সোমবার, ২৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

হুন্ডি ব্যবসায় আঘাত হানুন

কড়া আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিন

জঙ্গি ও মাদক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কড়া আঘাত হানার পর হুন্ডির বিরুদ্ধে আঘাত হানার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। জঙ্গি ও মাদকের মতো এক্ষেত্রেও জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হবে। দেশের অর্থনীতির জন্য সর্বনাশ ডেকে আনছে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচারের ঘটনা। বিদেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে স্বজনদের কাছে যে রেমিট্যান্স পাঠান তার এক বড় অংশ আসছে হুন্ডির মাধ্যমে। ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে টাকা না আসায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশির সংখ্যা বাড়লেও রেমিট্যান্স আয় বাড়ার বদলে কমছে। ফলে দেশে দেখা দিয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা বিশেষত ডলারের সংকট। দেশের অর্থনীতি তেজি অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হয়ে যাওয়ায় টাকার বিপরীতে ডলারের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ব্যাংকগুলো আমদানিকারকদের চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহে হিমশিম খাচ্ছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক অর্থ পাচারবিরোধী সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির প্রতিবেদন অনুসারে, শুধু ২০১৪ সালেই বাংলাদেশ থেকে আরও প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। ২০১৩ সালে দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ৯৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার, বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ৭৭ হাজার কোটি টাকা। এভাবে গত ১০ বছরে দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে ছয় লাখ ছয় হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সর্বোচ্চ অর্থ পাচারের দিক থেকে বিশ্বের ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ২৬তম। বৈদেশিক মুদ্রানীতি আইন অনুযায়ী, বিদেশ থেকে দেশে অর্থ পাঠাতে হলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠাতে হয়। আর বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাঠাতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের আগাম অনুমতি নিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। কিন্তু এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটছে। যা অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে অবৈধ পথে রেমিট্যান্স আসাকে। এ জন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তারপরও পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন ঘটেনি। কারণ হুন্ডি ব্যবসায়ীরা নানা কৌশলে তাদের অপতৎপরতা চালাচ্ছে। হুন্ডি বন্ধে কড়া নজরদারির বিকল্প নেই। দেশে পরিবারের সদস্যদের কাছে প্রবাসীরা যে অর্থ পাঠান তা যাতে ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে আসে তা নিশ্চিত করতে হবে। হুন্ডি ব্যবসা বন্ধে কড়া আইন প্রণয়নের কথা ভাবা যেতে পারে।

সর্বশেষ খবর