শুক্রবার, ১১ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

বজ্রপাতের অপঘাত

দুর্যোগ প্রতিরোধের উদ্যোগ নিন

গত বুধবার মাত্র এক দিনেই সারা দেশে বজ্রপাতে ৩১ জন প্রাণ হারিয়েছে। দেশের ইতিহাসে বজ্রপাতে এক দিনে এত মৃত্যুর ঘটনা এটিই প্রথম। বজ্রপাতের ঘটনা দেশের হাওর এলাকায় ইতিমধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। চাষিরা ফসলের মাঠে যেতে ভয় পাচ্ছেন। হাওরে ফসল কাটার জন্য শ্রমিক পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার কারণ কী, সেটি নিয়ে দেশে বিস্তারিত কোনো গবেষণা নেই। তবে পৃথিবীর যেসব অঞ্চল বজ্রপাতপ্রবণ, এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া অন্যতম। উন্নত দেশগুলোতে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু কমলেও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশে বজ্রপাতে যারা মারা যাচ্ছে, তাদের বেশির ভাগই মাঠে কাজ করার সময় অপঘাতের শিকার হচ্ছে। প্রতিবছর সারা বিশ্বে যত মানুষ বজ্রপাতে প্রাণ হারায় তার প্রতি চারজনের একজন বাংলাদেশের। দেশে প্রতি বছর দুই থেকে তিনশজন প্রাণ হারাচ্ছে বজ্রপাতে। চলতি বছর এ দুর্যোগে এ পর্যন্ত ১২৪ জন প্রাণ হারিয়েছে। আবহাওয়ার বেসামাল পরিবর্তন ও গাছপালা কমে যাওয়ায় দেশের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা এক থেকে দেড় সেলসিয়াস বেড়েছে। বাতাসে বাড়ছে জলীয়বাষ্পের পরিমাণও। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর থেকে ভেসে আসা আর্দ্র বায়ু আর উত্তরে হিমালয় থেকে আসা শুষ্ক বায়ুর মিলনে সৃষ্টি হচ্ছে বজ্রপাত। আবহাওয়া অধিদফতরের মতে, গত কয়েক বছর ধরে বজ্রপাতের পরিমাণ বাড়ছে। সাধারণত মে মাসে বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটলেও দু-তিন বছর ধরে এ দুর্যোগ কোনো বিশেষ মাসে সীমাবদ্ধ নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, এক সময় দেশের বেশিরভাগ গ্রাম এলাকায় বড় বড় গাছ থাকত। তাল, নারিকেল, বটসহ নানা ধরনের বড় গাছ বজ্রপাতের আঘাত নিজের শরীরে নিয়ে নিত। ফলে মানুষের আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা কম ছিল। দেশে বড় গাছের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েছে কিনা খতিয়ে দেখা দরকার। মুঠোফোনের ব্যবহারও বজ্রপাত বৃদ্ধির জন্য দায়ী বলে ব্যাপকভাবে মনে করা হয়। স্মর্তব্য, বজ্রপাত মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় ৩২ লাখ তালগাছ রোপণ করা হয়েছে। সচেতনতা বাড়ানোর জন্য লিফলেট-পোস্টার বিলি করা হচ্ছে। আমরা আশা করব তালগাছ রোপণের এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হবে। পাশাপাশি গবেষণার মাধ্যমে বজ্রপাত বৃদ্ধির প্রকৃত কারণ উদঘাটনেরও চেষ্টা চালানো হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর