শনিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

মিয়ানমারের সুমতি কাম্য

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে অন্তর্ভুক্ত করতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। প্রতিবেশী দেশটি বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়নে সময় ক্ষেপণকে কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছিল। এ প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে শরিক করতে আপত্তি জানাচ্ছিল মিয়ানমার। সেদিক থেকে জাতিসংঘের ব্যাপারে তাদের আপত্তির অবসান অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক। তবে এটি নিছক মুলা ঝুলিয়ে সান্ত্বনা দেওয়া কিনা সে সন্দেহও একই সঙ্গে উঁকি দিচ্ছে। গত নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। স্বাক্ষরিত ওই ‘অ্যারেঞ্জমেন্টে’ দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের নাগরিকদের প্রত্যাবাসন শুরু করার কথা বলা হলেও কত দিনের মধ্যে প্রত্যাবাসন শেষ করা হবে সে বিষয়টির উল্লেখ ছিল না। প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে মিয়ানমার ১৯৯২ সালের চুক্তিকে ভিত্তি হিসেবে খাড়া করে। যাচাই-বাছাই করে মিয়ানমারের নাগরিক এমন লোকদেরই শুধু ফেরত নেওয়া হবে এমন কথাও বলা হয়। দৃশ্যত বিষয়টি আপত্তিকর না হলেও মিয়ানমার একে যে সময় ক্ষেপণের হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে তা প্রমাণিত হয়েছে। চুক্তির পর ইতিমধ্যে চার মাস কেটে গেলেও একজন নাগরিককেও তারা ফেরত নেয়নি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কাজ অচিরেই শুরু করা আদৌ সম্ভব হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। কারণ বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর হয় জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে নতুবা ভেঙেচুরে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে বাড়িঘর তৈরির আগে তাদের প্রত্যাবাসন বাস্তব কারণেই সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে মিয়ানমারের কোনো প্রস্তুতি দৃশ্যত নেই। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ জড়িত হলে রোহিঙ্গাদের জন্য ঘরবাড়ি নির্মাণ প্রক্রিয়া জোরেশোরে শুরু করা সম্ভব হবে। তবে সে ক্ষেত্রেও মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। বিশেষ করে দুই শক্তিধর প্রতিবেশী চীন ও ভারতকে সক্রিয় হতে হবে। বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রেখেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চায়। এশিয়ার এ অঞ্চলে বিশ্বশক্তিগুলোর দাবা খেলা শুরু হোক তা বাংলাদেশের কাম্য নয়। সে ধরনের কোনো সম্ভাবনা মিয়ানমার এবং তাদের মুরব্বিদের জন্যও সুখকর হবে না। আমরা আশা করব, নিজেদের স্বার্থেই তারা এটি বুঝতে সক্ষম হবে এবং সমস্যার সমাধান তথা রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে সুমতির পরিচয় দেবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর