মঙ্গলবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইসরা ও মেরাজের বরকতময় তাৎপর্য

মাওলানা মুহাম্মদ আশরাফ আলী

ইসরা ও মেরাজ আখেরি পয়গম্বর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি মোজেজা। আল্লাহর ইচ্ছায় যে সবই সম্ভব তারই মূর্তমান প্রকাশ হলো এই রাতে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা অর্থাৎ কাবা শরিফ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত রাতের সফর ও মেরাজ অর্থাৎ সপ্তম আসমান পর্যন্ত ঘুরে আসার ঘটনায়। মেরাজের রাতে নিমেষেই এটি সংঘটিত হয়। শবে মেরাজের ঘটনা সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা আল কোরআনের সূরা বনি ইসরাইলের ১ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেন, ‘মহামহিম পরম পবিত্র সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতের বেলা ভ্রমণ করিয়েছেন মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যাতে আমি তাকে দেখিয়ে দিই, এর চারপাশের নিদর্শনগুলো, যা বরকতময়।’

আরবি শব্দ ইসরা অর্থ রাতের সফর এবং মেরাজের শাব্দিক অর্থ সিঁড়ি, ঊর্ধ্বারোহণ। ব্যাপক অর্থে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বায়তুল্লাহ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসে উপনীত হয়ে সেখান থেকে সপ্তাকাশ এবং আরশে আজিম পৌঁছে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলাকেই মেরাজ বলে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ৫২ বছর বয়সে অর্থাৎ নবুয়তের ১২তম সনে ২৬ রজব দিনগত রাত সোমবার মেরাজের আশ্চর্যতম ঘটনাটি সংঘটিত হয়। হাদিসসূত্রে বলা হয়েছে, ২৬ রজব রাতে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার নামাজ শেষে হজরত উম্মে হানি (রা.)-এর ঘরে নিদ্রায় ছিলেন। এ সময় হজরত জিবরাইল (আ.) আল্লাহতায়ালার হুকুমে জান্নাত থেকে বোরাক নামের একটি সাওয়ারি আর অসংখ্য ফেরেশতার দল নিয়ে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হাজির হয়ে সালাম দিয়ে বললেন, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ! আপনার প্রতিপালক আপনাকে স্মরণ করেছেন, এই মুহূর্তেই আপনাকে তথায় গমন করতে হবে।’ বোরাকে করে আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়ার সময় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার খেজুরবাগান এলাকায় ও হজরত ঈসা (আ.)-এর জন্মস্থান মাদায়েনে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন।

মেরাজের সফরে প্রত্যেক আকাশে ফেরেশতারা তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। প্রত্যেক আসমানে অবস্থানরত নবীদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। প্রত্যেক নবী বিশ্বনবীকে সাদর সম্ভাষণ জানান। জিবরাইল প্রত্যেক নবীর সঙ্গে বিশ্বনবীকে পরিচয় করিয়ে দেন। অতঃপর রসুলে (সা.) এমন এক ময়দানে পৌঁছেন যেখানে ভাগ্যলিপি লেখার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। এরপর তিনি ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ দেখেন, যেখানে আল্লাহর নির্দেশে সোনার প্রজাপতি ও বিভিন্ন প্রকার প্রজাপতি ইতস্তত ছোটাছুটি করছিল। ফেরেশতারা স্থানটি ঘিরে রেখেছিলেন। এখানে রসুল (সা.) জিবরাইল (আ.)-কে স্বরূপে দেখেন। তাঁর ৬০০ পাখা ছিল। সেখানেই তিনি দিগন্তবেষ্টিত সবুজ রঙের রফরফ দেখতে পান। রফরফ বলা হয় এক প্রকার পালকিকে। তিনি বায়তুল মামুরও দেখতে পান। বায়তুল মামুর হলো সপ্তম আসমানে অবস্থিত একটি মসজিদ। যেখানে প্রতিদিন ৭০ হাজার ফেরেশতা আল্লাহকে সিজদা করেন। যারা একবার সেখানে প্রবেশ করে তারা কিয়ামত পর্যন্ত আর কখনো সিজদা করার সুযোগ পাবে না। এরপর রসুল (সা.) জান্নাত ও জাহান্নাম স্বচক্ষে দেখেন। তিনি ভ্রমণপথে অসংখ্য আশ্চর্য ঘটনা ও কর্মকাণ্ড দেখে আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া ও প্রশংসা করেন। ঊর্ধ্বাকাশে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আদম, ঈসা, ইয়াহইয়া, ইউসুফ, ইদরিস, হারুন ও মুসা (আ.)-এর সাক্ষাৎ লাভ করেন। অতঃপর তিনি আল্লাহর কাছে হাজির হন। কোরআনের ভাষায় বলা হয়েছে, অতঃপর তিনি নিকটবর্তী হলেন, তাদের মধ্যে ধনুকের দুই মাথার ব্যবধান রইল অথবা আরও কাছে। তখন আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি প্রত্যাদেশ করলেন যা করার ছিল।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর