মঙ্গলবার, ১৯ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

কোটা নিয়ে খোঁটা এবং অতঃপর

আমিনুল ইসলাম মিলন

কোটা নিয়ে খোঁটা এবং অতঃপর

কোটা নিয়ে খোঁটাখুঁটি নতুন কিছু নয়। জন্মলগ্ন থেকেই এর প্রতি কিছু মানুষের বিতৃষ্ণা ছিল। সত্যি বলতে কি, জেলা কোটার কারণে আমরা নোয়াখাইল্লারাও কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি— এমন ধারণা নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রামবাসীর মতো আমারও হয়েছিল। কিন্তু তা ভাবনা-ধারণার পর্যায়েই ছিল। সম্প্রতি এটি মৌখিক খোঁটাখুঁটি, ভাবনা-ধারণার বদলে ঝড়ের রূপ নেয়। অকাল কালবৈশাখী হানা দেওয়ার আগেই দেশজুড়ে কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক কালবৈশাখীর রূপ ধারণ করে। ঝড়ের তাণ্ডবে স্তব্ধ হয়ে পড়ে গোটা রাজধানী। রাতে তা আরও গতি সঞ্চার করে তীব্র বেগে হানা দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের বাসভবনে। লণ্ডভণ্ড করে দেয় তার বাসভবন। নিরীহ উপাচার্য তখন পরিবার-পরিজন নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত-অবরুদ্ধ। এদিকে এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে কাদা ছোড়াছুড়ি, তাপ-উত্তাপ নির্গমন শুরু হয়। ইঞ্চি-ঘেরের রঙিন বাক্সগুলো বহুদিন পরে একটি ব্রেকিং নিউজ পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। বকবকানি মাস্টারদেরও তাই পোয়াবারো। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে, স্বাধীন বাংলাদেশের খোদ রাজধানীতে ‘আমি রাজাকার’ লেখা গেঞ্জি পরিহিত বীর-ছাত্রদের সচিত্র বিবরণী পত্রপত্রিকা টেলিভিশনের মাধ্যমে গোটা জাতি প্রত্যক্ষ করেছে। এতে কতজন দুঃখ-বেদনায় কাতর হয়েছেন, সে হিসাব জানিনে। তবে আনন্দে আত্মহারা হয়েছে ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি, এতে সন্দেহ নেই। মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের পূর্বক্ষণে এ কীসের আলামত, ভবিষ্যৎই তা ভালো বলতে পারে। তবে কোটা নিয়ে এ যে তুলকালাম, সত্যিকার অর্থে কোটা কী, কেন, কার জন্য এবং বাংলাদেশের ‘কোটা’ পরিস্থিতি কেমন তা আন্দোলনকারীদের কজন সঠিকভাবে জানে। কোটা একটি বাংলা শব্দ, এর অর্থ সংরক্ষণ। বাংলাদেশে যা কোটা, ভারতে তা Reservation, আমেরিকায় সেটা affirmative action। সবকিছুরই মূলে একই তত্ত্ব— পশ্চাৎপদ শ্রেণি-জনগোষ্ঠীকে বিশেষ সুবিধা প্রদান। ভারতীয় সংবিধানের প্রথম সংশোধনী আনা হয় দলিত শ্রেণির জন্য কোটা সংরক্ষণ বিষয়ে। বাংলাদেশ ভাগ্যবতী, এখানে দলিত-মথিত শ্রেণি নেই। তবে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জয়লাভ করে যে রাষ্ট্রের জন্ম, সে রাষ্ট্রে যুদ্ধে জয়ী বীরদের জন্য কিছু একটা করতে হবে— এ ভাবনা থেকেই ১৯৭২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধা কোটার জন্ম। পাকিস্তান আমলে তুলনামূলক পশ্চাৎপদ ছিল বিবেচনায় স্বাধীন বাংলাদেশে জেলা কোটার জন্ম। আর মহিলা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, শারীরিকভাবে অক্ষম জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা নির্ধারণ একটি বিশ্বস্বীকৃত ধারণা। সেই আদিম যুগেও শিশু, নারী, বৃদ্ধ ও ফসলি জমিন যুদ্ধের আওতাবহির্ভূত ছিল। এক ধরনের ছাড় দেওয়া হতো এদের। এই ছাড় দেওয়া ধারণার আধুনিক রূপ কোটা। কোটা, সংরক্ষণ, ছাড় দেওয়া, বিশেষ বিবেচনা প্রভৃতি সব দেশেই স্থান-কাল-পাত্র ভেদে বিবেচিত হয়। হঠাৎ স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরে এ নিয়ে কেন বাংলাদেশ উত্তপ্ত হলো, তার কারণ অনুসন্ধান খুবই জরুরি।

কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পেছনে পরোক্ষভাবে যে একটি শক্তিশালী মাস্টারমাইন্ড কাজ করেছে, তা বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক শিক্ষকের সঙ্গে প্রবাসী এক রাজনৈতিক নেতার কথোপকথনে তা প্রমাণিত। কোটার কোন অংশটি বাদ দেওয়ার জন্য এ আন্দোলন? মহিলা কোটায় ১০% কি এ মুহূর্তে বাদ দেওয়া যাবে? ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৫% শতাংশ কি বাদ দেওয়া যাবে? শারীরিকভাবে অক্ষমদের ১% শতাংশ বাদ দেওয়া সম্ভব? তাহলে থাকল জেলা কোটা ১০% ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০%। যেহেতু বাংলাদেশে বর্তমানে চরম পশ্চাৎপদ এলাকা বা জনগোষ্ঠী নেই সেহেতু জেলা কোটা ১০% বাদ দেওয়া যায়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা কোটা কি এ মুহূর্তে বাদ দেওয়া উচিত? এতই অকৃতজ্ঞ হয়ে গেল বীর বাঙালি! যারা নিজেদের জীবন উজাড় করে দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, যাদের জন্য এ রাষ্ট্র এতদিন কিছুই করতে পারেনি— সে রাষ্ট্রে এখনই কি তারা অপাঙেক্তয় হয়ে গেল? এ প্রশ্নটিই এখন মূল বিবেচ্য। মনে রাখতে হবে, মুক্তিযোদ্ধারা কোনো কিছু পাওয়ার জন্য যুদ্ধ করেননি। কৃতজ্ঞ জাতি তাদের এই সামান্য উপহার দিয়ে নিজেদের কৃতার্থ করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান অনিঃশেষ। এ অবদানের স্বীকৃতি চির বহমান থাকবে। এটাই জাতির প্রত্যাশা।

কিন্তু বাঙালি জাতির দুর্ভাগ্য, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই এসব বীর  মুক্তিযোদ্ধাকে বিতর্কিত, সমালোচিত ও অগ্রাহ্য করার এক গভীর চক্রান্ত দানা বেঁধে ওঠে। গত ৪৬ বছরে বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধা নিধন চলেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এ বিরাগ কেবল দেশ স্বাধীন করতে যুদ্ধে যাওয়া নয়, বরং এর শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ৯০% গ্রামের মানুষ। অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত মিলিয়ে কৃষক শ্রমিক, গরিব পরিবারের সন্তান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর হঠাৎ করে সামাজিক নেতৃত্ব যখন মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে কিছুদিনের জন্য হলেও চলে যায় মূলত তখনই এ দ্বন্দ্বের শুরু। সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসের এ চড়াই-উতরাইয়ে অনেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেন। একশ্রেণির বিভ্রান্ত ও অসৎ মুক্তিযোদ্ধার অপকর্ম এ ক্ষেত্রে তাদের অস্ত্র হয়ে ওঠে। সেই ধারাবাহিকতার আজও অবসান হয়নি। তাই শহুরে-আধাশহুরে মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্তের দৃষ্টিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা অস্বস্তিকর, অপছন্দনীয়। শহুরে ছেলেরা যেখানে চাকরি পাচ্ছে না, সেখানে শুধু মুক্তিযোদ্ধার সন্তান-নাতি-পুতিরা গ্রামে থেকে চাকরি পাবে, তা মেনে নেওয়া কষ্টকর। এ ছাত্র আন্দোলনের পেছনে এই মনস্তত্ত্ব যে পরোক্ষভাবে ক্রিয়াশীল ছিল না, এ গ্যারান্টি কে দেবে? তদুপরি বিভক্ত রাজনীতির কুটিল হাওয়া এ আন্দোলনে ঘৃতাহুতি দেয়। কোন দেশে কোটা নেই? বিভিন্ন নামে, বিভিন্ন আবরণে তা প্রায় সব দেশেই বিস্তৃত। প্রতিবেশী ভারতে মেধা কোটা ৫০%, বাকি কোটা পশ্চাৎপদ শ্রেণির জন্য সংরক্ষিত। শিডিউল কাস্ট ১৫%, শিডিউল ট্রাইব ৭.৫% এবং অন্যান্য পশ্চাৎপদ শ্রেণি ২৭%। পাকিস্তানে মেধা কোটা মাত্র ৭.৫ শতাংশ, বাকি ৯২.৫% বিভিন্ন প্রদেশের জন্য সংরক্ষিত। এর মাঝে ১০% মহিলা কোটা বিদ্যমান। শ্রীলঙ্কায় ১৯৭৫ সালে মহিলাদের জন্য ২৫% কোটা নির্ধারণ করা হয়। ফলে ২০১৭ সালে এসে দেখা যায়, শ্রীলঙ্কায় সরকারি চাকরিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ প্রায় ৬৪%।

আসলে কোটায় বিভাজন সমস্যা নয়, সমস্যা অন্যখানে। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে কার্যকর নতুন পে-স্কেল সরকারি চাকরিতে প্রবেশের আগ্রহকে তীব্র করে তোলে। এরই সঙ্গে যোগ হয়েছে সরকারি চাকরিজীবীদের প্রদত্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা। উপসচিব/পরিচালক পর্যায় থেকে গাড়ি ঋণ, প্রতি মাসে জ্বালানি ও গাড়িচালকের বেতন বাবদ মোটা অর্থ, ভবিষ্যতে ফ্ল্যাট/জমি কেনার জন্য বিপুল ঋণসহ বিভিন্ন প্রণোদনা ক্রমান্বয়ে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের আকাঙ্ক্ষাকে তীব্র করে তুলছে। এর বিপরীতে বেসরকারি চাকরির অনিশ্চয়তাও একটি বড় কারণ। উচ্চপ্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে বেসরকারি চাকরিও সীমিত হয়ে আসছে। তা ছাড়া এ দেশে এখনো করপোরেট কালচার পুরোদমে চালু হয়নি। এমন অনেক প্রতিষ্ঠানের নাম জানি যাদের চাকরি কচুপাতার পানির চেয়েও নড়বড়ে। ফলে এ মুহূর্তে বাংলাদেশে নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে একটি সরকারি চাকরি সবার কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতি বছর চাকরিপ্রত্যাশীর সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। অন্যদিকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও অদক্ষতার কারণে বিসিএসসহ সব ক্ষেত্রে বিপুলসংখ্যক পদ শূন্য থাকছে। জানুয়ারি ২০১৮-তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বর্তমানে বিভিন্ন শ্রেণির ৩ লাখ ৫৯ হাজার ২০১টি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির ৪৮ হাজার ২৪৬টি, দ্বিতীয় শ্রেণির ৫৪ হাজার ২৯৪টি, তৃতীয় শ্রেণির ১ লাখ ৮২ হাজার ৭৩৭টি এবং চতুর্থ শ্রেণির ৭৩ হাজার ৯৮৪টি পদ শূন্য রয়েছে। বিগত ১০টি বিসিএস পরীক্ষায় কোটা পূরণ না হওয়ার কারণে প্রথম শ্রেণির প্রায় ৬ হাজার পদ শূন্য থাকে। যেমন ২৮তম বিসিএসে ৮২১টি, ২৯তম বিসিএসে ৮১৬টি, ৩০তম বিসিএসে ৭০৩টি, ৩১তম বিসিএসে ৮১১টি, ৩৩তম বিসিএসে ৫৯২টি, ৩৪তম বিসিএসে ৭২৩টি, ৩৫তম বিসিএসে ৩৩৮ ও ৩৬তম বিসিএসে ৩৬৬টি পদশূন্য থাকে। এমনকি বিশেষ বিসিএস হিসেবে ৩২তম পরীক্ষায়ও ১ হাজার ১২৫টি পদ শূন্য থাকে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮১৭টি, মহিলা কোটায় ১০টি এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটায় ২৯৮টি পদ শূন্য রয়েছে। যদিও এ ক্ষেত্রে সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছিল যে, সব বেসরকারি/আধাসরকারি/স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত ৩০% কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে কোটায় শূন্য পদসমূহ মেধা তালিকার শীর্ষে অবস্থানকারী প্রার্থীদের দ্বারা পূরণ করা  যাবে। [স্মারক নম্বর সংস্থাপন মন্ত্রণালয়, বিধি-১ শাখা কর্তৃক নম্বর প্রথম (বিধি-১) এস-১৪/৯৯-৩৬ (২৫০) তারিখ ০৯-০২-২০০৩]। এ নির্দেশনাটি যদি পুরোপুরি কার্যকর হতো তাহলে মেধা তালিকায় চাকরিতে প্রবেশের সংখ্যা অনেক বেশি হতো।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সরকারের এ প্রজ্ঞাপনটি অনেকেই অনুসরণ করেননি। ২০০৭-০৮ সালে সাধারণ বীমা করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) থাকাকালে এক নিয়োগের ক্ষেত্রে এটি নিজে প্রত্যক্ষ করেছি। সংশ্লিষ্ট অনেকেই এটি মানতে নারাজ ছিলেন। পরে তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ফিরোজ মিয়াকে বোর্ডসভায় উপস্থিত করে ওই প্রজ্ঞাপনের সারবস্তু বিশ্লেষণ করে নিয়োগদান সম্পন্ন করি। যদি সরকারি প্রতিটি কার্যালয়ে এটি অনুসৃত হতো তাহলে আজকের জটিলতা সৃষ্টি হতো না। কিন্তু একশ্রেণির হীনমনা, ভীরু আমলার কারণে সরকারি দফতরে পদ খালি থাকছে। যদি এটি পুরোপুরি অনুসরণ করা হতো তাহলে চূড়ান্তভাবে মেধা কোটায় চাকরিতে প্রবেশের সংখ্যা দাঁড়াত ৭০-৮০% শতাংশ। পত্রিকায় দেখলাম, গত চার-পাঁচ বছরে মেধা কোটায় প্রবেশের সংখ্যা ৪৫ শতাংশ, এর বিপরীতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৬০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে। অন্যদিকে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের একই শাখা থেকে স্মারক নম্বর ০৫.১৭০.০২২.০৭.০১.০২০.২০১০-৫১ তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ জারিকৃত অন্য এক প্রজ্ঞাপনে ঠিক বিপরীত সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়। প্রজ্ঞাপনে ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০০৩ তারিখের প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করা হয় এবং সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য নির্ধারিত কোটা পূরণ করা সম্ভব না হলে ওই পদগুলো খালি রাখতে হবে বলে সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়। নিঃসন্দেহে এটি সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না। একবার পদ সংরক্ষণ করা হলো, আবার সংরক্ষিত পদে প্রার্থী না পাওয়া গেলে সে শূন্যপদও পুনরায় সংরক্ষণ করা হবে— এ সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়, বিশেষ করে যে দেশে বেকারের সংখ্যা সীমাহীন, বিশেষ করে শিক্ষিত বেকার। ফলে চাকরিপ্রত্যাশীর মাঝে অসন্তোষ বাড়তে থাকে; যার বহিঃপ্রকাশ কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কিন্তু এ আন্দোলন যখন উপাচার্যের বাড়ি আক্রমণ করে, ‘আমি রাজাকার’ গেঞ্জি পরে— তখন গোটা আন্দোলনই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়।

তাই সরকারকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় মেধা, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে হবে। এখানে  ভাবাবেগ বা অভিমানের কোনো স্থান নেই। প্রয়োজন বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ। মন্ত্রী, এমপিসহ সরকারি দলের নেতাদের বাকসংযম বড়ই জরুরি। আশা করি অনেক বড় বড় সমস্যার মতো এরও সুষ্ঠু ও সর্বজনগ্রাহ্য সমাধান হবে। এ লক্ষ্যে নিয়োগ পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে পদ সংরক্ষণের ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১০-এর প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করা যেতে পারে। বরং মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ সব কোটায় যদি যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া যায়, তাহলে কোটার অবশিষ্ট পদগুলো পুনরায় সম্মিলিত মেধা তালিকা (প্রথম মেধা কোটা বাদে) প্রণয়নপূর্বক পূরণ করা যেতে পারে। এজন্য ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০০৩-এর প্রজ্ঞাপনটি পুনর্বহাল করা যেতে পারে। তাহলে দেখা যাবে চূড়ান্ত অর্থে মেধার ভিত্তিতে চাকরিতে প্রবেশের সংখ্যা ৪৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭০-৮০ শতাংশ পৌঁছেছে।    

লেখক : সাবেক প্রধান তথ্য কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর