রাজধানীর ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাসগুলো কার্যত কোনো কাজে লাগছে না। এগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সংশয় থাকায় পথচারীরা তা ব্যবহারের বদলে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন। এ জন্য তাদের দুর্ঘটনায়ও পড়তে হচ্ছে। ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাস ব্যবহার না করার জন্য একতরফাভাবে নাগরিকদের সচেতনতার অভাবকে দায়ী করা হলেও মূল কারণ এগুলোর বেহাল অবস্থা। রাজধানীতে সব মিলিয়ে ৫৭টি ফুটওভার ব্রিজ ও ৩টি আন্ডারপাস রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৪টি এবং সড়ক ও জনপথের ৩টি। ৪৫টি স্টিলের এবং অন্য ১২টি কংক্রিটের তৈরি। আন্ডারপাসগুলোর পাশাপাশি ফুটওভার ব্রিজের অবস্থাও যাচ্ছেতাই। শাহবাগ মোড়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের সামনের ফুটওভার ব্রিজ কার্যত হকার মার্কেটে পরিণত হয়েছে। কসমেটিকস, জামা, জুতা, ফলের দোকান কী নেই সেখানে। বাংলামোটর পার হয়ে বিটিসিএলের সামনের ফুটওভার ব্রিজ প্রায়ই থাকে জনমানবহীন। সিঁড়িসহ ব্রিজের উপরে যেখানে সেখানে মলত্যাগ করে রাখে ছিন্নমূল মানুষ। নাকে রুমাল চেপে ডিঙিয়ে যেতে হয় এ পথের যাত্রীদের। নতুনবাজার ফুটওভার ব্রিজের দুপাশে ফুলের গাছ লাগিয়ে সুশোভিত করা হয়েছে। কিন্তু ব্রিজটির বেশ কিছু জায়গায় লোহা ক্ষয়ে গিয়ে তৈরি হয়েছে বড় আকারের গর্ত। দুই পাশের সংযোগস্থলের লোহা ক্ষয়ে গিয়ে জীর্ণ হয়ে পড়েছে। দুই পাশে হকার এবং ভিক্ষুকদের টানাহেঁচড়া লেগেই থাকে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলার বসাতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে জোয়ারসাহারা এলাকার ফুটওভার ব্রিজ। ফলে এই সড়কে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে পথচারীরা। রাজধানীর সিংহভাগ আন্ডারপাস ও ফুটওভারের হাল-হকিকত দেখলে যে কারোরই মনে হবে এগুলো রাস্তা পারাপারের জন্য নয়, ভবঘুরে, ছিন্নমূল এবং মাদকসেবীদের আড্ডাস্থল হিসেবে বানানো হয়েছে। ফুটওভার ও আন্ডারপাসগুলোতে ছিনতাইকারীদের উৎপাত নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। তৃতীয় লিঙ্গের হিজড়াদের চাঁদাবাজিও প্রায়শই ঘটছে। জনগণের ট্যাক্সের টাকা ব্যয় করে আন্ডারপাস ও ফুটওভার নির্মাণ করা হলেও নিরাপত্তার সংকটে তা কোনো কাজে লাগছে না। এটি সরকার, পুলিশ প্রশাসন, সিটি করপোরেশন সবার জন্যই লজ্জার বিষয়। আমরা আশা করব নিজেদের নির্লজ্জ হিসেবে চিহ্নিত করতে না চাইলে ফুটওভার ও আন্ডারপাসের নিরাপত্তা এবং পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।