শনিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে চলতে হবে

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে চলতে হবে

আজকে যারা বড়, তারা সবাই একদিন ছোট ছিল। ফুটেছিল মানব ফুল শিশু হয়ে। শিশু হয়ে ফোটার আগে আমরা সবাই ছিলাম মায়ের পেটে  মানব কলি হয়ে।  বাবার ঔরস থেকে মানব বীজ যখন মায়ের পবিত্র জরায়ুতে স্থান পেল, তখন থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ওই বীজ ঘুমিয়ে থাকে। নির্দিষ্ট সময়ের পর আল্লাহতায়ালা মানব ভ্রূণে প্রাণের স্পন্দন জাগিয়ে দেন। কীভাবে দেন? কোরআন গবেষক ও সুফি ছড়াকার হাফেজ আহমাদ উল্লাহ ছন্দের সুরে বলেছেন সে রহস্য—

‘ছোট্ট যখন ছিলাম মায়ের

পেটের ভেতর শুয়ে

শিশুর ভেতর রুহু দিলেন

প্রভুই তো এক ফু’য়ে

মায়ের প্রেমে প্রভু হাসেন

ইনসানি বীজ রুয়ে।’

মায়ের পেটে মানব কলি হয়ে শুয়ে থাকার আগে আমরা কোথায় ছিলাম? যেখানেই থাকি, পৃথিবীর মানুষ আমাদের নাম-পরিচয় কিছুই জানতে পারেনি। আমার নামে কোনো লেখা ছাপা হয়নি। পাঠক নন্দিত-নিন্দিত কোনো বিশেষণই আমার নামের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়নি। আমার নামে মিছিলি-মিটিং হয়নি। আমার কথায় কারও কিছু যায় আসেনি। অর্থাৎ, আজকের এ গুরুত্বপূর্ণ আমাকে নিয়ে ভাবা তো দূরের কথা কোনো মানব মস্তিষ্ক কল্পনাও করেনি আমার সম্পর্কে। সে কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়ে আল্লাহপাক বলেন, ‘হাল আতা আলাল ইনসানি হিনুম মিনাদদাহরি লাম ইয়াকুন শায়আম মাদকুরা। অর্থ: মানুষের ওপর কি এমন একটি সময় যায়নি, যখন সে উল্লেখ করার মতো কিছুই ছিল না?’

সে সময় পার করে আমরা আজ বড় হয়েছি। আমাদের বুঝ বৃদ্ধি হয়েছে। আমাদের শক্তি-সামর্থ্য সবকিছুই হয়েছে। এখন আমরা চাইলেই বিখ্যাত-কুখ্যাত সবরকম হতে পারি। হতে পারি ভালো-মন্দ। প্রশ্ন হলো আমরা কী হব? কেন আমাদের আল্লাহতায়ালা ‘নাই’ থেকে এত কিছু করলেন? আবার কেনইবা একদিন আমাদের ‘নাই’ করে দেবেন? এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা নিজেই বলেন, ‘ইন্না খালাকনাল ইনসানা মিন নুতফাতিন আমশাজ। নাবতালিহি ফাজাআলনাহু সামিআম বাসিরা। অর্থ : আমি মানুষকে শুক্রবিন্দু থেকে সৃষ্টি করেছি তাকে পরীক্ষা করার জন্য। আর এ জন্য আমি তাকে দেখাশোনা ও বোঝার শক্তি দিয়েছি।’

তার মানে দাঁড়াচ্ছে, আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষা করার জন্য। আর পরীক্ষার জন্য আমাদের দিয়েছেন দুটি বড় শক্তি। শোনা ও দেখা। তিনি কী পরীক্ষা করবেন আমাদের? পরের আয়াতে আল্লাহ বলছেন সে কথা— ‘ইন্না হাদায়নাহুস সাবিলা ইম্মা শাকিরাও ওয়া ইম্মা কাফুরা। আমি শুধু দেখা ও শোনার শক্তি দিয়েই বসে থাকিনি। আমি পরম যত্নে তাকে দেখিয়ে দিয়েছি তার জীবন চলার পথ কোনটি? কোন পথে চললে সে সফল হবে আর কোন পথে চললে সে ব্যর্থ হবে। কোন পথে গেলে আমি খুশি হব আর কোন পথে গেলে আমি কষ্ট পাব। এখন আমি দেখতে চাই, সে কি আমার কৃতজ্ঞ বান্দা হয়ে আমার দেখানো পথে চলে আমাকে খুশি করে নাকি অকৃতজ্ঞ হয়ে আমাকে ব্যথায় জর্জরিত করে।’

ব্যস! এ পরীক্ষাটা করার জন্যই আল্লাহতায়ালা পৃথিবী নামের এ রংমহল সাজালেন। এটা যেন এক প্রেমের খেলা। প্রেমিক বলে দিল, ওগো! তুমি যদি এ পথে যাও আমি খুশি হব। আর তুমি যদি ওই পথে যাও আমি রাগ করব। ব্যস! এবার অন্য প্রেমিক যদি সত্যিই তাকে ভালোবেসে থাকে তবে মাহবুবের খুশির জন্য যত কষ্টই হোক না কেন সে ওই পথই বেছে নেবে। আর তার ভালোবাসা যদি মিথ্যা হয়, তবে মাহবুবের খুশি-অখুশিকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের ইচ্ছামতোই চলবে। তখনই প্রমাণ হয়ে যাবে এর বলা মুখের ভালোবাসা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। 

হে মানুষ! আমরা আল্লাহকে ভালোবাসি। তার ওপর ইমান এনেছি। তাই তিনি আমাদের সঙ্গে প্রেমের খেলা খেলছেন। তিনি আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন কোনটি তার সন্তুষ্টির পথ আর কোনটি তার অসন্তুষ্টির পথ। তাই আসুন! আমরা খোদার সন্তুষ্টির পথে হাঁটি। তাঁর অসন্তুষ্টির পথে গিয়ে তাঁকে যেন আর কষ্ট না দিই। প্রিয় পাঠক, বাংলাদেশ প্রতিদিন আমার কাছে বাংলার পৃথিবী, সব ব্যস্ততাকে উপেক্ষা করেও লিখে যাচ্ছি, অবিরাম ভালোবাসাও পেয়েছি অনেক। তাই দায়বদ্ধতাও অনেক বেড়েছে। যা শেষ করতে লিখতে হবে আরও অনেক। কিন্তু কিছু দিন যাবৎ শরীরটা অনেক খারাপ যাচ্ছে, তাই সবার কাছে মিনতি একটু দোয়া করেন আল্লাহ যেন আমার লেখনি শক্তি কেড়ে না নেন।  আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর