শুক্রবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

সময় বহিয়া যায়

নূরে আলম সিদ্দিকী

সময় বহিয়া যায়

আজ থেকে ৫৬ বছর আগের কথা। শরীরের প্রতিটি ধমনিতে তখন যৌবনের উত্তাল তরঙ্গমালা স্পন্দিত হতো। রক্তের সেই চলমান প্রবাহ অনুভূতি ও উপলব্ধিকে উদ্বেলিত করত, উচ্ছ্বসিত করত; কখনোবা জাগ্রত করত উদ্ধত উদগত পূর্ণায়ত পদ্মটির মতো। সমুদ্র যেমন নদীকে ডাকে, কখনো কখনো উদ্বেলিত হৃদয়ের উচ্ছ্বাস কোনো তরুণীর আহ্বানের আকাঙ্ক্ষায় উদগ্রীব থাকত কিনা ভেবে দেখার সময় হয়নি। কিন্তু মিছিলের ডাক, প্রান্তিক জনতার উদ্বেলিত আহ্বান আমাদের সময়কার শুধু আমাকেই নয়, প্রায় সব যুবসমাজটাকেই আহ্বান করত মিছিলে, মুষ্টিবদ্ধ উত্তোলিত হাত তুলে গণসমুদ্রের ফেনিল চূড়ায় ভিসুভিয়াসের মতো জ্বলে ওঠতে। আজকালকার প্রজন্মের কাছে মিছিলের সেই উদাত্ত আহ্বান আসে না— তা আমি সুনিশ্চিত। ফেসবুক আর ইন্টারনেটের দুর্দমনীয় নেশায় বুঁদ হয়ে তারা ডুবে থাকেন। আমরা যখন হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বাতিলের আবডালে আইয়ুবের মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থা বাতিল করে ৫৬-এর শাসনতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করা ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মুক্তির নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতাম। সামান্য কয়েক ঘণ্টা ঘুমের ঘোর কাটলেই সব চেতনা জুড়ে একটি উচ্ছ্বাস আমাদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াত— কেমন করে একটি মিছিল সংগঠিত করে মিছিলের অগ্রভাগে উত্তোলিত মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে বজ্র নির্ঘোষে আওয়াজ তুলব— ‘মৌলিক গণতন্ত্র বাতিল কর’, ‘আইয়ুব খান নিপাত যাক’, ‘হামিদুর রহমান কমিশন, চাই না চাই না’, ‘সোহরাওয়ার্দীর মুক্তি চাই’, ‘দাবি আদায় না হলে কেউ ঘরে ফিরব না, মিছিল থেকে নড়ব না’, ‘এক দফা এক দাবি, আইয়ুব খান কবে যাবি?’

আজকের ফেসবুক, ইন্টারনেট, ল্যাপটপ নিয়ে মেতে থাকা প্রজন্ম কল্পনার আবর্তেই আনতে পারবে না, সেদিনের আন্দোলনে আমাদের প্রজন্মের আবেগের তীব্রতা। সেদিন আমাদের হৃদয়ে যে উত্তাপ ছিল, তা আমাদের চেতনাকে এতটাই শানিত করত যে, বুকের রক্তে পিচঢালা পথকে লাল করার জন্য আমাদের হৃদয়ের অভ্যন্তরে একধরনের অনুভূতি আমাদের কেবলই তাড়িত করত। মনে হতো, রাজপথ যেন প্রেয়সীর মুখমণ্ডল অবলোকন করার জন্য উন্মুখ হয়ে বসে আছে, কখন আমরা উদগ্র উন্মাদনায় নেমে এসে রাজপথের তৃষ্ণা মেটাব, কখন আমরা মুষ্টিবদ্ধ উত্তোলিত হাতে এবং আমাদের মুখনিঃসৃত বজ্র নির্ঘোষে উচ্চারিত স্লোগানে স্বৈরাচারের বক্ষ বিদীর্ণ করব। এটা শুধুমাত্র স্বপ্নীল আকাঙ্ক্ষা ছিল না, প্রতি মুহূর্তে তিলতিল করে গড়ে তোলা পরিকল্পনার অংশবিশেষ ছিল বলেই সামরিক জান্তার নিষ্ঠুর ও নির্মম সামরিক আইনের বেড়াজালকে ছিন্নভিন্ন করে হামিদুর রহমান কমিশন বাতিল ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কারামুক্তি করানো তখন সম্ভব হয়েছিল। আইয়ুব খানকে উত্খাত করতে না পারলেও শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, শেখ ফজলুল হক মণি, এনায়েতুর রহমান, কে এম ওবায়দুর রহমান ও সিরাজুল আলম খান প্রমুখের অদম্য কর্মপ্রচেষ্টায় ও সুদক্ষ নেতৃত্বে ছাত্রসমাজ তথা ছাত্রলীগ প্রচণ্ডভাবে স্বৈরাচারকে নাড়া দিয়েছিল। তারই স্রোতধারায় পরবর্তীকালে আন্দোলনগুলো তরঙ্গায়িত হওয়ার উৎস খুঁজে পেতে সক্ষম হয়। ইতিহাসের সত্য তথ্যের খাতিরে স্বীকার করতেই হয়, মৌলিক গণতন্ত্রীদের মাধ্যমে আইয়ুব খান পশ্চিম ও পূর্ব-পাকিস্তানে গভীরভাবে শিকড় গাড়তে সক্ষম হয়েছিলেন। আমেরিকার পিএল ৪৮০-এর অঢেল অর্থানুকূল্যে ও বদান্যতায় করাচি থেকে রাওয়ালপিন্ডি এবং পরবর্তীতে রাওয়ালপিন্ডি থেকে ইসলামাবাদে বিলাসবহুল রাজধানী কেবল পরিবর্তনই নয়, ধূসর মরুভূমিকে সবুজ শস্যক্ষেত্রে রূপান্তরিত করার ব্যয়বহুল ও অত্যাধুনিক পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে উন্নয়নের যে বিশাল অবকাঠামো বিপুল অর্থব্যয়ে বাস্তবায়িত করা হয়, আমেরিকার অর্থায়নের বাইরে এর সবটুকুই বাংলাদেশের প্রান্তিক জনতার বুকনিঃসৃত ঘামের বিপরীতে অর্জিত অর্থের। তবুও সত্যের খাতিরে স্বীকার করতেই হয়, ওয়াপদার খাল খনন ও বিদ্যুৎ সংস্কারের মাধ্যমে এ অঞ্চলেও সার্বিক উন্নয়নের কিছুটা পরশ লাগে।

আজ জীবনসায়াহ্নে এসেও এ ভাবনা আমাকে পীড়া দেয়, ইসলামের প্রচণ্ড আবেগে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাস পাকিস্তানি বেসামরিক নেতৃত্ব ও সামরিক জান্তার কাছে এতটুকু সম্মান ও স্বীকৃতি পায়নি। শুধু জিন্নাহ সাহেবের একগুঁয়েমিই নয়, সুপরিকল্পিতভাবে তারা কলকাতাকে পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্তির ন্যায্য দাবি ছেড়ে দেয়। মুর্শিদাবাদকে পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে অংশগ্রহণের দাবিকে নিষ্প্রভ করে। মালদহের বিভক্তিও মেনে নেয়। সিলেটবাসীদের এক্ষেত্রে আমি অভিবাদন জানাব আসাম থেকে বেরিয়ে এসে পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্তির প্রত্যয়দৃঢ় সিদ্ধান্তের জন্য। এক্ষেত্রে শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও অদম্য উদ্যোগ যদিও স্মরণ রাখার মতো, তবুও সিলেটবাসীর ঐক্য ও একাগ্রতাকে অভিবাদন জ্ঞাপন না করে কোনো উপায় নেই।

নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু করতে গিয়ে এবং সেই সেতুর অতি সীমিত সংখ্যক খুঁটি নদী থেকে একটু দৃষ্টিগোচর হওয়ার কারণে আতিপাতি এমনকি যোগ্য অযোগ্য, মধ্যবয়সী থেকে প্রবীণ নেতারা আনন্দে আটখানা হয়ে যেভাবে নর্দনকুর্দন করছেন, উন্নয়নের কোরাস গাইছেন, তাদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার অনুরোধ জানাই। আর সেটা হলো, মৌলিক অধিকার-বিবর্জিত কোনো উন্নয়নই সার্বিকভাবে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি, ক্ষমতাও বেশিদিন টিকে থাকেনি। উন্নয়নের ডিকেড উদযাপনের ফল আইয়ুব খানকে দুই মাসের মধ্যে প্রচণ্ড জনরোষ ও ৬৯-এর অবিস্মরণীয় গণঅভ্যুত্থানে ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ বলে ক্ষমতা ছেড়ে ফিল্ড মার্শালের নিজের জীবন ও পরিবার রক্ষা করতে হয়েছে। যদিও তিনি ইয়াহিয়া খানের কাছেই ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন, তবুও ইয়াহিয়া খানকে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েই ক্ষমতায় বসতে হয়েছিল। নতুবা তার সিংহাসনও ওই একইভাবে তখনই ভস্মীভূত হতো। ইয়াহিয়া খানের নির্বাচনের ঘোষণায় প্রত্যক্ষ ও প্রচণ্ডভাবে আমাদের ৩টি লাভ হয়। ১. পাকিস্তানকে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান নামে দুটি অংশে বিভক্তিকরণ, ২. মৌলিক গণতন্ত্র পদ্ধতির নির্বাচন বাতিল ও ৩. জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন নির্ধারণ। ফলে জাতীয় পরিষদের ৩০০ আসনের মধ্যে পূর্ব-পাকিস্তান বরাদ্দ পায় ১৬৭টি আসন। বিরল সৌভাগ্যে প্রান্তিক জনতা নৌকার মাধ্যমে মুজিব ভাইকে ১৬৫টি আসন উপহার দেয়। ৭০-এর নির্বাচনের গণম্যান্ডেটই মার্চের প্রচণ্ড গণ-উন্মাদনা, ১ মার্চ স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন, বঙ্গবন্ধুকে ৭ মার্চে বিশ্বের ইতিহাসের অনন্যসাধারণ (বিশ্বসম্পদ) ভাষণ প্রদানের অধিকার এবং ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পরাধীনতার বক্ষ বিদীর্ণ করার সার্বজনীন অধিকার প্রদান করে। ৭০-এর নির্বাচনের নিষ্কলুষ রায় সামরিক জান্তাকে একদিকে স্তম্ভিত করে, পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের সব গণতান্ত্রিক দেশকে শুধু বিস্ময়াভিভূতই করেনি, বাংলাদেশের মানুষের মুক্তিযুদ্ধসহ পরবর্তী সব আন্দোলনের সফলতা অর্জনে ও বিশ্বজনমতকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সমর্থন প্রদানে উদ্বুদ্ধ করে। বললে অত্যুক্তি হবে না, রাজনৈতিক সব বিবেচনায় ৭০-এর নির্বাচনের রায়টিই ছিল মূল নিয়ামক শক্তি।

এ উপক্রমণিকার মূল লক্ষ্য ক্ষমতাসীনদের জ্ঞান দেওয়া নয়, বরং তাদের দৃষ্টি উন্মোচন করাই আমার লক্ষ্য। সার্বজনীন— সবার অংশগ্রহণে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই যে কোনো দলকে দেশ শাসনের নৈতিক অধিকার এনে দেয়। কোনো রকম কূটকৌশল, ছলচাতুরী বা একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে কিছুকাল ক্ষমতায় থাকা যায়, কিন্তু নির্বাচন সার্বজনীন, সর্বজনস্বীকৃত ও বিশ্বজনমত অনুমোদিত না হলে তা শুধু নির্বাচন ও গণতন্ত্রকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে না, দেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্নের আশঙ্কাও সৃষ্টি হয়। শাসকগণ ক্ষমতার অন্ধ উন্মাদনায় বুঁদ হয়ে ইতিহাসের এ অকাট্য নির্মম সত্যকে উপলদ্ধি করতে পারেন না বলেই যত বিপর্যয় ও ব্যত্যয়ের সৃষ্টি হয়। আজকে শেখ হাসিনার চতুষ্পার্শে ভ্রান্ত কমিউনিস্ট ও আওয়ামী নেতৃত্বের অপভ্রংশ আদর্শবিচ্যুত চাটুকার ও মোসাহেবে পরিণত হয়েছেন। তারা প্রতিনিয়ত কহর পাড়ছেন, সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে। জনমত পরিপূর্ণভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে, জনমনে কোনো ক্ষোভ, বিদ্বেষ বা নেতিবাচক চিন্তার লেসমাত্র নেই। আর উন্নয়ন— সে তো বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালার মতো উচ্ছ্বসিত ভঙ্গিমায় সম্মুখের দিকে ধাবিত হচ্ছে। শুধু শুধু কিছু কল্পনাবিলাসী, আমার মতো কিছু মুখপোড়া লোক টিভির বাক্সে টকশোতে বসে আবোল-তাবোল সমালোচনা করছে। জনতার কাছে এসব কথা ভিত্তিহীন ও তুচ্ছ। এসব কথায় কর্ণপাত করার কোনো প্রয়োজন নাই।

আমার মতো যারা আওয়ামী লীগের ভুল-ত্রুটিগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে সতর্ক পথচলার জন্য নির্মোহ চিত্তে সংকেত প্রদান করেন, তাদের উপেক্ষা করার মধ্যে কৃতিত্ব কোথায়— আমি বুঝি না। শত চেষ্টা করেও আমি এটা বুঝতে পারি না— ১৫৩টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অর্জন করে একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মতো বিস্তীর্ণ পথপরিক্রমণের গৌরবদীপ্ত সংগঠনটির লাভ কোথায়— অর্জনটাই বা কী? কেনই-বা এই মতিভ্রম !

দেশে বিরোধী দলের দৈন্যদশা ও কোণঠাসা অবস্থা দেখলে ভীষণ কষ্ট হয়। বিএনপি নির্বাচনী দল হিসেবে উপেক্ষা করার মতো সংগঠন নয়। কিন্তু আন্দোলনের শক্তি তাদের নেই বললেই চলে। ক্যান্টনমেন্টের গর্ভে সামরিক ব্যক্তিত্বের ঔরসে ক্ষমতার ছত্রছায়ায় সংগঠনটির জন্ম। সুবিধাবাদ এবং সুবিধাগ্রহণই তাদের লক্ষ্য বা কর্মসূচি। তাই ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর তাদের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিটি নির্মমভাবে ব্যর্থ তো হয়ই, বরং তাদের বর্জিত নির্বাচনটিকে প্রতিরোধ করার কোনো দৃশ্যমান গণতান্ত্রিক কর্মসূচি গ্রহণ করতেও তারা শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হন। তাদের এ অবস্থান গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ব্যর্থ তো হয়ই, বরং শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচারী ও একনায়কতান্ত্রিকতার দিকে ধাবিত করতে উৎসাহ যুগিয়েছে। চীনের শি জিনপিং তো আজীবনের জন্য রাষ্ট্রপতি বনেই গেছেন, রাশিয়াতে পুতিন ক্ষমতায় ১৮ বছর অতিক্রম করার পর প্রায় ৮০ ভাগের মতো ভোট পেয়ে আবার ৪ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। পাশ্চাত্য জগতে অ্যাঙ্গেলা মেরকেলও ৪ বারের মতো জার্মানির চ্যান্সেলর নির্বাচিত হলেন। ভারতের নরেন্দ্র মোদির উচ্চাভিলাষও আশঙ্কাজনক। এসব আলামত শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর আসনটি চিরস্থায়ী করা জন্য হয়তো প্রলুদ্ধ করছে। তিনি আরও ৪ মেয়াদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রদান ও প্রচার করছেন চরম উৎসাহ ও উদ্দীপনায়। সবচেয়ে বড় আতঙ্কের বিষয় হলো— তার প্রশাসনের হোমরা-চোমরারা, বিশেষ করে পুলিশ ও র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন থেকে শুরু করে নিম্নস্তরের কর্মকর্তারাও পায়জামা-পাঞ্জাবি ও মুজিব কোট গায়ে চাপিয়ে যেভাবে বিবৃতি দিচ্ছেন ও সংবাদ সম্মেলন করে যাচ্ছেন তাতে  নাত্সী আমলের কথাই মনে করিয়ে দেয়। শেখ হাসিনা কি তবে প্রান্তিক জনতার প্রতি আস্থা হারিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভর করেই এবারের নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চান? মন্ত্রণালয়গুলোতেও আমলাদের দৌরাত্ম্যের কথা আজকাল সর্বজনবিদিত। ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট। নগরে-বন্দরে, গ্রামেগঞ্জে আইনের রক্ষকরা যেভাবে দানবের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন, তাতে আইনের প্রতি মানুষের আস্থা ক্রমেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ ভয়ঙ্কর অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা ছাড়া দেশের অস্তিত্ব রক্ষা করা যে দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে, শেখ হাসিনা যত শিগগিরই সেটি অনুধাবন করবেন ততই দেশ, জনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য কল্যাণকর হবে। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সর্বস্তরে মূল্যবোধের অবক্ষয়, আশঙ্কাজনক দুর্নীতির বিস্তার, শিক্ষাক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং এমসিকিউ পদ্ধতির পরীক্ষায় জ্ঞানশূন্য প্রজন্মের বিস্তৃতি শিক্ষাব্যবস্থাকে দেউলিয়ায় পরিণত করেছে। আজকাল স্নাতকোত্তর একটি ছেলে বা মেয়ে শুদ্ধ করে একটি ইংরেজি বা বাংলা বাক্য লিখতে পারে না, সঠিকভাবে একটি চাকরির দরখাস্ত লিখতে পারে না। গোটা জাতিটা সবদিক থেকেই যেন একটি ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে। একটা ঘনঘোর অমানিশার অন্ধকারে জাতি নিপতিত হচ্ছে।

স্বাধীনতার উন্মেষ, বিকাশ, ব্যাপ্তি ও সফলতার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রাণ হিসেবে পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে আমার সকরুণ ফরিয়াদ— এত ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত এ স্বাধীনতাকে আল্লাহ তুমি বিপন্ন হতে দিও না। এ সর্বগ্রাসী বিপর্যয়ের হাত থেকে আল্লাহ তুমি রক্ষা কর। শুধু রাজনৈতিক অঙ্গন হতে নয়, দেশের সব অঙ্গনকেই এ অবক্ষয় ও দুর্নীতির হাত থেকে অবমুক্ত কর।

লেখক : স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর