শনিবার, ১২ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

মাহে রমজানের প্রস্তুতি

মাওলানা মুহিবুল্লাহিল বাকী
পেশ ইমাম

প্রতি বছরের মতো এবারও রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে আসছে মাহে রমজান। সব কুপ্রবৃত্তি ও রিপু জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ধ্বংস করে ফেরেশতা-সুলভ আচরণের দামি মানুষটি তৈরি করতে মূলত রমজানের আগমন। খনি থেকে বের করে আনা সোনা আগুনে পোড়ালে যেমন খাদ থেকে মুক্ত হয়ে সোনায় সোনালি রং ফুটে ওঠে, গাছ পুড়ে কয়লা হয় আর কয়লা পুড়লে ডায়মন্ড (হীরক) খণ্ড তৈরি হয়, তেমন রমজানের দাহনে সিয়াম সাধক গুনাহ থেকে অবমুক্ত হয়ে কুরিপু ও গ্রন্থিগুলো ধ্বংস হয়ে সোনালি জান্নাতি মানুষে পরিণত হয়। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে ইমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল; যাতে তোমরা আত্মসংযমের নীতি (তাকওয়া) অর্জন করতে পারো। রমজান মাসে নাজিল করা হয়েছে (মহাগ্রন্থ) আল-কোরআন, মানব জাতির হেদায়েতের জন্য এ গ্রন্থখানা সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী। যে এ মাস পাবে সে যেন রোজা রাখে। তাতে সে মুত্তাকি বান্দায় পরিণত হয়।’ সূরা বাকারা : ১৮৩ ও ১৮৫)। মুমিনের আত্মাকে আল্লাহতায়ালা ধুয়ে-মুছে পাক-সাফ করে তাঁর রঙে রঙিন করে তুলবেন। আর যারা আল্লাহপ্রেমিক তাদেরও অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে না। তারা শুধুই ভাবছেন, কোন দিন শুরু হবে রমজান এবং কীভাবে তারা নিজেদের পূত-পবিত্র করে গড়ে তুলবেন এ মাসে। তাদের আখলাককে উন্নততর, মহত্তর, পবিত্রতর করে ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ সাধন করবেন। পরম করুণাময়ের সন্তুষ্টির জন্য গরিবের প্রতি সহমর্মী, ধৈর্যশীল ও সহনশীল হবেন। চারিত্রিক গুণাবলি আরও শানিত করবেন। সিয়াম সাধনার কঠোর সংযমের সিঁড়ি বেয়ে পরহেজগারির শীর্ষচূড়ায় আরোহণ করবেন। জীবনের যে কোনো বিষয়ে সফলতা আনতে চাইলে অথবা কোনো বিষয়ে লক্ষ্য নির্ধারণ করলে তার প্রথম ধাপ হচ্ছে নিজের মন-মানসিকতাকে স্থির করা ও গোছানো এবং এর জন্য প্রস্তুতি শুরু করা। মাহে রমজান আগমনের দুই মাস আগেই রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্তুতি শুরু করে দিতেন। রজবের শুরুতেই নিজে এবং সাহাবায়ে কিরামকে এ দোয়া করার জন্য বলতেন— ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’ (হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় কর এবং আমাদের রমজানের পুণ্যময় মাস অর্জনের সৌভাগ্য দান কর।) তাবারানি, বায়হাকি। রসুলুল্লাহ (সা.)-এর এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতেই বিশ্বের মুসলমানরা রমজান আসার আগেই এর জন্য প্রতি বছর প্রস্তুতি শুরু করে দেন। সাহাবায়ে কিরামের পর তাবেয়িন, তাবে-তাবেয়িন, মুহাদ্দিসিন, আইম্মায়ে মুজতাহিদিনসহ সর্বস্তরের মুসলমান নিজ নিজ পরিসরে রমজানের প্রস্তুতি নিয়ে সেই ধারা অব্যাহত রেখেছেন। মাহে রমজান এমনই এক বরকতময় মাস, যার আগমনে পুলকিত হয়ে স্বয়ং রসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কিরামদের মোবারকবাদ পেশ করতেন। তিনি সাহাবিদের এ মর্মে সুসংবাদ প্রদান করেছেন যে, ‘তোমাদের সামনে রমজানের পবিত্র মাস এসেছে, যে মাসে আল্লাহ তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করেছেন।’ নাসায়ি, আহমদ। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘এ মাসে বেহেশতের দরজাগুলো খোলা থাকে আর দোজখের দরজাগুলো বন্ধ থাকে এবং শয়তানকে শিকল পরিয়ে রাখা হয়।’ বুখারি, নাসায়ি। তিনি আরও ইরশাদ করেন, ‘এখানে হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত রয়েছে। যে ব্যক্তি এর মহিমা অস্বীকার করল, মূলত সে বঞ্চিত!’ ইবনে মাজাহ। রসুল (সা.) একদা শাবান মাসের শেষ দিনে সাহাবায়ে কিরামকে লক্ষ্য করে মাহে রমজানের রোজার ফজিলত সম্পর্কে অবহিত করতে গিয়ে ইরশাদ করেন, ‘হে মানবগণ! তোমাদের প্রতি একটি মোবারক মাস ছায়া ফেলেছে। এ মাসে সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম একটি রজনী আছে, যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে মূলত সব কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো। যে ব্যক্তি এই মাসে কোনো নেক আমল দ্বারা আল্লহর সান্নিধ্য কামনা করে সে যেন অন্য সময়ে কোনো ফরজ আদায় করার মতো কাজ করল। আর এ মাসে যে ব্যক্তি কোনো ফরজ আদায় করে সে যেন অন্য সময়ের ৭০টি ফরজ আদায়ের নেকি লাভ করার সমতুল্য কাজ করল। এটি সংযমের মাস আর সংযমের ফল হচ্ছে জান্নাত।’ বায়হাকি, ইবনে খোজাইমা। আরেকটি হাদিসে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রমজান মাসে আমার উম্মতকে পাঁচটি উপহার দেওয়া হয়েছে, যা তাদের আগেকার কোনো উম্মতকে দেওয়া হয়নি। ১. রোজাদার ব্যক্তির মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশক্ আম্বরের চেয়েও অধিক প্রিয়। ২. রোজাদারের জন্য ইফতার করার সময় পর্যন্ত ফেরেশতা ও পানির মাছগুলো মাগফিরাত কামনা করতে থাকে। ৩. প্রতিদিন রোজাদারের জন্য আল্লাহ জান্নাতকে সজ্জিত করেন। আল্লাহ বলেন, আমার নেক্কার বান্দাহরা দুনিয়া ছেড়ে দিয়ে আমার কাছে আসবে। ৪. এ মাসে অবাধ্য শয়তানকে বন্দী করা হয়, ফলে রোজাদাররা নেক কাজ করার সুযোগ লাভ করে। এবং ৫. শেষ রাতে আল্লাহ রোজাদারদের ক্ষমা করে দেন।’ মুসনাদে আহমাদ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর