মঙ্গলবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
ইতিহাস

সম্রাট বাবর

ভারতীয় উপমহাদেশে পরাক্রমশালী মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জহিরুদ্দিন মুহম্মদ বাবর। ১৪৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান উজবেকিস্তানের আন্দিজানে জন্ম হয়েছিল মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবরের। মুঘল সম্রাটদের মধ্যে আকবর বা শাজাহানের নামই সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়ে থাকে। কিন্তু ইতিহাসবিদ হরবংশ মুখিয়ার কথায়, সংস্কৃতি, সাহসিকতা আর সেনা পরিচালনার ক্ষেত্রে বাবর নিঃসন্দেহে এক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন। যদি বাবর ভারতে না আসতেন, তাহলে এ দেশের সংস্কৃতি হয়তো এতটা বিচিত্র হওয়ার সুযোগ পেত না। ভাষা, সংগীত, চিত্রকলা, স্থাপত্য, পোশাক অথবা খাবার-দাবার—প্রতিটা বিষয়েই মুঘলদের অবদান অনস্বীকার্য বলে মনে করেন মি. মুখিয়া। ১২ বছর বয়সে রাজসিংহাসনে বসেছিলেন বাবর। বাবরের চিন্তাধারায় হার না মানার একটা মানসিকতা ছিল। তার মাথায় সমরখন্দ দখলের স্বপ্ন ছিল। তিনবার দখল করেছিলেন, কিন্তু প্রতিবারই ফিরে আসতে হয়েছিল তাকে। যদি তিনি সমরখন্দ দখলে সফল হতেন আর সেখানকার রাজা হিসেবেই থেকে যেতেন, তাহলে হয়তো কাবুল বা ভারত দখল করে রাজত্ব করার কথা তিনি ভাবতেনও না। ১৫২৬ সালে পানিপথের যুদ্ধে বিজয়ের পর বাবর সেখানে একটি মসজিদ বানিয়েছিলেন, যেটা আজও রয়েছে। মুখিয়ার মতে সম্রাট বাবর হচ্ছেন পৃথিবীর প্রথম শাসক, যিনি নিজের আত্মজীবনী লিখেছিলেন। ‘বাবরনামা’-তে তার জীবনের সাফল্য আর ব্যর্থতা—দুইয়ের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। তুর্কি ভাষায় কবিতা লিখতেন বাবর। বাবরনামায় ব্যবহৃত বেশ কিছু শব্দ এখন ভারতে প্রতিদিনের ভাষার অঙ্গ হয়ে গেছে। যেমন ‘ময়দান’ শব্দটা তার জীবনীতেই প্রথমবার দেখা যায়। সেভাবেই অনেক তুর্কি আর ফার্সি শব্দ ভারতীয়দের মুখের ভাষায় ঢুকে গেছে।

ইতিহাসবিদ মি. মুখিয়ার মতে যুদ্ধ, সাম্রাজ্য পরিচালনার মধ্যেও নিজের পরিবারের প্রতি নিষ্ঠাবান ছিলেন বাবর।

তার মা এবং নানীর সঙ্গে যেমন গভীর সম্পর্ক ছিল, তেমনই বোনের কাছেও বাবর ছিলেন এক আদর্শ ভাই। আবার ছেলে হুমায়ুনের প্রতিও ছিল গভীর পিতৃস্নেহ। হুমায়ুনের একবার কঠিন অসুখ হয়েছিল, সেই সময়ে বাবর ছেলের শরীর ছুঁয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন যে পুত্রের অসুখ সারিয়ে দিয়ে তিনি যেন বাবরের প্রাণ কেড়ে নেন, বলছিলেন মি. মুখিয়া। তিনি বলেন, হুমায়ুন সে যাত্রা সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন, কিন্তু ওই ঘটনার কিছুদিন পরেই বাবর অসুস্থ হয়ে পড়েন আর তারপরই মৃত্যু হয় তার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর