মঙ্গলবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
এই নগরী

ঘনবসতির মহানগরী ঢাকা

মাহবুবুর রহমান

ঘনবসতির মহানগরী ঢাকা

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঘনবসতির নগরী। জাতিসংঘের বসতি সম্পর্কিত উপাত্তে ঢাকার শিরস্ত্রাণে ঘনবসতির এই পালকটি সংযোজিত হয়েছে। ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান জাতিসংঘের বসতি সম্পর্কিত উপাত্তের বরাত দিয়ে বলেছে, ঢাকার পরেই ঘনবসতি ভারতের বাণিজ্যিক নগরী মুম্বাই। তৃতীয় স্থান কলম্বিয়ার মেডেলিন, চতুর্থ স্থান ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলার।

ঢাকা দুনিয়ার সবচেয়ে ঘনবসতির নগরী বাংলাদেশের রাজধানীর শিরস্ত্রাণের এ পালকটি যেমন হতাশার তেমন উদ্বেগের। দুনিয়ার যে সব নগরীর জনসংখ্যা হু হু করে বাড়ছে ঢাকা তার মধ্যে অন্যতম। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে গত বছর ঢাকায় প্রতিদিন যুক্ত হওয়া নতুন মুখের সংখ্যা ছিল প্রায় ১ হাজার ৭০০ জন। গ্রাম ও জেলা শহর থেকে যারা কর্মসংস্থানের জন্য আসছেন তারা স্থায়ী হয়ে যাচ্ছেন এই শহরে। ফলে বেড়েই চলেছে ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকার জনসংখ্যা।

ঢাকা মহানগরীতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করছেন ৪৪ হাজার ৫০০ লোক। ঘনবসতির দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারতের বাণিজ্যিক নগরী মুম্বাইতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩২ হাজার ৪০০ জনের বেশি লোকের বসবাস। মুম্বাইয়ের চেয়ে ঢাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ১২ হাজারেরও বেশি লোকের বসবাস। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকা ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। যানজটের নগরী হিসেবে ঢাকার যে লজ্জাজনক পরিচিতি গড়ে উঠেছে, তা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য একের পর এক প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও চোখে দেখার মতো সাফল্য অর্জিত হচ্ছে না। জনসংখ্যা মাত্রাতিরিক্তভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজধানী ঢাকার নাগরিক সেবার খাতগুলো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। ঢাকার অস্তিত্বের স্বার্থেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির স্পুটনিক গতিকে সামাল দিতে হবে। রাজধানীর জনসংখ্যা কমাতে তৈরি পোশাক শিল্প ঢাকার বাইরে নেওয়ার কথা ভাবতে হবে। ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতির নগর, এ পরিচিতি গর্বের নয়, হতাশার। কারণ দেড় কোটি মানুষের এই মহানগরীতে ৩০ লাখেরও বেশি মানুষের বসবাস বস্তি এলাকায়। নিম্নবিত্ত মানুষের সংখ্যা বিপুল। তাদের আবাসন সমস্যার সমাধানের বিষয়টি খুবই গুরুত্বের দাবিদার। বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০২১ সালের মধ্যে আবাসন খাতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের চাহিদা বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ হবে। এ গবেষণায় বাংলাদেশের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের সংজ্ঞা দেওয়ারও চেষ্টা করা হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, গবেষণাটি করতে গিয়ে তারা দেখেছে, বাংলাদেশে এই তিন  শ্রেণির কোনো সংজ্ঞা নেই। তাই নিজেরাই একটি সংজ্ঞা তৈরি করেছে। যাতে ৬০ হাজার থেকে এর বেশি যাদের মাসিক আয় তাদের উচ্চবিত্ত হিসেবে ধরা হয়েছে। ২৫ হাজার থেকে যাদের আয় ৬০ হাজার টাকার মধ্যে, তারা মধ্যবিত্ত। আর যাদের আয় ১০ হাজার টাকার মধ্যে, তারা নিম্নবিত্ত। প্রতিবেদনে স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে পুনর্গঠিত বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে বলা হয়েছে, দেশের মানুষের গৃহায়ণ সমস্যার সমাধানে সহায়ক ভূমিকা পালনের জন্য এটি গঠিত হলেও স্বাধীনতার এত বছর পরও সরকারি সংস্থাটি এ খাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি। উদাহরণ দিয়ে আইএফসি বলেছে, আবাসন খাতে ২০১৫ সালে যে ৪৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন থেকে দেওয়া হয়েছে মোট ঋণের মাত্র ৬ শতাংশ। অথচ ওই ৪৯ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৮০ শতাংশ ঋণই গেছে সরকারি, বেসরকারি ও বিশেষায়িত ব্যাংক থেকে। বাংলাদেশে আবাসন খাত সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা আইএফসির গবেষণাটি এ সমস্যার সমাধানে কিছুটা হলেও পথ দেখাবে বলে আশা করা যায়। বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতির দেশগুলোর একটি। স্বাধীনতার পর রাস্তাঘাট, স্থাপনা, কলকারখানা নির্মাণে চাষযোগ্য জমির একটি বড় অংশ ব্যয় হয়েছে। দেশের ক্রমবর্ধমান আবাসিক চাহিদা মেটাতে এমন পরিকল্পনা নিতে হবে যেখানে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হবে। বহুতল ভবন নির্মাণের মাধ্যমে গৃহনির্মাণে জমির অপচয় রোধ করতে হবে।

গবেষণায় আগামী চার বছরে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের আবাসিক চাহিদা চারগুণ বৃদ্ধি পাওয়ার যে আভাস দেওয়া হয়েছে তা এক্ষেত্রে সরকার এবং আবাসন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের প্রস্তুতি গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করবে এমনটিই প্রত্যাশিত।

জাতীয় অগ্রগতির স্বার্থেই দেশের রাজধানীর সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। ঢাকা যাতে অচল নগরীতে পরিণত না হয় সে ব্যাপারে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের দাবিদার।

লেখক : কলামিস্ট।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর