শনিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
ইতিহাস

উটের যুদ্ধ

হজরত আয়েশা (রা.), যিনি প্রকৃত অবস্থা অবগত ছিলেন না, তিনিও হজরত উসমানের হত্যাকারীদের শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে হজরত তালহা (রা.) এবং হজরত যুবাইর (রা.)-এর সঙ্গে যোগ দেন। তিনজনে মিলে বসরার উদ্দেশ্যে এক সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেন। হজরত আলী (রা.) যুদ্ধ এবং রক্তপাত এড়াতে যারপরনাই চেষ্টা করেন, কিন্তু তাঁর সব প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তাঁর এবং হজরত আয়েশা (রা.)-এর সৈন্যবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয়, যদিও, হজরত তালহা (রা.) এবং হজরত যুবাইর (রা.) যুদ্ধের আগেই সেনাবাহিনী ত্যাগ করেন এবং অন্য কোনো শত্রুর দ্বারা নিহত হন। হজরত আয়েশার (রা.) সৈন্যরা পরাজিত হলে হজরত আলী (রা.) তাঁকে যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন এবং তাঁর নিরাপত্তার খেয়াল রাখেন। তিনি তাঁর ভাই মোহাম্মদ বিন আবু বকর (রা.)-এর রক্ষাবেষ্টনীতে তাঁকে মদিনায় প্রেরণ করেন। এটি ‘উটের যুদ্ধ’ নামে খ্যাত; কারণ হজরত আয়েশা (রা.) যুদ্ধের সময় উটের ওপর সওয়ার ছিলেন। পরবর্তীতে, হজরত আয়েশা (রা.) জীবনভর হজরত আলী (রা.)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য অনুতপ্ত ছিলেন। উটের যুদ্ধের পর হজরত আলী (রা.), হজরত মুয়াবিয়া (রা.)কে, যিনি তখনো তাঁর হাতে বয়াত গ্রহণ করেননি, ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানান। কিন্তু হজরত মুয়াবিয়া (রা.) এ অজুহাতে তাঁর কাছে নিজেকে সমর্পণ করেনি যে, হজরত উসমান (রা.) যিনি উমাইয়া বংশোদ্ভূত ছিলেন, তার রক্তের প্রতিশোধ প্রথমে নিতে হবে। আমির মুয়াবিয়া (রা.), আমর বিন আস (রা.)-এর সহায়তায়, সৈন্য প্রস্তুত করা শুরু করে। হজরত আলী (রা.), অন্য কোনো বিকল্প না পেয়ে, মুয়াবিয়ার সঙ্গে লড়ার জন্য সিরিয়ার দিকে অগ্রসর হতে হয়। ৫৬৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাইয়ে দুই সৈন্যবাহিনী ‘সিফফিনে’ যুদ্ধে উপনীত হয়। দুই পক্ষেই ব্যাপক হতাহত হয়; কিন্তু যুদ্ধ এ মতৈক্যে শেষ হয় যে, বিষয়টি একটি মধ্যস্থতা কমিটিতে নিষ্পত্তি হবে। এ কমিটিতে হজরত আলী (রা.)-এর পক্ষে আবু মুসা আল আসরি (রা.) এবং আমির মুয়াবিয়ার পক্ষে আমর বিন আস (রা.) প্রতিনিধিত্ব করে। দুর্ভাগ্যবশত এ মধ্যস্থতা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়, কারণ আমর বিন আস (রা.) আবু মুসা আল আসরির (রা.) সঙ্গে গৃহীত সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ায়। একটি বড় দল, যারা মধ্যস্থতার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ছিল, হজরত আলী (রা.) থেকে সরে গিয়ে তাদের জন্য এক নতুন আমির নির্বাচিত করে নেয়। এ দলটিকে ‘খারেজি’ বলা হয়।  সর্বপ্রথম, হজরত আলী (রা.) তাদের বুঝিয়ে রাজি করানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু তা নিষ্ফল হয়; যা ভয়াবহ যুদ্ধে  মোড় নিলে প্রচুর খারেজি নিহত হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর