শুক্রবার, ৮ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইতিকাফের হিকমত ও ফজিলত

মাওলানা মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান

ইতিকাফের হিকমত ও ফজিলত

ইতিকাফ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বিচ্ছিন্নতা, নিঃসঙ্গতা, অবস্থান ইত্যাদি। শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় কোনো ব্যক্তির জুমার মসজিদের কোণে অবস্থান করা। এ অর্থে ইতিকাফ সব সময় করা বৈধ। তবে রমজান মাসে ইতিকাফ করা সর্বোত্তম।

রসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। এটি এমন একটি নির্জনতা অবলম্বন, যার মাধ্যমে আমরা দুনিয়ার সব ধরনের কাজ ও ব্যস্ততা থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মুক্ত হয়ে মহান রবের একান্ত সান্নিধ্য ও সন্তুষ্টি লাভের জন্য নামাজ, রোজা, কোরআন তিলাওয়াত, ইসলামের জ্ঞান চর্চা ইত্যাদিতে লিপ্ত থাকতে পারি। ইতিকাফের হিকমত হচ্ছে আল্লাহ রব্বুল আলামিনের একান্ত সান্নিধ্য অর্জন করা। তা ছাড়া রমজান মাসে যে শবেকদর আছে তা অর্জনের চেষ্টায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা। যেহেতু রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকে কদরের রাত তালাশ কর।’ বুখারি ও মুসলিম। সুতরাং পরিপূর্ণভাবে কদরের রাতের সৌভাগ্য অর্জন করতে হলে রমজানের শেষ দশকে আমাকে আপনাকে রাত জাগরণ করতে হবে; যা ইতিকাফের মাধ্যমে করা অত্যন্ত সহজ ও বুদ্ধিমানের কাজ। আল্লামা হাফিজ ইবনে রজব (র.) বলেছেন, ইতিকাফের আসল উদ্দেশ্য সৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে স্রষ্টার সঙ্গে সম্পর্ক কায়েম করা। আল্লামা ইবনে কাইয়েম (র.) বলেছেন, ইতিকাফের উদ্দেশ্য মহান আল্লাহর দিকে মনকে নিবিষ্ট করা, তাঁর সান্নিধ্যের আশায় নির্জনে বাস করা যাতে সবকিছু থেকে মুক্ত হয়ে মন শুধু মহান রবের প্রতি নিমগ্ন থাকে।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা ইতিকাফ করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত হলাম; যা এর ফজিলতের প্রতিও ইঙ্গিত করছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এক দিন ইতিকাফ করে, আল্লাহ সেই ব্যক্তি ও দোজখের মাঝে তিন খন্দক পরিমাণ দূরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন।’ তাবারানি ও হাকেম। অন্য এক হাদিসে রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের ১০ দিন ইতিকাফ করবে তা দুটি হজ ও দুটি ওমরার সওয়াবের সমান হবে।’ বায়হাকি।

ইবনে মাজাহ বর্ণিত হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইতিকাফকারী গুনাহ থেকে বিরত থাকে। তাকে সব নেক কাজের কর্মী বিবেচনা করে বহু সওয়াব দেওয়া হবে।’ আল কোরআনেও ইতিকাফের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমার ঘরকে তাওয়াফ ও ইতিকাফকারীদের জন্য পবিত্র রাখো।’ সূরা বাকারা : ১২৫। ইতিকাফের এ রকম মর্যাদা ও ফজিলতের কারণে রসুল (সা.) প্রতি রমজানে ১০ দিন এবং ইন্তেকালের বছর ২০ দিন ইতিকাফ করেন। অথচ তিনি ছিলেন আল্লাহর প্রিয় হাবিব ও নবী-রসুলদের নেতা। আল্লাহতায়ালা তাঁর জীবনের আগের ও পরের সব ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দিয়েছেন। আমরা তাঁর পাপী উম্মত। আমাদের কী করা উচিত? অথচ আমরা কী করছি! সপ্তাহের প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার যখন আমার আপনার আমল রসুলের সামনে পেশ করা হয় তখন তাঁর চেহারা মোবারক মলিন হয়ে যায়। এ উম্মতের জন্যই কি তিনি জীবনের অন্তিম মুহূর্তে কান্না করেছেন? আর এ উম্মতের জন্যই কি তিনি আখেরাতের সেই ভয়ানক দিনে উম্মতি উম্মতি বলে প্রভুর শাহি দরবারে ফরিয়াদ করবেন? যেদিন মা-বাবা তাদের আদরের সন্তান থেকে, স্বামী তার প্রিয়তমা স্ত্রী থেকে, ভাই তার অন্য ভাই থেকে পলায়ন করবে। কেউ কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে না। সবাই নিজেকে বাঁচাও নীতি অবলম্বন করে পাগলের মতো ছোটাছুটি করতে থাকবে। সম্মানিত পাঠক! দুই চোখ বন্ধ করে এক মিনিটের জন্য একটু ভাবুন। আমার আপনার নবী মুহাম্মদ (সা.) আমাদের কেমন জীবন গঠনের জন্য বলেছেন, আমরা কেমন জীবন গঠন করে চলেছি?

আসুন, এ রমজানকে জীবনের সর্বশেষ রমজান মনে করে আমার আপনার নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পদাঙ্ক অনুসরণে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করি। ইতিকাফের পরিপূর্ণ ফজিলত অর্জনের জন্য কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি—

ক. বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া।

খ. কোরআন তিলাওয়াত করা।

গ. অর্থসহ কোরআন ও হাদিস পড়া।

ঘ. তাসবিহ পড়া।

ঙ. অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা।

চ. গিবত, পরনিন্দা থেকে মুক্ত থাকা।

ছ. কারও সঙ্গে ঝগড়া বা কাউকে গালমন্দ না করা।

জ. মসজিদের এক পাশে অবস্থান করা।

পরিশেষে আল্লাহ রব্বুল আলামিনের দরবারে ফরিয়াদ— রসুলের পদাঙ্ক অনুসরণে আমাদের সুন্নত মোতাবেক ইতিকাফ করার তাওফিক দান কর এবং তোমার একান্ত নৈকট্য আমাদের নসিব কর।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

Emil : [email protected]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর