তেমনি তার চেয়েও বেশি মদিনার ভালোবাসা আমাদের অন্তরে দান করুন।’ (বুখারি শরিফ)। আমাদের স্বাধীনতা এসেছে রক্তের বিনিময়ে। এই স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে জঙ্গি নামের বিপথগামীরা। আল্লাহ তাদের ষড়যন্ত্র থেকে আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন। আমিন।

 

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর