বৃহস্পতিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

দুনিয়াবি আশা-আকাঙ্ক্ষা সীমিত করতে হবে

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

দুনিয়াবি আশা-আকাঙ্ক্ষা সীমিত করতে হবে

আল্লাহতায়ালা আমাদের দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন সীমিত সময়ের জন্য। আমাদের দেশে বেশির ভাগ মানুষ ৬০ বা ৭০ বছর হায়াত পায়। কেউ হয়তো ৮০-৯০ বছরও বেঁচে থাকে। তবে এর সংখ্যা অনেক কম। সাধারণত এর চেয়ে বেশি আয়ু আমরা পাই না। নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর সুন্দর এই পৃথিবীকে বিদায় জানাতে হয়। ধনী-গরিব সবাইকে চলে যেতে হয় মাটির পিঠ থেকে পেটের অংশে। পৃথিবীর ওপর থেকে ভিতরের অংশে। কবরের অন্ধকার জগতে হাজার হাজার বছর আমাকে, আপনাকে, আমাদের সবাইকে থাকতে হবে। বিছানা-বালিশ ছাড়া ঘুমাতে হবে। দুনিয়ার জীবনের তুলনায় কবরের জীবনে থাকতে হবে অনেক বেশি সময়। তাই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার আশা-আকাঙ্ক্ষা সীমিত করতে হবে। চিরস্থায়ী আখিরাতে ভালো থাকার জন্য পাথেয় সংগ্রহ করতে হবে। অথচ আমাদের আচার-আচরণ এবং কল্পনা-পরিকল্পনা দেখলে মনে হয়, চিরদিন আমরা এখানে থাকব। কখনো পৃথিবী ছেড়ে যাব না। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে— রসুলুল্লাহ (সা.) একবার একটি চতুর্ভুজ অঙ্কন করলেন এবং তার মধ্যে একটি রেখা টানলেন; যা চতুর্ভুজ অতিক্রম করে বাইরে চলে গেল। তারপর মধ্যবর্তী রেখাটির উভয় পাশে বহুসংখ্যক ছোট ছোট রেখা টেনে বললেন, তোমরা মনে কর, মধ্যবর্তী রেখাটি মানুষ। আর চতুর্ভুজ তার বয়সের সীমা; যা তাকে বেষ্টন করে রয়েছে। আর ওই রেখার বাইরের অংশটি তার আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং এসব ছোট ছোট রেখা তার বিপদাপদ ও বালা-মুসিবত। যদি সে একটি বিপদ থেকে বেঁচে যায় তবে পরবর্তী বিপদে পতিত হয়। আর যদি সেটি থেকেও বেঁচে যায় তবে তার পরবর্তী বিপদে পতিত হয়। বুখারি। এই হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে, মানুষ এমন সব আশা-আকাঙ্ক্ষা করে, যা তার হায়াতে কাভার করবে না। বরং আশা পূর্ণ হওয়ার আগেই তার মৃত্যু চলে আসে। ধন-সম্পদ যতই অর্জিত হয়, তবু আমাদের আশ মেটে না। আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয় না। আমরা যেন আরও সম্পদ চাই। টাকা-পয়সা চাই। এ বিষয়ে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, মানুষকে যদি ধন-সম্পদে ভর্তি দুটি উপত্যকাও দেওয়া হয়, তবু সে আরও একটি আকাঙ্ক্ষা করবে। বস্তুত মানুষের পেট (কবরের) মাটি ছাড়া অন্য কিছুই ভরাতে পারবে না। আর যে আল্লাহর কাছে তওবা করে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন। বুখারি ও মুসলিম। আমাদের মধ্যে যারা বৃদ্ধ, তাদেরও অনেকের মধ্যে ধন-সম্পদের লোভ দেখা যায়। পরকালের চিন্তা বাদ দিয়ে তারা দুনিয়ায় আরও পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকেন। এর কারণ হিসেবে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, মানুষ বার্ধক্যপ্রাপ্ত হয় এবং দুটি বস্তু তার মধ্যে যৌবনপ্রাপ্ত হয় যথা— ধন-সম্পদের মোহ এবং দীর্ঘ আয়ুর আকাঙ্ক্ষা। বুখারি ও মুসলিম। প্রিয় পাঠক! দুনিয়ার আশা-আকাঙ্ক্ষা সীমিত করে আখিরাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করা আমাদের সবার জন্য জরুরি।

লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর