উন্নয়নের নামে খাল বিল নদী ভরাটের অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ড মানুষের জন্য বিপদ ডেকে আনছে। পানির দেশ বলে পরিচিত যে বাংলাদেশ, সে দেশের বহু জনপদ এখন পানি সংকটে ভুগছে। দেখা দিয়েছে পানযোগ্য পানির অভাব। চাষের জন্য ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশ নিচে নেমে যাওয়ার বিপদ ঘটছে। এ বাস্তবতার কথা মনে রেখেই প্রধানমন্ত্রী গত মঙ্গলবার বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নদ-নদী, খাল-বিল সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। বলেছেন, দেশের নদ-নদীর নাব্যতা রক্ষা করতে হবে। নদী আমাদের অভিশাপ নয়, একে আশীর্বাদ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য পানির ভূমিকা অনেক। জীবজন্তু ও পশুপাখি সবার জন্য পানি প্রয়োজন। গাছপালার জন্যও চাই পানি। কৃষি কাজের জন্যও পানি প্রয়োজন। বিশুদ্ধ পানি কীভাবে সংরক্ষণ করা যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। বিশ্বের ১০০ কোটি মানুষ সুপেয় পানি পায় না। পানির জন্য অনেক দেশেই হাহাকার রয়েছে। আমাদের সৌভাগ্য যে, বাংলাদেশে এ সমস্যাটা নেই। তবে দিন দিন পানির জায়গাগুলো সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। নগরায়ণ ও আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির ক্ষতির বিষয়টা বিবেচনা করতে হবে। বাংলাদেশে প্রায় ৭০০ নদী রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে, এ নদীগুলোর ধারণক্ষমতা কমে গেছে। নদীর তলদেশ আস্তে আস্তে উঁচু হয়ে যাচ্ছে। ড্রেজিং করে, নাব্যতা বাড়িয়ে, বর্ষাকালের পানি আমরা যতটা বেশি সংরক্ষণ করতে পারব তত বেশি উপকার হবে। আন্তদেশীয় নদীর পানি ব্যবস্থাপনার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী ৫৪টা নদী ভারত থেকে এসেছে। এই নদীগুলোর পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করা হচ্ছে, পানি পাওয়া যাবে। বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য খুবই গুরুত্ববহ এবং তাৎপর্যের দাবিদার। উন্নয়নের নামে খাল-বিল জলাভূমি ধ্বংসের আত্মঘাতী প্রবণতা থেকে সরে আসার যে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তা জলাশয় সংরক্ষণে অবদান রাখবে আমরা এমনটিই আশা করতে চাই। নদ-নদী বাঁচাতে ব্যাপকভাবে নদী খননের উদ্যোগও নিতে হবে। ব্যাপক মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এটিকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করার কথা ভাবতে হবে।