শিরোনাম
শনিবার, ১২ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

দুনিয়া আখেরাতের বাজার

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

দুনিয়া আখেরাতের বাজার

কোরআন হলো মানুষ নামক এ যন্ত্রটি অপারেট করার গাইড বুক। প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব হলো কোরআনের বিধানগুলো পুরোপুরি জেনে-বুঝে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা। কোরআনের বিধান মানে আল্লাহর হুকুম। আর আল্লাহর হুকুম পালনের ক্ষেত্রে অবশ্যই আল্লাহ যেভাবে বলেছেন সেভাবেই পালন করতে হবে। আল্লাহ বলেছেন, ‘ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানুদ খুলু ফিসসিলমি কাফফাহ। হে আমার আদরের মুমিন বান্দারা! তোমরা যদি ইসলামে প্রবেশ করতে চাও, তাহলে পুরোপুরি প্রবেশ কর।’ ‘আফাতুমিনুনা বি বাদিল কিতাবি ওয়া তাকফুরুনা বিবাদ। তোমরা কি এ কোরআনের কিছু আয়াত মানবে আর কিছু আয়াত করবে অস্বীকার? তাহলে জেনে রেখ! তোমাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনা এবং অপমানের জীবন।’

তো পাঠক বন্ধু! আমরা যদি ইসলামী জিন্দেগি যাপন করতে চাই, কোরআনের বৈঠা বেয়ে জীবনতরীটি জান্নাতের বন্দরে ভেরাতে চাই তাহলে অবশ্যই প্রতি মুহূর্তে আমাদের জীবনে আমলের ফুল ফোটাতে হবে। যে ফুল থেকে কোরআন-সুন্নাহর সুবাস ছড়িয়ে পড়বে ব্যক্তি থেকে পরিবারে। পরিবার থেকে সমাজে। সমাজ থেকে রাষ্ট্রে। রাষ্ট্র থেকে বিশ্বে। এ জন্য চাই কোরআন-সুন্নাহর পূর্ণ অনুশীলন। কোরআন সুন্নাহর পুরোপুরি চর্চার মাধ্যমেই আমরা একেকজন হতে পারব খাঁটি মুমিন। যেমনটি কোরআন বলেছে, ‘পূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর’- সেরকম মুসলমান।  পরিপূর্ণভাবে ইসলামের হুকুম আহকাম মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা অনেকেই ইসলামকে মেনে চলি, তবে আংশিকভাবে মেনে চলি পূর্ণ ইসলামের চর্চা আমদের মধ্যে নেই। মূল কথায় যাওয়ার আগে আসুন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একবার চোখ বুলিয়ে নিই। ঘুম থেকে উঠে যখন আমরা ব্রাশ করি তখন কেউই বলি না যে, আধ বা অল্প পরিমাণ ব্রাশ করি বাকিটা পরে করে নেব। ব্রাশ শেষে নাস্তার টেবিলে বসে এ কথাও আমরা বলি না, অল্প পরিমাণে নাস্তা করি, বাকিটা না করলেও চলবে। অফিসের জন্য যখন তৈরি হই, তখন শার্ট পরে বলি না যে, প্যান্ট না পরে লুঙ্গি পরেই অফিসে চলে যাই। অফিসে গিয়ে কাজের নির্দিষ্ট সময়ের আগেও কেউ বেরিয়ে পড়ি না। এভাবে দিনের প্রতিটি কাজ এবং রাতের ঘুম সবকিছুই আমরা পূর্ণভাবেই করি। কখনো বলি না যে, হাতে সময় নেই বা কোনো কারণে প্রয়োজনীয় কাজটি অর্ধেক করে রেখে দিই। এমনকি আমরা যখন খাই কিংবা অন্য কোনো কাজ করি তখনো পূর্ণভাবেই করি। তো জীবনের সবকিছুই আমরা পূর্ণভাবে করি, করার চেষ্টা করি। সে নিয়মেই আমাদের আখেরাতের কাজও পূর্ণভাবেই করার কথা ছিল। কেননা, এ দুনিয়া তো আখেরাতেরই বাজার। বাজারে গিয়েও কিন্তু আমরা প্রয়োজনীয় সব সদাই কিনেই বাসায় ফিরি। কিন্তু আখেরাতের বাজারে কেন যেন সব সদাই না কিনেই চলে যাই পরপারে। দৈনন্দিন জীবনের পাশাপাশি এবার আমাদের ধর্মজীবনের দিকে দেখুন। এখানে আমরা কেউই সাধ্যমতো পূর্ণ ইসলামের চর্চা করছি না। কেউ নামাজ-রোজা ঠিকমতো করে তো আচার-ব্যবহার, লেনদেনে গরমিল দেখা যায়। কেউ ব্যবহারিক জীবনে ভালো তো নামাজ রোজায় গাফলতি করে ফেলে। আমরা অনেকেই কমবেশি মিথ্যা, দুর্নীতি, সুদ-ঘুষ, হারামের সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে রেখেছি। কখনো ইচ্ছায়। কখনো অনিচ্ছায়। যেভাবেই হোক, আমরা যদি সাধ্যমতো পাপ থেকে বেরিয়ে আসতে না পারি, ইসলামঘরটিতে পুরোপুরি প্রবশে করতে না পারি, তাহলে কিন্তু কোরআনের ঘোষণা অনুযায়ী বড় আজাবের উপযুক্ত হয়ে পড়ব। মশা থেকে বাঁচার জন্য আমরা মশারির ভিতর ঢুকি। তো সেখানেও কিন্তু পুরোপুরিই ঢুকি। যদি অর্ধেক শরীর বাইরে আর অর্ধেক ভিতরে রাখি, তাহলে কিন্তু আমরা মশা থেকে বাঁচতে পারব না। তেমনিভাবে আমাদের অর্ধেক জীবন ধর্মে আর বাকি অর্ধেক ধর্মের বাইরে কাটালেও আমরা ক্ষতি থেকে, আল্লাহর পাকরাও থেকে বাঁচতে পারব না। তাই আসুন! আমরা আমাদের জীবনকে ইসলামের আলোকে সাজিয়ে তুলি। যেসব পাপের সঙ্গে আমরা নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছি, তা ছেড়ে সাচ্চা মুসলমান হয়ে আল্লাহর কোলে ফিরে আসি। আল্লাহর নিজেই সে ঘোষণা করে বলছেন, ‘ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু তুবু ইল্লাল্লাহি তাওবাতুন্নাসুহা। আমার প্রেমময় বান্দা! আমার কোলে তোমরা ফিরে এসো। এমনভাবে আসো যেন আমার কোল ছেড়ে আবার অন্য কোথাও পালিয়ে যেতে না হয়।’

লেখক : বিশিষ্ট ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

www.selimazadi.com

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর