মঙ্গলবার, ৫ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

ব্যাংক ঋণের নামে লুটপাট

এই নৈরাজ্যের অবসান হোক

খেলাপি ঋণ নামের আপেক কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না। খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের হুম্বিতম্বি বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরোতে পরিণত হচ্ছে। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা; যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ২২ হাজার ১৩৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। মার্চ, ১৮ শেষে রাষ্ট্রীয় খাতের সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ঋণ বিতরণ করেছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ। খেলাপি ঋণ আদায় করতে না পারায় ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দিতে পারছে না। মুনাফায় ধস নামায় বেশকিছু ব্যাংক গভীর সংকটে পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ চলে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অবস্থা একসময় মোটামুটি ভালো থাকলেও সেখানেও চলছে হরিলুটের ঘটনা। পরিচালকরা নিজেদের মধ্যে ঋণ ভাগাভাগি করায় সেখানেও বাড়ছে খেলাপির সংখ্যা। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে আছে নতুন প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকগুলো। মনে হচ্ছে এ ব্যাংকগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে লুটেপুটে খাওয়ার জন্য। ব্যাংকিং খাতের বেপরোয়া ঋণ খেলাপের কারণে দেশে শিল্প স্থাপনে বড় আকারের ঋণ পাওয়া দায় হয়ে পড়েছে। কর্মসংস্থানের সুযোগও সীমিত হয়ে পড়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত তাদের একাংশের মধ্যে সততার সংকট থাকায় হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেও লুটেরারা নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারছে। সরকারের সুনামও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে ব্যাংক লুটেরা দস্যুদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নিতে পারার কারণে। ব্যাংকে যে টাকা সঞ্চিত থাকে তার মালিক সাধারণ মানুষ। এ অর্থ লুটপাট বন্ধে সরকারকে অবশ্যই কড়া হতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর