বৃহস্পতিবার, ২৪ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাজেটে অভিবাসন খাতে বেশি বরাদ্দ চাই

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ

বাজেটে অভিবাসন খাতে বেশি বরাদ্দ চাই

জাতীয় বাজেট ২০১৮-১৯ সমাগত। বাজেট সামনে রেখে এখন বিবিধ আলোচনা চলছে পুরোদমে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বিশ্ব পরিস্থিতি ও জাতীয় নির্বাচনের আলোকে নানা ধরনের বিশ্লেষণ হাজির করছেন। মাননীয় অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করবেন ৭ জুন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ইতিপূর্বে ঘোষণা দিয়েছেন সরকারের এ মেয়াদই হবে তার জীবনের শেষ বাজেট।  এদিকে প্রাক-বাজেট আলোচনায় প্রতিদিনই বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে দেনদরবার অব্যাহত রয়েছে। রাজস্ব আহরণ, বিনিয়োগ, প্রবৃদ্ধির নতুন নতুন সম্ভাবনা ও কৌশলগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ধারণা করা হয়েছিল, নির্বাচনী বছর হিসেবে এবার বাজেটের পরিসর চলতি অর্থবছরের চেয়ে বড় হবে। কিন্তু এবারের বাজেট রক্ষণশীল হবে বলে বেশ কয়েকটি সভায় অর্থমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন। সে অনুযায়ী আগামী বছরের বাজেটের কলেবর হতে পারে ৪ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা মতো। কয়েক দিন আগে সচিবালয়ে সম্পদ কমিটির বৈঠকে এ রকম ভাবনাই পুঞ্জীভূত করা হয়েছে। সমাগত জাতীয় বাজেটে দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অভিবাসন খাত কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে? এ প্রশ্ন নীতিনির্ধারক, অভিবাসন বিশ্লেষক এবং যারা অভিবাসন বিষয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন তাদের অনেকেরই। কেননা এ খাত থেকে প্রতি বছর যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে সে তুলনায় এ খাতের বিকাশ, সক্ষমতা অর্জন, প্রবাসীসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের কল্যাণে বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকে না। অভিবাসন খাত অর্থনৈতিক দুর্যোগের যাবতীয় ঘাত-প্রতিঘাত প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও কেন জানি বাজেট বরাদ্দে এ খাত এখনো উপেক্ষিত। অনেক দিন ধরেই আমরা লক্ষ্য করছি, অভিবাসন খাত এগিয়ে নিতে জাতীয় বাজেটে খুব সন্তোষজনক বরাদ্দ দেওয়া হয় না। সর্বশেষ অর্থবছরে (২০১৭-১৮) মোট বাজেটের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা; যা বাজেটের মাত্র .০১৭ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে অভিবাসন খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ০.১৫ শতাংশ। চলতি বছর উন্নয়ন বাজেট বা এডিপির আকার ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। এতে খাতওয়ারি হিসাবে সবচেয়ে বেশি ব্যয় ধরা হয় পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ২৭.৪ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ছিল শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ১৯.৪ শতাংশ। এর পরে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ছিল ১৫.৩ শতাংশ। এর পরে বরাদ্দের ক্রমানুসারে আছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত ১৩.৫ শতাংশ, অন্যান্য খাত ৬.৭ শতাংশ, স্বাস্থ্য ৬.১%, কৃষি ৫.৭, জনপ্রশাসন ৩.১ এবং সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে বরাদ্দের অনুপাত ২.৮ শতাংশ। এডিপিতেও প্রবাসীকল্যাণ তথা অভিবাসন খাতে বরাদ্দ ছিল যৎসামান্যই। বরাদ্দের এ চিত্র বরাবরই অভিবাসন খাতের স্টেকহোল্ডারদের আশাহত করেছে। চলতি অর্থবছরে বাজেট পেশ হওয়ার পর বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন অভিবাসন খাতের উন্নয়নে এ বরাদ্দ একেবারেই নগণ্য, এটি অবশ্যই বাড়াতে হবে এবং সঠিকভাবে খরচও করতে হবে। বাজেটে বেশি বরাদ্দের মূল কারণ হচ্ছে বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে অভিবাসী হতে ইচ্ছুক এবং এ খাতের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে জনশক্তি প্রেরণের বাজার আরও বেশি প্রসারিত করা; যাতে শ্রমবাজারে আমাদের কাঙ্ক্ষিত টার্গেট পূরণ হয়। কেননা অদক্ষ মানবসম্পদ অনেক আগে থেকেই আমাদের গোঁদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো চেপে বসে আছে।

বাজেটে অভিবাসন খাতে বরাদ্দের আরও যৌক্তিক কারণ হচ্ছে, প্রবাসীদের কল্যাণে আরও বিবিধ সেবামূলক কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা। সর্বশেষ বছর বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী প্রবাস আয় বৃদ্ধির কিছু কৌশল ও পদক্ষেপের কথা বলেছিলেন। বিশেষ করে প্রবাস আয় প্রেরণে ব্যয় হ্রাস, বিদেশে কর্মরত ব্যাংকের শাখা ও এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোকে রেমিট্যান্স প্রেরণে দক্ষ করে গড়ে তোলা, প্রবাসীরা যেসব দেশে কর্মরত সেসব দেশের স্থানীয় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে এ দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ড্রয়িংব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রেরণে উদ্বুদ্ধকরণে কথাগুলো বেশ জোর দিয়েই বলেছিলেন তিনি।

অভিবাসন খাত নিয়ে আমাদের আত্মতুষ্টির শেষ নেই। কথায় কথায় এ খাতকে আমরা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করি। যখনই অর্থনৈতিক দুর্যোগ, দুর্ভোগ বা ঝুঁকি আসে তখনই এ খাতকেই সব ঘাত-প্রতিঘাত রক্ষার বড় অস্ত্র হিসেবে গণ্য করা হয়। এর কারণও আছে অনেক। কেননা এ খাত থেকে রাষ্ট্র কেবল নগদ লাভবান হচ্ছে। অন্যান্য অনেক সেক্টরেই বছরের পর বছর ধরে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা গচ্চা দিতে হয়। দাবি বা তোপের মুখে প্রণোদনা দিতে হয়। ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ঋণসুবিধা দিতে হয়। প্রদত্ত ঋণ অনেক সময় ব্যাংক ফেরতও পায় না। কিন্তু এ খাত একেবারেই ভিন্ন। এ খাতে কোনো সরকারি প্রণোদনা (ইনসেনটিভ) নেই। কিন্তু এ খাতই অর্থনীতিকে শক্তপোক্ত রাখার সবচেয়ে বড় খুঁটি হিসেবে পরিগণিত। ব্যবস্থাপনার নানা ত্রুটি সত্ত্বেও এ খাত থেকে দেশ অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে লাভবান হচ্ছে। প্রতি বছরই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাঠাচ্ছেন আমাদের শ্রম অভিবাসীরা। গড়পরতায় প্রতি মাস বা বছর অন্তে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমবেশি হলেও অভিবাসন খাতের এগিয়ে যাওয়াটা তাৎপর্যপূর্ণই। বিএমইটি-প্রদত্ত তথ্যমতে, এ বছরের মার্চ পর্যন্ত ২ লাখ ৪ হাজার ২০১ জন বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে অভিবাসী হতে পেরেছেন। এর মধ্যে বেশি শ্রম অভিবাসী হয়েছেন সৌদি আরবে। এর পরই রয়েছে মালয়েশিয়া, কাতার, ওমান ও কুয়েত। এ ছাড়া ইরাকেও বেশকিছু শ্রমিক শ্রম অভিবাসী হয়েছেন। এর মধ্যে ২৮ হাজার ৬৩৬ জন নারী শ্রমিক বিভিন্ন দেশে কাজের সন্ধানে পাড়ি দিয়েছেন। গত বছর প্রায় ১০ লাখের বেশি শ্রম অভিবাসী হয়েছিলেন আমাদের দেশ থেকে। এ বছর মোট ১২ লাখ কর্মীকে বিভিন্ন দেশে প্রেরণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএমইটি-প্রদত্ত তথ্যানুয়ায়ী এ বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৫১৫৬.৪৩ মিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীরা মোট ১৩৫২৬.৮৪ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিল। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট প্রবাসী আয় ছিল ১৩৬০৯.৭৭ মিলিয়ন ডলার। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এই বিশাল অঙ্কের প্রবাসী আয়ের পরও বাজেটে এ খাতের জন্য বরাদ্দ একেবারেই কম।

বিশ্ব শ্রম অভিবাসন খাতে দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের পদচারণ। এ দীর্ঘ সময়ে নানা চড়াই-উতরাই যেমন পাড়ি দিতে হয়েছে, তেমন নানা চ্যালেঞ্জেরও মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবে বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নিরাপদ অভিবাসন। এটি নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, এনজিও, গণমাধ্যমসহ অন্যান্য আরও সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও বিশ্ব পরিস্থিতির আলোকে সম্প্রতি অভিবাসন খাতের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় অনেক উন্নতিই লক্ষণীয়। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে অভিবাসী ইচ্ছুকদের দক্ষ করতে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ আয়োজন, অনলাইন ভিসা চালু, কর্মী প্রেরণে ডিজিটালাইজেশন পদ্ধতির ব্যবস্থা, স্মার্টকার্ড প্রবর্তন, ক্ষতিপূরণ প্রদান, পুনর্বাসন, ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু— এসব উদ্যোগ নিরাপদ অভিবাসনকে ত্বরান্বিত করছে। সর্বশেষ ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবসে এ বিষয়টিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। অভিবাসী দিবসে স্লোগান ছিল— নিরাপদ অভিবাসন যেখানে, টেকসই উন্নয়ন সেখানে। কিন্তু এটি শুধুই স্লোগান হিসেবে দেখলে হবে না। এর যথার্থতা তুলে ধরার প্রয়োজন আছে। এটি নতুন করে বলা অপ্রয়োজন যে, নিরাপদ অভিবাসনের দাবিটি কেন যৌক্তিক ও উন্নয়নের সঙ্গে এর সাজুয্যই বা কোথায়।কিন্তু অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের নিরাপদ অভিবাসনের ক্ষেত্র যতটা প্রসারিত ও বিস্তৃত হওয়ার কথা ছিল তা পুরোপুরি করা সম্ভব হয়নি প্রয়োজনীয় আর্থিক বরাদ্দের অভাবে। এ কারণেই আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রবাসীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা ও ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছেন। নিরাপদ অভিবাসন নিয়ে এখন পর্যন্ত সর্বত্র যে সচেতনতা তৈরি হওয়ার কথা তা হয়নি। ফলে শ্রম অভিবাসী হতে ইচ্ছুক তরুণদের বড় অংশই এখনো কোনো না কোনোভাবে প্রতারণার ফাঁদে পড়ছে। সব ধরনের প্রতারণা থেকে রক্ষা করতে হলে সচেতনতা তৈরির বিকল্প নেই। কিন্তু একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে সচেতনতা তৈরির কর্মসূচি বা ম্যাকানিজম তৈরি করা না হলে অনেক উদ্যোগই ফলপ্রসূ হবে না। ফলে অনেকেই এখনো না জেনে-বুঝে নিজেদের সঁপে দিচ্ছেন দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগী অথবা অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে। এখনো অনেকে এ রাস্তায় অন্ধের মতো হাঁটেন। দালাল বা প্রতারকরা যা বলে সেভাবে চলেন। তাই প্রতারণা এড়াতে বিদেশে যাওয়ার আগে শ্রম অভিবাসী হতে ইচ্ছুকদের ভিসা, চুক্তিপত্র ও বেতন সঠিকভাবে জানা আবশ্যক। মনে রাখতে হবে, ফ্রি ভিসা বলে কিছু নেই। বিদেশে দক্ষ কর্মীর মর্যাদা, বেতন ও কদর বেশি। অনৈতিক সুবিধা পাওয়ার জন্য কর্মস্থল থেকে পলায়ন করা যাবে না। বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে হবে। অভিবাসী হতে ইচ্ছুক একজন কর্মীর দক্ষ হওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন তা এখনো তৃণমূল পর্যায়ের সর্বস্তরে নিয়ে যাওয়া সময়ের দাবি। কর্মী রিসিভিং দেশগুলো এখন আর আগের মতো অদক্ষ বা নন স্কিল্ড কর্মী নিতে চায় না। জনশক্তির বাজার ভীষণরকম প্রতিযোগিতামূলক হওয়ায় সব দেশেই এখন দক্ষ বা স্কিল্ড কর্মীর চাহিদা প্রশ্নাতীত। কিন্তু অনেক বছর পেরিয়ে গেলেও স্কিল্ড কর্মী তৈরিতে আমরা এখনো সক্ষমতা দেখাতে পারিনি। স্কিল্ড কর্মী তৈরিতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ দৃশ্যমান থাকলেও তার ব্যাপ্তি ও বাস্তবায়ন ততটা আশানুরূপ নয়। বিএমইটির আওতায় এ পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় ৭০টির মতো কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। এদিকে বেসরকারি উদ্যোগেও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চলমান রয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিমাপ ও বিবেচনায় এ খাতে আমরা ঠিক কতটা সক্ষমতা অর্জন করেছি তা যেন মূল্যায়নের সময় এসেছে। বড় দাগে বললে এ খাতে এখনো অনেক অভ্যন্তরীণ সমস্যা বিদ্যমান। এখনো এ খাতে শর্তভঙ্গ করা, প্রতারণা, জাল-জালিয়াতির ঘটনা প্রত্যাশামাফিক কমানো সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমান প্রবাসীকল্যাণ ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি এবং সচিব ড. নমিতা হালদার এনডিসি এ খাতে আরও আস্থা, বিশ্বাস তৈরির সঙ্গে সঙ্গে প্রবাসীদের কল্যাণ, প্রতারণা বন্ধ, উপযুক্ত মজুরি আদায়, ঋণসুবিধা, দ্রুত ক্ষতিপূরণ প্রদান, বিদেশ -ফেরতদের পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা তৈরিতে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-সচিব দুজনকে দেখেছি দেশের বিভিন্ন জেলায় দক্ষতা বৃদ্ধি, সচেতনতা তৈরিসহ ডিইএমও অফিস ও টিটিসির সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে। সর্বশেষ আমরা দেখেছি, ১৩ মে প্রবাসীকল্যাণ সচিব চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলায় ডিইএমও এবং টিটিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ জেলা প্রশাসক, সাংবাদিক ও সুশীলসমাজের ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মতবিনিময় করছেন।

আমাদের রেমিট্যান্সের বড় উৎস প্রবাসী আয়। কিন্তু শুধু এ কথা বলে আত্মতুষ্টি নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। এ খাতকে এগিয়ে নেওয়ার কৌশলগুলোও বাস্তবায়ন করতে হবে। এ খাতের সঙ্গে যারা জড়িত বিশেষ করে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এখনো তাদের প্রাপ্য মর্যাদার লড়াইয়ে লিপ্ত। অথচ এ খাত আরও সমৃদ্ধ হতো যদি সরকার রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর কর্মদক্ষতার পুরস্কারের প্রবর্তন করত। অথচ আজ পর্যন্ত এ ধরনের কোনো সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। শিগগিরই এ খাতে কর্মদক্ষতা প্রণোদনা ব্যবস্থাও চালু করা প্রয়োজন। এটা করা হলে এ খাতের যেসব পরিশ্রমী উদ্যোক্তা রয়েছেন তারা আরও বেশি উৎসাহিত হতেন। সবশেষে বলব এ খাতকে কোনোভাবেই উপেক্ষা করার কিছু নেই। সবাই মিলে যদি এ খাতকে আরও এগিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে আরও উপকৃত হবে।

তাই সমাগত অর্থ বাজেটে অভিবাসন খাতে অবশ্যই বেশি বরাদ্দের দাবি জানাব। বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে ব্যাপক হারে স্কিল্ড কর্মী তৈরি, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তাসহ প্রবাস-ফেরত কর্মীদের কল্যাণে আরও পরিকল্পনাভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি দুই পর্যায়ের স্টেকহোল্ডারদের সক্ষমতা বৃদ্ধির কর্মকৌশলও এগিয়ে নিতে হবে। এ খাতের সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা গেলে প্রবাসী আয় আরও বাড়বে বই কমবে না। প্রবাসী আয় বাড়লে তা জিডিপিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। সুতরাং অভিবাসন খাতকে কোনোভাবেই উপেক্ষা-অবহেলা নয়, বরং এগিয়ে নেওয়ার সুউদ্যোগ গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করছি। সে কারণেই এ খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সমাগত বাজেটে আরও বেশি বরাদ্দ এখন সময়ের দাবি।

লেখক : শ্রম-অভিবাসন বিশ্লেষক।

ইমেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর