মঙ্গলবার, ১৯ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রাকৃতিক সারল্য হারিয়ে যাচ্ছে

একসময় দেখা যেত ‘তিনটে শালিক ঝগড়া করে রান্নাঘরের চালে’। এ দৃশ্যপট বদলে যাচ্ছে দ্রুত— কি শহরে, কি গ্রামে। প্রতিদিনের চেনা চোখে সহসা বদলটা ধরা পড়ে না। হঠাৎ একদিন চোখ-কান খোলা রেখে চারপাশে চোখ বোলাতেই নজরে আসে কী যেন ছিল? কী যেন নেই? নেইটা আর আছে হয় না, হারিয়ে যায় চিরতরে। আগে ভোরবেলায় ঘুম ভেঙে শুনতে পেতাম পাখিদের কিচিরমিচির। কী বিচিত্র তাদের ডাক। একটা রাত পার করে সবাই যেন সমস্বরে বলতে চায় ‘ভোর হলো, দোর খোলো’, নতুন একটা দিন শুরু হচ্ছে। আমাদের গ্রামের একপাশে নদী আর একপাশে হাওর। কচুরিপানার ভেলা আছে কিন্তু পানকৌড়ির দেখা পাওয়া ভার। বছর দশেক আগেও দেখতাম পানকৌড়িদের ডুব, নেই নেই, হঠাৎ কিছু দূরে ভেসে ওঠা। ঠোঁটে একটা মাছ নিয়েই ফুড়ুৎ করে উড়ে গিয়ে নদীর পাড়ে বসা। গ্রামের চারপাশে রাস্তাঘাট হচ্ছে, নদীর ওপর ব্রিজ হচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে রাস্তার পাশের বড় বড় গাছ। গাছের সঙ্গেই হারিয়ে যাচ্ছে কত পাখি, নাম না জানা কত প্রাণীর সংসার। বদলে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য, পাল্টে যাচ্ছে ‘ইকো সিস্টেম’। কাঠবিড়ালির দৌড়ঝাঁপও ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ডোরাকাটা দাগের নরম প্রাণীটি লেজ উঁচিয়ে যখন এ-ডাল সে-ডাল করে বেড়ায় তখন অহংকার, গর্ব ঝরে পড়ে প্রতি পদে পদে। আমরা অহংকারী মানুষ আপন মদমত্ততায় কবেই ভুলে গেছি ছোট্ট কাঠবিড়ালির অহংকারটাকে। মাথা উঁচু করে চলতেই ভুলে গেছি আমরা। না হলে কবেই চোখে পড়ত চিল নেই, শকুন নেই, শামুকখোল নেই। ছোট্ট মেয়েটাকে পাখি চেনাতে হয় ছবির বই দেখে দেখে। কালে-ভদ্রে সুযোগ মেলে চাক্ষুষ করার।

    —আফতাব চৌধুরী।

সর্বশেষ খবর