মঙ্গলবার, ১৯ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

শাওয়ালের ছয় রোজা

যুবায়ের আহমাদ

শাওয়ালের ছয় রোজা

ফরজ নামাজের কমতিগুলো পোষাতে যেমন নফল নামাজ রয়েছে তেমন ফরজ রোজার পরও শাওয়ালের সুন্নত রোজা রয়েছে। এ নফলসমূহ ফরজের ত্রুটিগুলোর ক্ষতি পূরণের জন্য। রোজাদার যদি অনর্থক বাক্যালাপ, কুদৃষ্টি প্রভৃতি কাজ থেকে সম্পূর্ণ বাঁচতে না পারে তাহলে তার রোজার পুণ্য কমে যায়। আর কমতি পুণ্য পূর্ণ করতেই শাওয়ালের ছয়টি রোজা।

শাওয়ালের ছয়টি রোজার মাধ্যমে রমজানের রোজা আদায়ের তাওফিকের শুকরিয়াও আদায় করা হয়। যখন কোনো বান্দার আমল আল্লাহতায়ালা কবুল করেন তখন তাকে অন্য একটি নেক আমলের তাওফিক দেন। সুতরাং এ রোজাগুলো রাখতে পারা রমজানের রোজা কবুলে হওয়ারও লক্ষণ। এ রোজাগুলো রাখলে সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে এ রোজা রাখতেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে (রা.) রাখার নির্দেশ দিতেন। হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল অতঃপর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল।’ মুসলিম। রমজানের ৩০টি রোজার সঙ্গে শাওয়ালের ছয়টি রোজা যুক্ত হলে মোট রোজার সংখ্যা হয় ৩৬টি। আর প্রতিটি পুণ্যের জন্য ১০ গুণ পুরস্কারের কথা উল্লেখ রয়েছে আল কোরআনে। তাহলে ৩৬টি রোজার ১০ গুণ হলো ৩৬০টি রোজার সমান (পুরস্কারের দিক থেকে)। অর্থাৎ সারা বছর রোজার সমান হবে। হজরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রমজানের রোজা ১০ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান। সুতরাং এ হলো এক বছরের রোজা।’ নাসায়ি।

সূরা আনয়ামের ১৬০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি একটি সৎ কাজ করল সে দশ গুণ সওয়াব পাবে। এ হিসেবে যে ব্যক্তি রমজানের এক মাস রোজা রাখল সে ১০ মাস রোজা রাখার সওয়াব পাবে। আর ছয়টি রোজার ১০ গুণে ৬০ দিন। অর্থাৎ দুই মাস। আর এ দুই মাস মিলে ১২ মাস রোজার সওয়াব। হজরত উবাইদুল্লাহ ইবনে মুসলিম আল কুরাইশি (রা.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, একদিন রসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব? তিনি বললেন, তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে। কাজেই তুমি সারা বছর রোজা না রেখে রমজানের রোজা রাখো এবং রমজান-পরবর্তী শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখো তাতেই সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে। তিরমিজি।

শাওয়ালের ছয়টি রোজার ব্যাপারে কিছু ভুল ধারণা সমাজে প্রচলিত। অনেকের ধারণা, এ রোজা শুধু মহিলারা রাখবে। না, তা নয়। এ রোজা পুরুষ-মহিলা সবার জন্যই সুন্নত। এক বছর রাখলে প্রতি বছরই রাখতে হবে এ ধারণাও ঠিক নয়। অনেকের ধারণা, শাওয়াল মাসে রমজানের কাজা রোজা আদায় করলেই এ ছয়টি রোজা আদায় হয়ে যাবে। এ ধারণাও ভুল।

লেখক : খতিব, বায়তুশ শফিক মসজিদ, বোর্ডবাজার

(আবদুল গনি রোড), গাজীপুর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর