রাজধানী ঢাকার বায়ু ক্রমেই দূষিত হয়ে পড়ছে এবং এটি এখন বিশ্বের তৃতীয় বায়ুদূষণের নগরী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রতি ১০ জনের নয়জনই শ্বাসের সঙ্গে দূষিত বায়ু গ্রহণ করছেন। এর ফলে বছরে অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছে ৭০ লাখ মানুষ। বিশ্বের যে শহরগুলোয় ১ কোটি ৪০ লাখ বা এর চেয়ে বেশি মানুষের বাস, সেগুলোর বায়ুর মানের ওপর একটি তালিকা তৈরি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বুধবার প্রকাশিত তালিকায় শীর্ষ দূষিত নগরী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিকে। সবচেয়ে দূষিত বায়ুর চতুর্থ স্থানটিও ভারতে মুম্বাই নগরী। দ্বিতীয় স্থানে আছে মিসরের কায়রো, পঞ্চম স্থানে চীনের রাজধানী বেইজিং। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বায়ুতে পিএম ১০ কণার বার্ষিক নিরাপদ মাত্রা ৬০। এ মাত্রা নয়াদিল্লিতে ২৯২, কায়রোয় ২৮৪, ঢাকায় ১৪৭, মুম্বাইয়ে ১০৪ ও বেইজিংয়ে ৯২। বিষাক্ত ধূলিকণার মধ্যে আছে সালফেট, নাইট্রেট ও ব্ল্যাক কার্বন। বায়ুদূষণে প্রতি বছর যে ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, এর ৯০ শতাংশের মৃত্যু হয় অল্প ও মধ্য আয়ের দেশগুলোয়; যার মধ্যে আছে বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দেশ। ৭০ লাখ মৃত্যুর মধ্যে আছে ২১ শতাংশ নিউমোনিয়া, ২০ শতাংশ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, ৩৪ শতাংশ হৃদরোগ, ১৮ শতাংশ শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী জটিল রোগ ও ৭ শতাংশ ফুসফুসের ক্যান্সার। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বিশ্বের তৃতীয় বায়ুদূষণের নগরীতে পরিণত হওয়ার খবরটি উদ্বেগজনক। রাজধানীর ৯০ ভাগ অথবা তার চেয়ে বেশি যানবাহনে কয়েক বছর ধরে ব্যবহৃত হয় সিএনজি বা তরল গ্যাস। ফলে যানবাহন রাজধানীর বায়ুদূষণে ঠিক ততটা ক্ষতিকর ভূমিকা রাখছে না। কিন্তু কলকারখানার ধোঁয়া, ইটভাটার ধোঁয়া ও ধূলি রাজধানীর বায়ুদূষণকে ভয়াবহ করে তুলছে। রাজধানীর একটা অংশে রান্নার কাজে কাঠ কয়লা পোড়ানোর ঘটনাও বায়ুদূষণে ভূমিকা রাখছে। বায়ুদূষণ বন্ধে কলকারখানা ও ইটভাটার দূষণ বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে। নগর এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতি ঘটাতে হবে। বায়ুদূষণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নারী ও শিশুরা। তাদের সুরক্ষায় এখন থেকেই যত্নবান হতে হবে। উন্নয়নের নামে ধূলিকণার প্রসার যাতে না হয় সে ব্যাপারেও নজর দিতে হবে। দূষণে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নগরী হওয়ার মধ্যে যে কোনো কৃতিত্ব নেই— এ বিষয়টি সরকার, সিটি করপোরেশন ও নাগরিকদের উপলব্ধিতে আসাও জরুরি।