বৃহস্পতিবার, ২৯ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

নবীর চারিত্রিক সৌন্দর্যে বিমোহিত আরব ভূমি

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

নবীর চারিত্রিক সৌন্দর্যে বিমোহিত আরব ভূমি

রসুল (সা.) ছিলেন চারিত্রিক সৌন্দর্যের আধার। উত্তম আদর্শের ঠিকানা। সর্বোত্তম চরিত্রের দিশারী। সুন্দর আচার-ব্যবহারের মাইলস্টোন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী’। সূরা : আল কলম, আয়াত : ৪। প্রিয় নবীর মহান চরিত্র এবং উত্তম আদর্শ সব মুসলমানের জন্য অনুসরণীয় এবং অনুকরণীয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রসুলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে’। সূরা : আহজাব, আয়াত : ২১। রসুল (সা.) এর আচার-ব্যবহার এবং চরিত্র মাধুর্য কেমন ছিল, তা ‘শামায়েলে তিরমিজি’ নামক বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ হয়েছে। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত—  তিনি বলেন, আমি ১০ বছর যাবৎ রসুলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমত করেছি। তিনি (এ দীর্ঘ সময়) আমাকে কখনো উহ শব্দ পর্যন্ত বলেননি। আমি কোনো (অনুচিত) কাজ করে ফেললেও তিনি বলেননি এ কাজ কেন করলে? আর কোনো (উচিত) কাজ না করে থাকলেও বলেননি যে, কেন তুমি এই কাজ করলে না? প্রিয় নবীর প্রিয়তমা স্ত্রী হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত : রসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর বাস্তায় জিহাদ ব্যতীত কখনো কাউকে আপন হাত দ্বারা আঘাত করেননি, কোনো খাদেমকেও না, কোনো মেয়ে লোককেও না, অর্থাৎ কখনো কোনো স্ত্রীকে, শিশু-কিশোরকে বা কাজের ছেলেমেয়েকে অথবা অন্য কাউকে প্রহার করেননি। আঘাত করেননি। জীবনে একবারও না। রসুল (সা.) এর নাতি হুসাইন (রা.) বলেছেন— একবার আমি আমার পিতা হজরত আলী (রা.)-কে রসুলুল্লাহ (সা.) কর্তৃক তার মজলিসের সাথীদের সঙ্গে আচার-আচরণ ও ব্যবহার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সদা প্রফুল্লচিত্ত। সহজ-স্বাভাবিক এবং নরম মেজাজি। তিনি কর্কশ কথা বলতেন না। কঠিন হৃদয়ের ছিলেন না। অশ্লীল কথা বলতেন না। কারও দোষ বলে বেড়াতেন না। কৃপণও ছিলেন না। অপছন্দের বিষয় থেকে বিমুখ ও অমনোযোগী থাকতেন। কাউকে তার থেকে নিরাশ করতেন না। আবার সে ব্যাপারে ওয়াদাও দিতেন না। তিনি তিনটি বিষয় থেকে নিজেকে দূরে রাখতেন। ১. ঝগড়া-বিবাদ, ২. অহংকার-গর্ব, ৩. অনর্থক-বেহুদা কথাবার্তা থেকে। আর তিনটি বিষয় থেকে মানুষদের বাঁচাতেন। ১. তিনি কারও নিন্দাবাদ করতেন না, ২. কারও দোষ বর্ণনা করতেন না, ৩. কারও দোষ ও গোপনীয়তা অন্বেষণ করতেন না। তিনি শুধু ওই বিষয়ই কথাবার্তা বলতেন যাতে সওয়াবের আশা করতেন (অর্থাৎ সওয়াবের কারণ হয় এমন কথা বলতেন)। অপর বর্ণনায় এসেছে, রসুলুল্লাহ (সা.) তার জিহ্বাকে জরুরি বিষয় ছাড়া সংযত রাখতেন। তিনি তার সাহাবি-সাথীদের খোঁজখবর নিতেন। মানুষের পরস্পরের অবস্থা তদারকি ও জিজ্ঞাসা করতেন। ভালো কথাকে ভালো বলে তাকে দৃঢ় সমর্থন করতেন। আর খারাপকে খারাপ বলে তা দূরে ছুড়ে দিতেন।

লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর