শনিবার, ১২ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

জ্ঞান বুদ্ধির পাঁচালির পাঁচমিশালি পরিণতি!

গোলাম মাওলা রনি

জ্ঞান বুদ্ধির পাঁচালির পাঁচমিশালি পরিণতি!

জ্ঞান ও বুদ্ধিকে একই শব্দ মনে করে একত্রে গুলিয়ে ফেলেন এমন লোকের সংখ্যা আমাদের সমাজে নেহায়েত কম নয়। অনেকে আবার জ্ঞানকে বুদ্ধি মনে করে নিজের বুদ্ধির বহর প্রমাণের জন্য নানা ফন্দি-ফিকির করে থাকেন। আমাদের সমাজে এমন অনেক লোক রয়েছেন যারা মানুষের সহজাত বুদ্ধিমত্তাকে জ্ঞান মনে করেন এবং তাদের আশপাশের লোকজনকে উঠতে বসতে জ্ঞান দান করে অনেকের জীবন ঝালাপালা করে ফেলেন। জ্ঞান-বুদ্ধির বাইরে মানুষের আরও একটি অতিন্দ্রিয় মহাক্ষমতার নাম প্রজ্ঞা, যার মাধ্যমে সে সত্যিকার অর্থে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে ধরণির বুকে নিজেকে অমর করে রাখার সুযোগ লাভ করে। প্রতিটি মানুষ তার জন্ম ও নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত বেড়ে ওঠাকালীন ক্রমাগতভাবে সহজাত বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হয়ে ওঠে। বিষয়টি পুরোপুরি প্রাকৃতিক। কারণ জন্মগতভাবে কেউ যেমন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হতে পারেন, তেমন কেবল জন্মের কারণে কেউ হতে পারেন সাধারণ বুদ্ধিমত্তার মানুষ কিংবা অসাধারণ বুদ্ধির অধিকারী মহামানব।

মানুষের সহজাত বুদ্ধিমত্তার প্রধানত দুটো দিক রয়েছে। একটি হলো নেতিবাচক বুদ্ধি এবং অন্যটি হলো ইতিবাচক। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গেছে, নেতিবাচক বুদ্ধিধারীরা সারাটি জীবন সময়ে-অসময়ে মন্দ কাজ করে বেড়ান। পরিবেশ-পরিস্থিতি কিংবা অবস্থার প্রেক্ষাপটে নেতিবাচক বুদ্ধিধারীরা বকধার্মিকের মতো ভালো ভালো কর্ম করেন বটে কিন্তু সময়-সুযোগ পেলে তারা ইতিহাসের নির্মম ও নিষ্ঠুর মন্দ কাজগুলো করে অতীতের ভালো কাজগুলোর কাফফারা আদায় করেন। অন্যদিকে ইতিবাচক বুদ্ধিধারীরা অবস্থার চাপে পড়ে মন্দ কাজ করলেও সময় ও সুযোগ পেলে তারা যুগান্তকারী শুভকর্ম করে ধরণির বুকে নবতর ইতিহাস পয়দা করে ফেলেন। আধুনিক বিজ্ঞানের মতে, মানুষের মস্তিষ্কে গড়ে ২৪০ থেকে ৪০০ গ্রাম পর্যন্ত মগজ থাকে, যার মধ্যে গড়ে ১০০ কোটি নিউরন বিদ্যমান। মানুষের বৃদ্ধিমত্তা, চিন্তা করার ক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতাগুলো নিউরনের কারণেই হয়ে থাকে।

মানুষের বুদ্ধির মতো জ্ঞানও প্রাকৃতিক বিষয়। তবে বুদ্ধির চেয়ে জ্ঞানের স্তর অধিক উন্নত। আভিজাত্যময় ও বিরল। কারণ মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করলে সে কিছু না কিছু বুদ্ধির অধিকারী হয়ে ওঠে এবং সময়ের বিবর্তনে বিভিন্ন ঘটনা-দুর্ঘটনায় মানুষের বুদ্ধির হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। মানুষ কখনো পরিস্থিতির চাপে বুদ্ধিহীন হয়ে পড়ে অথবা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বল্প সময়ের জন্য কারও কারও বুদ্ধিনাশ ঘটে থাকে। আবার মানুষ কখনো কখনো এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যায় যখন তার বুদ্ধির দরজা খুলে যায়। সে যদি সফলতা ও সম্ভাবনার মধ্যে থাকে তবে আরও অধিকতর সফলতা লাভের উপায়সমূহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার মস্তিষ্কে গিজগিজ করতে থাকে। অন্যদিকে সে বিপদাপন্ন হলে তা থেকে উদ্ধার কিংবা নিস্তার লাভের অভিনব উপায়সমূহ তার মস্তিষ্ক স্বয়ংক্রিয়ভাবে উদ্ভাবন করে ফেলে যা স্বাভাবিক অবস্থায় কোনোক্রমেই সম্ভব হয় না।

আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত প্রবাদ হলো— জ্ঞান বুদ্ধিকে শানিত করে। আলোচ্য এ প্রবাদটিতে মানুষের বুদ্ধিকে শানিতকারী যে জ্ঞানের কথা বলা হয়েছে তা মূলত জ্ঞান নয়, তা হলো মানুষের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং প্রশিক্ষণ। এমনকি মানুষ যাকে বিশেষ জ্ঞান বা সায়েন্স বলে তাও জ্ঞান নয়। মানুষের পঞ্চ ইন্দ্রিয়, বুদ্ধিমত্তা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং প্রকৃতির বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে চিন্তাভাবনা, গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার অনুসিদ্ধান্তই হলো বিজ্ঞান। তাহলে জ্ঞান কী? আমাকে যদি এ প্রশ্ন করেন তবে আমি আপনাদের পবিত্র কোরআনের একটি সুবিখ্যাত আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করব। মুসলমানমাত্রই কমবেশি আয়াতটি সম্পর্কে জানেন। আর তা হলো— রব্বি জিদনি ইল্মা। অর্থাৎ হে আমার রব! তুমি আমায় জ্ঞান দান কর। এ আয়াতের মর্মার্থ হলো জ্ঞান আল্লাহর কাছ থেকে চেয়ে নিতে হয় অথবা আল্লাহ তাঁর বিশেষ দয়ায় কিংবা ইচ্ছায় মানুষের মধ্যে কাউকে কাউকে জ্ঞান দান করেন।

জ্ঞানের প্রাথমিক পরিচয় হলো— বুদ্ধির অধিক্ষেত্র যেখানে শেষ হয় ঠিক সেখানেই জ্ঞানের শুরু হয়। জ্ঞানের সঙ্গে প্রায়ই বস্তুর সংযোগ থাকে না। অতিন্দ্রিয় এবং অপার্থিব বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে জ্ঞানীরা যে সূত্র রচনা করেন কিংবা তথ্য দেন তার ওপর গবেষণা চালিয়ে বুদ্ধিমান ও বিজ্ঞানীরা নানান কর্মযজ্ঞ করে থাকেন। অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, নিউটন প্রমুখ মহাজ্ঞানী কর্তৃক উদ্ভাবিত সূত্র যেমন আধুনিক সভ্যতার অনেক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সূচনা করেছে তেমন সক্রেটিস, অ্যারিস্টটল, ভলতেয়ার, রুশো প্রমুখ দার্শনিকের চিন্তার ওপর ভিত্তি করে পৃথিবীর অনেক দেশে নিত্যনতুন সভ্যতার বুনিয়াদ গড়ে উঠেছে। লিউনার্দো দা ভিঞ্চি, পাবলো পিকাশো, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, হোমার শেক্সপিয়র, কালিদাস কিংবা ঋষি বেদব্যাসের মতো মহাজ্ঞানীর কারণেই তামাম দুনিয়ায় বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মযজ্ঞ অবিরতভাবে চলেছে এবং আগামী দিনেও চলবে বিদ্যার্থীদের বিদ্যা অর্জনের অধিক্ষেত্ররূপে।

জ্ঞানের প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি সাধনা করে অর্জন করতে হয়। জ্ঞানীরা তাদের দীর্ঘদিনের সাধনা, চিন্তাভাবনা এবং ঐকান্তিক চেষ্টায় এমন কিছু বিষয় জগৎ-সংসারের কাছে উপস্থাপন করেন যা একাধারে মৌলিক, অভূতপূর্ব এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিস্ময়কর। তারা এমন কিছু রচনা করেন যা তাদের আগে এমন করে কেউ রচনা করেননি। তারা এমন কিছু বলেন যা তাদের আগে ওভাবে কেউ বলেননি। তারা এমন কিছু তথ্য-উপাত্ত, ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা, রূপ-রস-ছন্দ, গীতিময়তা এবং জীবনপ্রণালি বা জীবনব্যবস্থা মানবমণ্ডলীর কাছে তুলে ধরেন যা তাদের আগে অন্য কেউ করেনি। জ্ঞানীর কর্মে মানবসভ্যতার চাকা দুুরন্ত গতিতে প্রগতির পথে ধাবিত হতে থাকে। তাদের কারণেই মানবসভ্যতার নতুন নতুন দিগন্ত রচিত হয়। মানবমনের প্রশান্তি-মস্তিষ্কের উন্নতি এবং কর্মের শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। জ্ঞানী ব্যক্তি এবং তার জ্ঞান সর্বদা সর্বজনীন হয়ে থাকে এবং অনাদিকালের ইতিহাসে তা অমরত্ব লাভ করে। পৃথিবীর সর্বকালের সব জ্ঞানী প্রায় হুবহু কথা বলেছেন। তাদের কথা ও কর্মে কোনো বিভেদ-বিসম্বাদ যেমন নেই তেমন জ্ঞানীরা কখনো কেউ কারও প্রতিদ্বন্দ্বী হন না। কয়েকটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। সেই সুদূর প্রাচীনকালে ইউরোপের নগরে বন্দরে ঘুরে ঘুরে অন্ধ কবি হোমার যে মহাকাব্য রচনা করেছেন তার নীতিকথা ও আপ্তবাক্যের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে প্রাচীন ভারতের দুই মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারতের। অন্যদিকে প্রাচীন গ্রিসে বসে সক্রেটিস, প্লেটো প্রমুখ দার্শনিক যেসব নীতিকথা, বাণী বা রাজ্য-রাজা-রাজধানীর উন্নয়নসংক্রান্ত নীতিমালার কথা বলেছেন তার সঙ্গে মহাচীনের সর্বকালের সেরা জ্ঞানী কনফুসিয়াস, প্রাচীন ভারতের গৌতম বুদ্ধ প্রমুখের কথামালার কোনোই অমিল নেই। সর্বকালের সেরা আরবীয় কবি প্রাচীন দুনিয়ার তপ্ত মরুভূমিতে বসে তার প্রেমিকার জন্য যে কবিতা রচনা করেছেন তার সঙ্গে ভারতবর্ষের শস্য-শ্যামল বৃক্ষ-লতা শোভিত বনভূমির মধ্যে বসে রচিত মহাকবি কালিদাসের কবিতার চমৎকার মিল রয়েছে।

জ্ঞান এবং বুদ্ধি সম্পর্কে আলোচনার এই পর্যায়ে যদি প্রশ্ন করা হয়, বুদ্ধি থাকতে আবার জ্ঞানের দরকার পড়ে কেন? কারণ মানুষের সহজাত বুদ্ধি, তার অর্জিত বিদ্যা, প্রশিক্ষণ, দক্ষতা বিজ্ঞজনের পরামর্শ ও তদারকি ইত্যাদি দিয়েই তো সুন্দরভাবে জীবন চালিয়ে নেওয়া সম্ভব। তাহলে বহু ঝক্কি ঝামেলা, ক্ষেত্রবিশেষে জীবন-যৌবন বরবাদ করে জ্ঞানের জন্য সাধনা-কিংবা জ্ঞান অন্বেষণের জন্য গৃহত্যাগ, বনবাস, পাহাড়ে গমন ইত্যাদির দরকার পড়বে কেন? পৃথিবী তো এমনিতেই ভালোভাবে চলেছে এবং চলবে। সক্রেটিস যদি ভুল স্বীকার করে মাফ চেয়ে বেঁচে থাকতেন এবং দু-চারটি বিয়েথা করে ডজনখানেক মেধাবী সন্তান-সন্ততি পয়দা করতেন তবে কি ভালো হতো না! অথবা গ্যালিলিওর কী দরকার ছিল এ কথা বলা যে, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে। প্রাচীন লোকজন জানতেন সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে এবং তা যদি এখনো প্রচলিত থাকত তবে কি আমরা সূর্যের আলো কোনো অংশে কম পেতাম! আপনি আরও বলতে পারেন যে, আল্লাহকে রাজিখুশি করে তাঁর কাছে সতত প্রার্থনার মাধ্যমে জ্ঞান লাভ করা কি কোনো সাধারণ ঘটনা! আমরা অঙ্কের সাধারণ একটা সূত্র শিখতে বা ইতিহাসের জটিল কোনো সমীকরণ কোনো শিক্ষকের কাছ থেকে জানতে কতই না কষ্ট করি। আর দীন-দুনিয়ার মালিকের কাছ থেকে জ্ঞান হাসিল! সে তো হিমালয় জয়ের চেয়েও কঠিন এবং অসাধ্য। কী দরকার ওসবের! তার চেয়ে আমরা বিদ্যা-বুদ্ধি প্রশিক্ষণ ইত্যাদি নিয়েই ব্যস্ত থাকব।

আপনি যদি জ্ঞানকে পরিহার করার জন্য উপরোক্ত সরল সোজা কথামালার অনুরক্ত ভক্ত ও মুরিদ হয়ে পড়েন তবে জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আমার কিছু মতামত শুনুন। পৃথিবীর আকাশ-বাতাস, জমিন, পাহাড় ও সমুদ্রে প্রতিদিন অতিপ্রাকৃত কিছু ঘটনা ঘটে যার ব্যাখ্যা মানুষের সাধারণ মনমস্তিষ্ক, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা, অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ দিতে পারে না। প্রতিটি মুহূর্তে পৃথিবীর সব সৃষ্টিকুলে ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। অনেক কিছু নতুন করে সৃষ্টি হচ্ছে, আবার অনেক কিছু বিলুপ্ত হচ্ছে। রোগ-বালাই, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভূমির পরিবর্তনের পাশাপাশি মানুষের মন-মানসিকতা ও চাহিদারও পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে। মানুষের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে ভূখণ্ডের সীমানা, ভাষা, খাদ্যাভ্যাস, সংস্কৃতি, রুচি-অভিরুচি ইত্যাদিও পরিবর্তিত হচ্ছে। এসব প্রাকৃতিক পরিবর্তন ও বিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে মানবসভ্যতা টিকিয়ে রাখার জন্যই জ্ঞানের প্রয়োজন, আর তা প্রাকৃতিকভাবে প্রকৃতির সহায়তায় এবং প্রকৃতির মাঝে থেকেই অর্জিত হয় বলে জ্ঞানকে সবসময় ঐশী বিষয় বলে ভাবা হয়।

জ্ঞান কীভাবে আমাদের কল্যাণে আসতে পারে তার ইঙ্গিত রব্বি জিদনি ইল্মার মধ্যেই রয়েছে। জ্ঞানলাভের জন্য আল্লাহ আমাদের যে প্রার্থনাটি শিখিয়ে দিলেন সেই প্রার্থনার মধ্যে তিনি তাকে ‘রব’ নামে সম্বোধন করার নির্দেশ দিলেন। আমরা সবাই জানি যে, আল্লাহপাকের ৯৯টি গুণবাচক নাম রয়েছে যাকে বলা হয় আসমাউল হুসনা। আল্লাহ কেন তাঁর সুন্দরতম নামসমূহের মধ্যে বহুল ব্যবহূত রহমান, রহিম, মালিক, কুদ্দুস, জব্বার, হাকিম, খালেক, সালাম, করিম ইত্যাদি ব্যবহার না করে সুনির্দিষ্টভাবে রব ব্যবহার করলেন! আপনি যদি রব শব্দের অর্থ এবং আল্লাহর রুবুবিয়াত সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করেন তবে নিশ্চিতভাবে জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত পেয়ে যাবেন। রব শব্দের অর্থ হলো রিজিকদাতা। অন্যদিকে রবের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য এবং সংজ্ঞা হলো এমন— তিনিই রব যিনি তার বান্দার সব প্রয়োজন, অভাব এবং অভিযোগ চাইবার আগেই আপন গরজে মিটিয়ে দেন যেভাবে যখন এবং যতটুকু বান্দার জন্য প্রযোজ্য। এবার জ্ঞানের সঙ্গে রব বা রিজিকদাতার সম্পর্ক নিয়ে বলার আগে রিজিক সম্পর্কে কিছু বলে নিই।

আমরা সাধারণত রিজিক বলতে খাদ্য-খাবারকে বুঝি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মানুষের জন্য আল্লাহ যেসব নিয়ামত দান করেন তা সবকিছুই রিজিকের অন্তর্ভুক্ত। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, নিয়ামত হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত সেসব উপহার— দয়া-দাক্ষিণ্য এবং করুণা যা আপনি আপন চেষ্টায় ও নিজের মর্জিমাফিক হাসিল করতে পারেন না। আপনার সুন্দর স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যের সুস্থতা, সন্তান-সন্ততি, ধন-সম্পদ, পদ-পদবি, মানমর্যাদা, সুনাম-সুখ্যাতি সবকিছুই রিজিকের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই রব সম্বোধনের মাধ্যমে আপনি আল্লাহর কাছে জ্ঞান প্রার্থনা করলেন এই উদ্দেশ্যে যেন আল্লাহ-প্রদত্ত জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়ে আপনি তাঁর দেওয়া নিয়ামত তথা রিজিক উত্তমভাবে ভোগ, দখল, পরিচালনা, হস্তান্তর, ধারণ, পালন-প্রতিপালন, সংরক্ষণ এবং বিস্তৃতি ঘটাতে পারেন। আপনি আপনার স্বাভাবিক এবং সহজাত বুদ্ধি, অভিজ্ঞতা ও কর্মকৌশল দ্বারা সবসময় সব নিয়ামতের হেফাজত করতে পারবেন না বলেই জ্ঞানের জন্য প্রার্থনা জানাবেন। আলোচনার এই পর্যায়ে আমরা প্রজ্ঞা সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু বলে আজকের প্রসঙ্গে ইতি টানব। প্রজ্ঞা হলো মানুষের জ্ঞান এবং বুদ্ধির সমন্বিত সাফল্যের সর্বোচ্চ ইতিবাচক নির্যাস। একে আপনি জ্ঞান, বুদ্ধি, উত্তম চরিত্র, সুনাম-সুখ্যাতি, ধর্মবোধ, নীতিনৈতিকতা, সফলতা, সার্থকতা ইত্যাদি সবকিছুর যোগফল বলতে পারেন। মানুষ যখন প্রজ্ঞাবান হয়ে ওঠে তখন সৃষ্টির সেরা জীবের সব গুণ ও উপাধি তার জন্য প্রযোজ্য হয়ে পড়ে। দুনিয়া ও আখিরাতের তাবৎ কল্যাণ প্রজ্ঞাবানের জন্য ফরজ হয়ে যায়। স্বয়ং আল্লাহ তাঁর প্রজ্ঞাবান বান্দার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে বান্দাকে বন্ু্ল বানিয়ে ফেলেন। আল কোরআনে আল্লাহ তাঁর এক প্রজ্ঞাবান বান্দার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন আর পরম সৌভাগ্যবান সেই বান্দার নাম হজরত লোকমান (আ.) বলে উল্লেখ করেছেন।

 

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য ও কলামিস্ট।

পাদটীকা : ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা-মদিনা গমনের কারণে পবিত্র রমজান মাসে লেখকের কোনো নিবন্ধ প্রকাশ হবে না। ঈদুল ফিতরের পর তার লেখা যথারীতি ছাপা হবে।

সর্বশেষ খবর