শুক্রবার, ৮ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

জুমার শ্রেষ্ঠত্ব

মুফতি তারিকুল ইসলাম আল আযহারী

জুমার শ্রেষ্ঠত্ব

১. হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, একদিন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো— শুক্রবারকে জুমার দিন বলা হয় কেন? তিনি বললেন, কেননা সেই দিনে তোমাদের পিতা আদম (আ.)-এর কাদামাটি একত্র করা হয়েছে, জুমার দিনেই বিশ্ব ধ্বংস সাধন ও  জীবকুলের পুনরুত্থান হবে। জুমার দিনেই কঠোরভাবে কাফিরদের পাকড়াও করা হবে এবং জুমার শেষ দিন মুহূর্তের মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কেউ তখন আল্লাহকে ডাকে আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দেন। আহমাদ।

এতে কোনো সন্দেহ নেই, প্রত্যেক উম্মাতের জন্য আল্লাহতায়ালা এমন একটা দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন যে দিনে তারা একত্রিত হয়ে তাঁর ইবাদত করবে খুশির পর্ব হিসেবে। এই উম্মতের জন্য ওইদিন হচ্ছে শুক্রবার। কেননা, ওটা হচ্ছে ষষ্ঠ দিন, যেদিন আল্লাহতায়ালা সৃষ্টিকার্য পরিপূর্ণতায় পৌঁছিয়ে দেন এবং সব মাখলুকের সৃষ্টি সমাপ্ত হয়। আর তিনি তাদের প্রয়োজনীয় সব নিয়ামত দান করেন। হাফিজ আবদোবনো হুমাইদ ও হাফিজ আবদুর রাজ্জাক প্রসিদ্ধ তাবিয়ি ইবনে শিরিন থেকে বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরত করা ও জুমার নামাজের হুকুম আসার আগে একবার মদিনাবাসী সমবেত হলে আনসাররা বলেন, ইহুদিরা প্রতি সপ্তাহে একদিন একত্রিত হয় এবং খ্রিস্টানরাও একদিন সমবেত হয়। সুতরাং আমাদেরও উচিত কোনো একদিন জমা হয়ে আল্লাহর জিকির ও শুকর আদায় করা। অতঃপর এর জন্য আনসাররা শুক্রবার দিনটিকে ধার্য করে এবং আসআদ ইবনে যুরারার বাড়িতে জমায়েত হয়। তিনি সবাইকে নিয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়ান এবং কিছু ওয়াজ নসিহত করেন। ফলে লোকদের জমায়েত হওয়ার কারণে ওই দিনটির নাম জুমার দিন অর্থাৎ জমায়েতের দিন নামে অভিহিত হয়।

বর্ণিত আছে, মূসা (আ.)-এর ভাষায় বনি ইসরাইলের জন্য এ দিনটিকেই নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু তারা এদিন থেকে সরে গিয়ে শনিবারকে গ্রহণ করে। তারা শনিবারকে এ হিসেবে গ্রহণ করে, শুক্রবারে সৃষ্টিকার্য সমাপ্ত হয়েছে। শনিবারে আল্লাহতায়ালা কোনো জিনিস সৃষ্টি করেননি। সুতরাং তাওরাত অবতীর্ণ হলে তাদের জন্য ওই দিনকেই অর্থাৎ শনিবারকেই নির্ধারণ করা হয়। আর তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়, তারা যেন দৃঢ়তার সঙ্গে ওই দিনকে ধারণ করে। তবে এ কথা অবশ্যই বলে দেওয়া হয়েছিল যে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই আসবেন তখনই সবকিছু ছেড়ে দিয়ে শুধু তাঁরই অনুসরণ করতে হবে। ওই কথার ওপর তাদের কাছে ওয়াদাও নেওয়া হয়। সুতরাং শনিবারের দিনটি তারা নিজেরাই বেছে নিয়েছিল এবং শুক্রবারকে ছেড়ে দিয়েছিল। ইবনে কাসির।

ঈসা (আ.)-এর যুগ পর্যন্ত তারা এর ওপরই থাকে। বলা হয়েছে যে, পরে ঈসা (আ.) কয়েকটি মানসুখ হুকুম ছাড়া তাওরাতের শরিয়তকে পরিত্যাগ করেননি এবং শনিবারের হিফাজত তিনি বরাবরই করে এসেছিলেন। যখন তাঁকে উঠিয়ে নেওয়া হয় তখন তার পরে কুসতুনতিন বাদশাহর যুগে শুধু ইহুদিদের হঠকারিতার কারণে ওই বাদশাহ পূর্ব দিককে তাদের কিবলা নির্ধারণ করেন এবং শনিবারের পরিবর্তে রবিবারকে ধার্য করে নেন।

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমরা দুনিয়ায় সর্বশেষে আগমনকারী, আর কিয়ামতের দিন আমরা সবারই আগে থাকব। তাদের আল্লাহর কিতাব আমাদের আগে দেওয়া হয়েছিল এবং এ দিনটিকেও আল্লাহতায়ালা তাদের ওপর ফরজ করেছিলেন। কিন্তু তাদের মতবিরোধের কারণে তারা তা নষ্ট করে দিয়েছে। আল্লাহতায়ালা আমাদের হেদায়াত করেছেন। সুতরাং এসব লোক আমাদের পেছনেই রয়েছে। ইহুদিরা এক দিন পরে ও খ্রিস্টানরা দুই দিন পরে। বুখারি।

২. হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতকে আল্লাহতায়ালা জুমার দিন থেকে বঞ্চিত করেছেন। ইহুদিদের জন্য হলো শনিবারের দিন এবং খ্রিস্টানদের জন্য রবিবারের দিন। আর আমাদের জন্য হলো শুক্রবারের দিন। সুতরাং এই দিক দিয়ে যেমন তারা আমাদের পরে রয়েছে কিয়ামতের দিনও তারা আমাদের পেছনেই থাকবে।

দুনিয়ার হিসাবে আমরা পেছনে, আর কিয়ামতের হিসাবে আগে। অর্থাৎ পুরো মাখলুকের মধ্যে সর্বপ্রথম ফয়সালা হবে আমাদের। (মুসলিম)। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাতটি ধরে বলেন, আল্লাহতায়ালা জমিন, আসমান এবং এ দুয়ের মধ্যস্থিত সবকিছু সৃষ্টি করার পর সপ্তম দিবসে আরশের ওপর অধিষ্ঠিত হন। নাসাই।

৩. হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর জুমা পেশ করা হয়, তখন হজরত জিবরাইল (আ.) তাঁর কাছে এলেন, তাঁর হাতে ছিল একটি সাদা আয়নার মতো জিনিস। যার মাঝখানে ছিল কালো দাগের মতো একটি বিন্দু। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এটা কী হে জিবরাইল! তিনি বললেন, এটি জুমা। আপনার রব আপনার ওপর একে পেশ করেছেন; যাতে আপনার ও আপনার কওমের ঈদ হয়। তারগিব ওয়াত তারহিব।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

www.muftitariqulislam.com

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর