শনিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিশৃঙ্খল রাজনীতির উচ্ছৃঙ্খল প্রতিবাদ!

গোলাম মাওলা রনি

বিশৃঙ্খল রাজনীতির উচ্ছৃঙ্খল প্রতিবাদ!

ইচ্ছে ছিল ভিন্নতর বিষয় নিয়ে লিখব। কিন্তু সে রাতের টকশোর ব্যতিক্রমী আলোচনা ও প্রেক্ষাপট নিয়ে আজকের নিবন্ধ লেখার লোভ সামলাতে পারলাম না। বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন টেলিভিশন নিউজ টোয়েন্টিফোর প্রতিদিনই অনেকগুলো বাহারী টকশোর আয়োজন করে থাকে। এগুলোর মধ্যে রাত ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত সরাসরি সম্প্রচারিত টকশোটিতে অন্যান্য রাজনীতিবিদ,  সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের মতো মাঝেমধ্যে আমারও ডাক পড়ে।  গত পয়লা এপ্রিল রাতের শোটিতে আমাকে যখন নিউজ টোয়েন্টিফোরের কর্মকর্তা বান্না আমন্ত্রণ জানালেন তখন আমার মানসিক প্রস্তুতির জন্য বললেন যে, আমার সঙ্গে আলোচক হিসেবে থাকবেন বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতার এবং অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করবেন অধ্যাপক সামিয়া রহমান। প্রথামতে, অনুষ্ঠানের চারজন অতিথির মধ্যে বাকি দুজন হলেন সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান এবং বাসসের প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, যিনি এক সময় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

আমি যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে দেখি সামিয়ার রুমে মেজর আখতার এবং আবুল কালাম আজাদ সাহেব ছোলা ভুনা খাচ্ছেন এবং খোশগল্প করছেন। আমি কৌতুক করে সামিয়াকে বললাম— আখতার ভাই এমনিতেই যথেষ্ট শক্তিশালী এবং যে কোনো আলোচনায় উচ্চকণ্ঠে প্রতিবাদী কথা বলেন— তার ওপর আপনি তাকে যেভাবে ছোলা ভুনা খাওয়াচ্ছেন তাতে আজ মনে হয় আমাদের খবর আছে। সবাই উচ্চকণ্ঠে হেসে উঠলেন এবং স্টুডিওতে প্রবেশ করার জন্য ওঠে দাঁড়ালেন। ইতিমধ্যে পীর হাবিব এসে পৌঁছালেন এবং আমরা সদলবলে স্টুডিওতে প্রবেশ করে যার যার নির্ধারিত আসনে বসলাম। সে রাতের আলোচনায় মেজর আখতার যখন উচ্চকণ্ঠে বিএনপির পক্ষে কথা বলছিলেন এবং তাদের নেত্রীকে বার বার দেশমাতা সম্বোধন করছিলেন তখন আবুল কালাম আজাদ তাকে কটাক্ষ করে বলে ওঠেন যে— আপনি কীভাবে বিএনপি করেন তা আমার মাথায় ঢুকছে না। আপনি একবার আপনার নেত্রী এবং তারেক রহমানকে প্রকাশ্যে গালাগালি করেন আবার এখন তাদেরই প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে কথার ফুলঝুরি ছড়াচ্ছেন।

আবুল কালাম আজাদ সাহেবের কথা শুনে মেজর আখতার কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু তাকে থামিয়ে দিয়ে জনাব আজাদ আরও বলেন যে, এভাবে রাজনীতি হয় না। দলীয় নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আপনার কোনো অভিযোগ থাকলে তা দলীয় ফোরামেই বলা উচিত। আপনার মতো উচ্ছৃঙ্খল লোকের জন্যই রাজনীতিতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। জনাব আজাদের কথার সূত্র ধরে মেজর আখতার বেশ ধীরস্থিরভাবে এবং শান্ত গলায় বলেন যে, আমি আমার কথিত উচ্ছৃঙ্খলতার জন্য গর্বিত। কিন্তু ভাগ্যকে ধন্যবাদ জানাই যে, আপনার মতো চাটুকার হইনি। উভয়পক্ষের কথার বাণ যখন এভাবে চলছিল তখন পীর হাবিব ফ্ল্লোর নিয়ে বলতে থাকেন যে, কে বলেছে উনি চাটুকার। উনাকে বড়জোর দলীয় বা সরকারের অনুগত বলে অভিযুক্ত করা যেতে পারে আর এ ব্যাপারে আমার বক্তব্য হলো— আজাদ সাহেবের দলীয় আনুগত্য ইতিমধ্যেই বহুবার প্রমাণিত হয়েছে।

উল্লিখিত টকশোটিতে উপরোক্ত কথাবার্তা ছাড়াও আরও অনেক বিষয় আলোচিত হয়েছিল। আমি এ ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাব না। আমি শুধু দলীয় আনুগত্য, চাটুকারিতা এবং উচ্ছৃঙ্খল প্রতিবাদে দলের মধ্যে কীরূপ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করব। প্রথমেই মেজর আখতার সম্পর্কে দু-চারটি কথা বলে নিই। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, সামরিক কর্মকর্তা এবং দুবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য এ কথা বাংলাদেশের রাজনীতি-সচেতন মানুষ কমবেশি সবাই জানেন। তবে নিজের নির্বাচনী এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং গ্রহণযোগ্য বলে স্বীকৃত আপাদমস্তক একজন নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদকে কেন বিএনপি থেকে একাধিকবার বহিষ্কৃত হতে হলো এবং কেনই বা তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন অথবা কতিপয় দলীয় নেতার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিষোদগার করেন তা হয়তো অনেকেই জানেন না। মেজর আখতারকে আমি যতটুকু জানি তাতে তাকে আমার একজন প্রথাবিরোধী সাহসী সৎ এবং সজ্জন ব্যক্তি বলেই মনে হয়। এ ধরনের মানুষেরা সাধারণত মোনাফেক হয় না এবং তারা যা সরল মনে বিশ্বাস করেন এবং ভালোবাসেন তা-ই তারা করেন এবং বলে বেড়ান। এ ধরনের মানুষেরা প্রায়ই লাভ-ক্ষতি, স্বার্থ, চুগলখোরি এবং পেছন থেকে চাকু মারা অথবা দ্বিমুখী আচরণ করতে পারেন না। কেউ তাদের ভালো বলুক এমন লিপ্সা যেমন তাদের প্রলুব্ধ করে না, তেমনি কারও ঘৃণা, বিদ্বেষ, হুমকি-ধমকিও এ শ্রেণির মানুষেরা পাত্তা দেন না।

আমার যতটুকু মনে আছে তা হলো মেজর আখতারই বাংলাদেশের প্রথম এবং আজ পর্যন্ত শেষ ব্যক্তি যিনি দলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সংসদ বর্জনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে স্বেচ্ছায় এবং খুশি মনে সংসদ সদস্যের পদ হারিয়েছিলেন। সেবার তার দল যখন সংসদ বর্জন করছিল তখন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সংসদে যোগদান করেছিলেন। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের আওয়ামী লীগের শাসনামলে তিনি যখন অদ্ভুত কাণ্ডটি করে বসেন তখন দুর্মুখেরা অভিযোগ করেন যে, তিনি হয়তো সরকারি দলের প্রভাবে এবং প্রলোভনে এমনটি করেছেন। কিন্তু তার সংসদ সদস্য পদ এবং বিএনপির সদস্য পদ চলে যাওয়ার পর যখন সরকারি দল থেকে মনোনয়ন ও মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব দেওয়া হলো তখন তিনি তা বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির প্রতি তার আনুগত্যের প্রমাণ দিলেন। মেজর আখতারের রাজনৈতিক জীবনে তিনি মোট চারবার বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হন। আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, কোনোবারই তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থ, অসদাচরণ, দুর্নীতি, প্রতিপক্ষের সঙ্গে চক্রান্ত বা মীরজাফরীর জন্য বহিষ্কৃত হননি। জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ, গণতন্ত্র তা আপন বিবেচনায় বিএনপির কল্যাণের জন্য তিনি কাজ করতে গিয়ে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। প্রথমবার বহিষ্কৃত হয়েছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে কথা বলার কারণে, যার জন্য আওয়ামী লীগ-জামায়াত ও সহযোগী অন্যান্য রাজনৈতিক দল ১৯৯১ সালের বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল এবং বর্তমানে যার জন্য বিএনপি ১০ বছর ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছে। তিনি দ্বিতীয়বার বহিষ্কৃত হন দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সংসদে যোগদানের কারণে। বিএনপি শাসনামলে অর্থাৎ ২০০১-২০০৬ সালের কার্যকালে তিনি আবার বহিষ্কৃত হন ভারতবিরোধী বক্তব্য প্রদানের জন্য এবং সর্বশেষ বহিষ্কৃত হন ২০০৬ সালের বিতর্কিত একতরফা এবং ভোটারবিহীন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাখ্যান এবং নির্বাচন বর্জন করার অপরাধে।

মেজর আখতারের রাজনৈতিক চরিত্রের উপরোক্ত চালচিত্র বিবেচনা করে সম্মানিত পাঠকবৃন্দ সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন তিনি আসলে কতটা উচ্ছৃঙ্খল অথবা সুশৃঙ্খল। বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে গত পাঁচ বছর ধরে দলীয় নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে তিনি যে অপ্রিয় অথচ রূঢ় সত্য উচ্চারণ করেছেন তা কতখানি বাস্তব কিংবা বিশৃঙ্খল কর্ম তা কেবল তিনি এবং তার দলই ভালো বলতে পারবেন। এবার আমি চাটুকারিতা এবং বাসস অর্থাৎ বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় কর্মরত সরকার সমর্থক প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সম্পর্কে কিছু বলতে চাই। বাসসে নিয়োগ লাভের আগে তিনি প্রায় পাঁচ বছর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ছিলেন। তার আগে তিনি ২০০২ থেকে টানা ২০০৮ সাল অবধি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর প্রেস সেক্রেটারি ছিলেন। ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের শেষদিকে অর্থাৎ ২০০০ সালে তিনি সচিবের মর্যাদায় প্রেস মিনিস্টার হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাসে নিয়োগ লাভ করেন।

আপাদমস্তক ভদ্র এবং অমায়িক ব্যবহারের অধিকারী জনাব আবুল কালাম আজাদের প্রকৃত পরিচয় একজন পেশাদার সাংবাদিক। তিনি দৈনিক ইত্তেফাকে জীবনের প্রথম চাকরি শুরু করেছিলেন এবং সেখানে প্রায় তিন যুগেরও বেশি সময় কাজ করার পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কল্যাণে প্রথম প্রেস মিনিস্টার রূপে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। পেশাগত জীবনে তিনি অবিভক্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অবিভক্ত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ এবং পরবর্তীতে সংগঠনটিতে বিভক্তি দেখা দিলে তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নে প্রথমে সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতি নির্বাচিত হন। এ ধরনের একজন মানুষকে কি আপনি চাটুকার নাকি দলীয়ভাবে অনুগত কর্মকর্তা বলবেন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চাটুকারিতা ও আনুগত্যের ব্যাপারে আমার কিছু বক্তব্য রয়েছে।

আমরা কথায় কথায় চাটুকার শব্দটি ব্যবহার করলেও অনেকে কিন্তু শব্দটির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য সম্পর্কে তেমন চিন্তাভাবনা না করেই এটিকে নির্বিচারে ব্যবহার করেন। চাটুকারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো— সে সর্বদা তার মালিক অথবা নিয়োগকর্তার প্রশংসা করে কেবল ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য অথবা যার চাটুকারিতা করা হয় তার সর্বনাশ ঘটানোর জন্য। চাটুকারেরা সর্বদা নিজেদের জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান মনে করে এবং তাদের মালিককে বোকা, নির্বোধ, অসতর্ক ও ভেজাল প্রকৃতির ব্যক্তিত্বহীন মানুষ মনে করে। তারা খুবই ধুরন্ধর, চরিত্রহীন, স্বার্থপর, মোনাফেক এবং বিপদের সময় উল্টো দৌড়ে পারদর্শী হয়ে থাকে। তারা সর্বদা মালিকের সামনে প্রশংসা বা স্তুতিবাক্যের ফুলঝুরি ছড়ায় এবং একান্ত আলাপচারিতা, আড়ালে আবডালে মালিকের বিরুদ্ধে যাচ্ছেতাই বিষোদগার করে। তারা সব সময় মালিকের বিরুদ্ধপক্ষ এবং শত্রুপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখে এবং সময় ও সুযোগ মতো মালিককে ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সব রাস্তা তৈরি করে রাখে।

এবার আনুগত্য সম্পর্কে কিছু বলি। শব্দটি ইতিবাচক। আনুগত্যের কয়েকটি স্তর রয়েছে। এগুলোর মধ্যে স্বাভাবিক আনুগত্য, দলীয় আনুগত্য, আদর্শিক আনুগত্য এবং অন্ধ আনুগত্য নিয়েই লোকজন সচরাচর আলোচনা করে থাকে। অনুগত হওয়া বা কারও আনুগত্য করা সহজসাধ্য এবং চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। সাধারণত বুদ্ধিমান, চরিত্রবান এবং কৃতজ্ঞ প্রকৃতির মানুষ ছাড়া কেউ আনুগত্য করতে পারে না। আনুগত্যের মধ্যে সবসময় যেমন স্বার্থ থাকে না তেমনি অনুগত লোকজনের দ্বারা কোনো কালে কোনো মালিক বা নিয়োগ কর্তার সচরাচর ক্ষতি হয় না। অনুগত লোকজন তার মালিকের ভালোর জন্য কাজ করে এবং কোনো দিন মালিক দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তারা অবাধ্য হয়ে অভিসম্পাত দেয় না। তারা কথা বলে মালিককে খুশি করার জন্য। কাজ করে মালিকের স্বার্থরক্ষার জন্য এবং চিন্তা করে মালিককে খুশি ও নিরাপদ রাখার জন্য। রাজনৈতিক আনুগত্য কেমন প্রকৃতির হতে পারে তা নিম্নে বর্ণিত সম্রাট আকবর ও তার মন্ত্রী বীরবলের সুবিখ্যাত কাহিনীটি পর্যালোচনা করে আপনারা একটি সুস্পষ্ট ধারণা পেতে পারেন।

সম্রাট আকবর একবার তার প্রভাবশালী মন্ত্রী এবং প্রাণপ্রিয় বন্ধু বীরবলকে নিয়ে কোনো এক গ্রাম্যবাজার পরিদর্শনে গেলেন। তিনি বাজারে বিভিন্ন তরিতরকারি দেখতে গিয়ে তরতাজা বিশেষ আকৃতির বেগুন দেখে অতি আশ্চর্য হলেন এবং খুশিতে গদ গদ হয়ে জিজ্ঞেস করলেন— বীরবল এগুলো কী? বীরবল সম্রাটের খুশিতে নতুন মাত্রা যোগ করার জন্য বললেন— শাহেনশাহ এগুলোকে কেউ কেউ বলেন বাগুন। এর গুণের শেষ নেই। এগুলো অত্যন্ত সুস্বাদু তরকারি যা পুষ্টিদায়ক। এগুলোকে মাছ-মাংসের সঙ্গে যেমন ব্যবহার করা যায় তেমনি এগুলোকে ভাজি করে অথবা ভর্তা করে খেলে অসাধারণ তৃপ্তি পাওয়া যায়। সম্রাট খুশি মনে প্রচুর বেগুন কিনলেন এবং রাতের আহারে বেগুনের বাহারী তরকারি, ভাজি, ভর্তা ও চাটনি দিয়ে পেট পুরে সুখনিদ্রার আশায় বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলেন।

সম্রাটের ছিল এলার্জির অসুখ। ফলে সারা রাত অসহ্য চুলকানির যন্ত্রণায় তিনি ঘুমোতে পারলেন না। অধিকন্তু তার শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে গেল। তিনি জরুরি ভিত্তিতে বীরবলকে ডেকে পাঠালেন। বীরবল উপস্থিত হলে সম্রাট বললেন— তুমি যে বাগুনের এত প্রশংসা করলে সেই বাগুনের কবলে পড়ে দেখ আমার কী

 

হয়েছে। বীরবল বললেন, মহামহিম বাদশাহ নামদার— ওটাকে কেউ কেউ বাগুন বললেও বেশিরভাগ লোকেই সবজিটিকে বেগুন বলে ডাকে, কারণ ওটির কোনো গুণই নেই। এটি খেলে পেটে অম্ল হয়, শরীরে এলার্জি দেখা দেয়। এটির সামান্য পুষ্টিগুণ আছে বটে তবে এটি অন্য সবজি কিংবা মাছ-মাংসের সঙ্গে মেশালে ওগুলোর গুণ নষ্ট হয়...। সম্রাট রেগে গিয়ে বললেন বীরবল তুমি তো দেখি ভারি আশ্চর্যজনক মানুষ। একই মুখে গতকাল বাগুনের গুণগান করলে। আজ আবার বাগুনকে বেগুন বানিয়ে সেটির চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার শুরু করেছ। বীরবল হেসে উত্তর করলেন— আমি তো বাদশাহর চাকরি করি, বেগুনের নয়।  গতকাল আপনি খুশি মনে ভালো কথা জানতে চাইছিলেন, তাই ওমনটি বলেছি। আজ আপনার অবস্থার কারণে বেগুনের মন্দ দিক বলেছি।  গত রাতে খাওয়ার আগে অথবা রান্না করার আগে কিছু জিজ্ঞাসা করেননি বলে আপন সীমা অতিক্রম করে আগ বাড়িয়ে বেগুনের তরকারির অতি ভোজন সম্পর্কে কিছু বলিনি।

            লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য ও কলামিস্ট।

সর্বশেষ খবর