শিরোনাম
রবিবার, ৬ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

উচ্চশিক্ষায় নৈরাজ্য

নজরদারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা বাড়াতে হবে

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে দেশে চলছে চরম নৈরাজ্য। উচ্চশিক্ষার দ্বার সম্প্রসারিত করার জন্য দেশে বেসরকারি পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু ব্যাঙের ছাতার মতো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুযোগ শিক্ষার মানের বারোটা বাজিয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য অপর্যাপ্ত জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর কৃতিত্ব দেখিয়েছে শিক্ষা ব্যবসার কুশীলবরা। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নজরদারির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) নামের প্রতিষ্ঠান থাকলেও কালের বিবর্তনে এটি নখদন্তহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নানা অনিয়ম করলেও উচ্চশিক্ষার তদারক করার এ সংস্থা শুধু বাঘের মতো হুঙ্কার দিতে পারে, কামড় দূরের কথা আঁচড় দেওয়ার সাধ্যও তাদের নেই। ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা ছাড়া কিছুই করতে পারে না ইউজিসি। ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইউজিসি গঠন করেন। ৪৫ বছর আগে সে সময় দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল মোট ছয়টি। এখন মোট বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি ৪০টি ও বেসরকারি ১০১টি। কিন্তু এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় তদারকের জন্য ইউজিসির ক্ষমতা বাড়েনি। উচ্চশিক্ষা কমিশন না থাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারছে না তদারককারী সংস্থাটি। ইউজিসি এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করলেও রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। ইউজিসিকে কমিশনে রূপান্তর করা হলে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে এমনটিই মনে করেন অভিজ্ঞজনরা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার গুণগতমান বজায় রাখতে হলে ইউজিসির ক্ষমতায়নের কোনো বিকল্প নেই। স্মর্তব্য, ইউজিসি প্রতিষ্ঠার সময় ’৭৩ সালে উচ্চশিক্ষায় ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৫ হাজারের মতো। এখন প্রায় ৩৫ লাখ। উচ্চশিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়া হলেও তা কার্যক্ষেত্রে এখন শিক্ষিত বেকার সৃষ্টির কারখানায় পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে একজন দিনমজুর অথবা রিকশাচালকের মাসিক আয়ের সমান চাকরি পাওয়াও এসব উচ্চশিক্ষিত বেকারের জন্য দায় হয়ে পড়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাচ্ছেতাইপনার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা শুধু নয়, এগুলোতে যাতে বাস্তবমুখী শিক্ষা দেওয়া হয় সে উদ্যোগও নিতে হবে। নতুবা শিক্ষিত বেকাররা একপর্যায়ে জাতীয় বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ালে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর