মঙ্গলবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

চাকরিতে কোটা প্রথা

যুক্তিসংগত সংস্কার সময়ের দাবি

কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও যুবসমাজের আন্দোলন ক্রমেই দানা বেঁধে উঠছে। রবিবার যুবসমাজের এই জনপ্রিয় দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজধানীর একাংশ। সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে চার ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীদের অবরোধে শাহবাগ থেকে মতিঝিল, ফার্মগেট, নিউমার্কেট, দোয়েল চত্বর, সায়েন্স ল্যাবমুখী যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা। আন্দোলনকারীদের ছাত্রভঙ্গ করতে পুলিশ একপর্যায়ে টিয়ার শেল, জলকামান ও লাঠিচার্জের আশ্রয় নেয়। বর্তমানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরির শূন্যপদের ৪৫ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হয়, বাকি ৫৫ শতাংশ পূরণ করা হয় অগ্রাধিকার কোটায়। কোটা প্রথায় মেধাবীরা যে বঞ্চিত হয় এটি একটি নিষ্ঠুর সত্য। বিভিন্ন সময়ে চাকরিতে কোটা সংস্কারের জন্য শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি উঠলেও তা বাস্তবায়নে সরকার কোনো আগ্রহ দেখায়নি। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ কোটাব্যবস্থা ১০ শতাংশে নিয়ে আনা, কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে শূন্যপদে নিয়োগ দেওয়া, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ পরীক্ষা না নেওয়া, সরকারি চাকরিতে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা ও চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটাসুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করার দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছে। রবিবার রাজধানীর বাইরে ১০টি জেলায় কোটাবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়। দেশে বর্তমানে যে কোটা প্রথা রয়েছে তাতে সরাসরি লাভবান হচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা। সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশকে এগিয়ে নিতেও কোটা প্রথা কাজে লাগানো হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে কোটা প্রথার যৌক্তিকতা থাকলেও মোট সরকারি চাকরির ৫৫ ভাগ কোটার ভিত্তিতে পূরণ করা কতটা যৌক্তিক, তা একটি বড় মাপের প্রশ্ন। এর ফলে সরকার মেধাবীদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কোটা প্রথা যুক্তিসংগত পর্যায়ে সীমিত করা হলে একদিকে যেমন সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণ হবে, অন্যদিকে যেসব উদ্দেশ্যে কোটা প্রথা চালু রাখা হয়েছে তার প্রতিও সুবিচার করা হবে। কোটা প্রথার ফলে মেধাবীরা সরকারি চাকরির ব্যাপারে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে উৎসাহ হারাচ্ছে। কোটা প্রথা নিয়ে যে অসন্তুষ্টি রয়েছে তা নিরসনে যুক্তিসংগত সংস্কারের বিষয়ে সরকার উদ্যোগী হবে— এমনটি প্রত্যাশিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর