শুক্রবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

সংকটাপন্ন তিস্তা

ভারতের উদারতার অপেক্ষায় আমরা

দেশের বৃহত্তম তিস্তা সেচ প্রকল্প অচল হয়ে পড়েছে। তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের চারদিকে ধু-ধু বালুচর। উত্তরাঞ্চলের তিস্তা অববাহিকার কৃষকদের সেচ সুবিধার জন্য তৈরি করা হয়েছিল তিস্তা ব্যারাজ সেচ  প্রকল্প। কিন্তু উজানে ভারতের গোজল ডোবায় বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করায় প্রমত্ত তিস্তা ভাটি এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে অস্তিত্ব হারিয়ে বালুচরে পরিণত হচ্ছে। একইভাবে বর্ষা মৌসুমে পানি ধারণ ক্ষমতা লোপ পাওয়ায় তিস্তা অববাহিকার বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা ও জলাবদ্ধতা অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষত শুষ্ক মৌসুমে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরসহ সেচনির্ভর এলাকার চাষাবাদ বিপন্ন হয়ে পড়ছে। উজানে পানি প্রত্যাহার হওয়ায় তিস্তা সেচ প্রকল্পের কার্যক্রম ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়ছে। ২০১৪ সালে রংপুর দিনাজপুরে ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ওই বছর পানির অভাবে মাত্র ১৮ হাজার হেক্টর জামিতে সেচ দেওয়া হয়। আর ২০১৫ ও ১৬ সালে তা আরও কমিয়ে মাত্র ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হয়। এ বছর পানি সংকট আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষক। তিস্তায় পানি না থাকায় হাতীবান্ধা উপজেলায় ভুট্টা ও বোরো খেতে সেচ দিতে পারছেন না অসংখ্য কৃষক। অনেকেই বাধ্য হয়ে চাষাবাদের জন্য বিকল্প সেচের ব্যবস্থা করছেন। তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পে ১৫ জানুয়ারি থেকে যে সেচ কার্যক্রম শুরু হয়েছে তাতে পানি স্বল্পতার কারণে এ বছর ৮ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। উজানে তিস্তার পানি প্রত্যাহারের পরিণতিতে উত্তরাঞ্চলের পুনর্ভবা, আত্রাই, ঘাঘট, ধরলা, করতোয়া, দুধকুমার, স্বতী ঘাঘট, নীলকুমার, বাঙ্গালী, বরাই, মানাস, কুমলাই, ধুম, বুড়িঘোড়া, সোনাভরা, হলহলিয়া, লহিতা, ঘরঘরিয়া, নলেয়া, জিঞ্জিরাম, ফুলকুমার, কাঁটাখালি, সারমারা, রায়ঢাক, যমুনেশ্বরী, চিতনী, মরা করতোয়া, ইছামতি, আলাই, কুমারীসহ শতাধিক নদ-নদী আজ মৃতপ্রায়। দেশের উত্তরাঞ্চলের পরিবেশ বিপন্নের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যের জন্যও সর্বনাশ ডেকে আনছে নদ-নদীর বিপন্ন অবস্থা। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা প্রদানে ভারত বাংলাদেশের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ হলেও তা প্রতিপালনের যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হয়নি গত আট বছরেও। দুই দেশের বন্ধুত্বকে জনগণের বন্ধুত্বে পরিণত করার ক্ষেত্রে এ সময়ক্ষেপণ ও অনুদার ভূমিকা বিসংবাদ হয়ে দেখা দিচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ এ সংকটের অবসানে ভারতের উদার মনোভাবের অপেক্ষায়। এ প্রতীক্ষার অবসান হওয়া উচিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর