শনিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

টু ফিঙ্গার টেস্ট নিষিদ্ধ

হাই কোর্টের প্রশংসনীয় রায়

ধর্ষিত নারী ও শিশুর শারীরিক পরীক্ষা এবং বিচারের ক্ষেত্রে তাকে যাতে আবারও লাঞ্ছিত করা না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করে রায় দিয়েছে হাই কোর্ট। বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ রিট আবেদনের শুনানি শেষে প্রশংসনীয় ওই রায় দিয়েছে। রায়ে ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুর শারীরিক পরীক্ষায় টু ফিঙ্গার টেস্ট বা দুই আঙ্গুলি পরীক্ষাকে অবৈজ্ঞানিক অভিহিত করে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রায় দেওয়ার পাশাপাশি পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুদের পরীক্ষা করার সময় একজন গাইনোকলজিস্ট, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, নারী পুলিশ কর্মকর্তা এবং প্রয়োজনে ভিকটিমের একজন নিকটাত্মীয়কে সেখানে রাখতে হবে। একই সঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে নিশ্চিত করতে হবে যে, কোনো পক্ষের আইনজীবী যেন ভিকটিমকে মর্যাদাহানিকর কোনো প্রশ্ন না করে। নারীর জন্য অবমাননাকর ওই পরীক্ষা বন্ধের দাবি জানিয়ে মানবাধিকার কর্মীরা বলে আসছিলেন, দুই আঙ্গুলের অযৌক্তিক ওই পরীক্ষা ভিকটিমকে আবারও ধর্ষণ করার শামিল। গত বছর করা সরকারের ওই প্রটোকল দেশের সব নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এবং হাসপাতালে পাঠিয়ে তা অনুসরণ করার নির্দেশনা দিয়েছে হাই কোর্ট। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিস কেন্দ্র, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ব্র্যাক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, নারীপক্ষ এবং দুই চিকিৎসক দুই আঙ্গুলের মাধ্যমে ধর্ষণ পরীক্ষার পদ্ধতিকে চ্যালেঞ্জ করে ২০১৩ সালে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। ওই পরীক্ষাকে সংবিধান পরিপন্থী বলে অভিহিত করা হয়। ধর্ষিত নারীর শারীরিক পরীক্ষার নামে যুগ যুগ ধরে যে টু ফিঙ্গার টেস্ট চালু ছিল তা প্রকারান্তরে ধর্ষণের শিকার নারী বা সম্মানহানির কারণ ঘটাত। বিচার প্রক্রিয়ার সময় অবাঞ্ছিত প্রশ্ন তুলে অসম্মানের অপচেষ্টাও চলত। আদালতের যুগান্তকারী রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে যুগ যুগ ধরে চলে আসা অন্যায়ের কবল থেকে রক্ষা পাবে ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুরা।

সর্বশেষ খবর