রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে হাজারীবাগ, বাইশটেকী, কুর্মিটোলা, মান্ডা ও বেগুনবাড়ী খাল পুনঃখননে ওয়াসার একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন পেয়েছে। বৈঠকে সরকারি এসব খাল দখল করে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বাসাবাড়ি-স্থাপনা ভেঙে ফেলারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, খালের মধ্যে কেউ ২০ তলা বিল্ডিংও যদি করে থাকে তাও ভেঙে ফেলতে হবে। অবৈধ দখলদারদের কারসাজিতে রাজধানীর বিপুলসংখ্যক খাল ও জলাশয় অস্তিত্ব হারিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ যে পাঁচটি খাল পুনঃখননের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে রাজধানীর এক বড় অংশের জলাবদ্ধতার নিরসন যেমন হবে, তেমন জলাশয়ের জন্য সংলগ্ন এলাকার পরিবেশ আরও স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠবে। রাজধানী ঢাকায় একসময় ছিল অসংখ্য খাল ও জলাশয়। কালের বিবর্তনে সেসব খাল-বিল-লেকের সিংহভাগ অস্তিত্ব হারিয়েছে। একের পর এক জলাশয় ভরাট করার পরিণতিতে রাজধানীর পরিবেশ ক্রমান্বয়ে রুক্ষ হয়ে উঠছে। বর্ষাকালে নিষ্কাশনে বিঘ্ন ঘটায় জলাবদ্ধতার অভিশাপে ভুগতে হচ্ছে নগরবাসীকে। গত ৩২ বছরে ঢাকা মহানগরী থেকে উধাও হয়ে গেছে ৩৯টি খাল। রাজধানীতে এ মুহূর্তে ১৫টি খাল থাকলেও এর ৪টি লেক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে টিকে আছে। অন্যগুলো ভরাট-দখলে সংকুচিত হয়ে নর্দমার আকৃতি পেয়েছে। ঢাকা ওয়াসার হিসাবেই নগরীতে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ৫৪টি খালের অস্তিত্ব ছিল। এসব খালের সংযোগ ছিল রাজধানী লাগোয়া প্রধান ৪টি নদ-নদীর সঙ্গে। রাজধানীর এসব খাল ও অন্যান্য জলাশয় এখন বিস্মৃত অতীত মাত্র। খাল-বিল-জলাশয় যথেচ্ছভাবে দখলের পরিণতিতে বর্ষা হলেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতার অভিশাপ নেমে আসে। প্রাকৃতিক জলাশয়ের যে সামান্য অংশ টিকে আছে তা দখল ও দূষণের কারণে স্বাভাবিক অবস্থা হারিয়েছে বহু আগেই এবং তা মশক উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে রাজধানীতে জলাবদ্ধতার অস্বস্তিকর থাবা নাগরিকদের বুঝিয়ে দিয়েছে খালসহ প্রাকৃতিক জলাশয়ের বিলুপ্তি তাদের জন্য কী অভিশাপ সৃষ্টি করছে। জলাবদ্ধতার অবসান শুধু নয়, রাজধানীতে শ্বাস নেওয়ার মতো পরিবেশ বজায় রাখতে দখল হয়ে যাওয়া অন্যসব খাল উদ্ধার ও তা পুনঃখননের উদ্যোগ নিতে হবে।