শুক্রবার, ২২ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

অপবাদ থেকে দূরে থাকতে হবে

মুহম্মাদ ওমর ফারুক

অপবাদ থেকে দূরে থাকতে হবে

অনুমানের ওপর নির্ভর করে কারও নামে অপবাদ আরোপ করা একটি নিন্দনীয় কাজ। এটি নৈতিক দিক থেকে যেমন গর্হিত তেমন ধর্মীয় দিক থেকে পাপের কাজ বলে বিবেচিত।  রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অনুসারীদের শিক্ষা দিয়েছেন তারা যেন অন্যের দোষ অন্বেষণে ব্যস্ত না থাকে। এ ধরনের পরচর্চাকারীরা যে মানুষের পারিবারিক, সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় জীবনের জন্য বিড়ম্বনা ডেকে আনে তা একটি বাস্তবতা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সাবধান! তোমরা অলীক ধারণা-অনুমান থেকে বিরত থাক। কারণ ধারণা-অনুমান সবচেয়ে বড় মিথ্যা (বোখারি, মুসলিম)। বিলাল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত মুয়াবিয়া (রা.) আবু দারদাকে (রা.) লিখে পাঠালেন, আমাকে দামেস্কের দুর্নীতিবাজ লোকদের তালিকা লিখে পাঠান। আবু দারদা (রা.) উত্তরে বলেন, দামেস্কের দুর্নীতিবাজ লোকদের সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক? আমি কি তাদের চিনি? তার পুত্র বিলাল বললেন, আমি তাদের তালিকা তৈরি করে দিচ্ছি। অতএব, তিনি তাদের তালিকা প্রস্তুত করলেন। আবু দারদা (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কীভাবে জানতে পারলে? তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হলেই কেবল তোমার পক্ষে তাদের নাম জানা সম্ভব। অতএব, তালিকার শীর্ষে তোমার নাম লিখ। আবু দারদা (রা.) তাদের নামের এ তালিকা পাঠাননি (আদাবুল মুফরাদ)। ইসলামে অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ানো নিষিদ্ধ। এ হাদিসে উল্লিখিত ধরনের গতিবিধি কেবল অন্যের দোষত্রুটি অনুসন্ধানে আত্মতৃপ্তি লাভকারী লোকদেরই হতে পারে। যে কারণে আবু দারদা (রা.) নিছক অনুমানের ওপর ভিত্তি করে দুর্নীতিবাজদের তালিকা তৈরি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার সাহাবিদের কেউ যেন আমার কাছে অন্য কারও দোষ বর্ণনা না করে। কারণ আমি চাই, যখন আমি তোমাদের কাছে আসব তখন যেন পরিষ্কার হৃদয় মন দিয়ে আসতে পারি। (আবু দাউদ ও তিরমিজি থেকে রিয়াদুস সালেহীনে)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা কি জান গীবত কি? সাহাবিগণ বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রসুলই ভালো জানেন। তিনি বলেন, তোমার ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে। বলা হলো, আমি যা বললাম তা যদি তার মধ্যে থাকে, তবে আপনার কী মত? তিনি বলেন, যেসব দোষ তুমি বর্ণনা করেছ তা যদি তার মধ্যে থাকে তবে তুমি তার গীবত করলে। আর যদি সে দোষ তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তার প্রতি অপবাদ আরোপ করলে (সহিহ মুসলিম থেকে মিশকাতে)। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। একবার রসুলুল্লাহ (সা.) দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন, ‘নিশ্চয়ই এ দুই কবরবাসীকে আজাব দেওয়া হচ্ছে। তবে বড় কোনো অপরাধের কারণে নয়; এদের একজন প্রস্রাব থেকে নিজেকে হেফাজত করত না। অন্যজন গিবত করে বেড়াত।’ (বুখারি)। রসুলুল্লাহ (সা.) আরও ইরশাদ করেন, ‘গিবত জেনার চেয়েও নিকৃষ্ট।’ (মিশকাত)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোনো বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই (দুনিয়ায় থাকতেই) তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়; ওইদিন আসার আগে যেদিন তার কোনো দিনার বা দিরহাম কাজে আসবে না। সেদিন তার কোনো নেক আমল থাকলে, সেখান থেকে জুলুমের সমপরিমাণ কর্তন করে নেওয়া হবে। আর তার কোনো নেক আমল না থাকলে মজলুমের গুনার কিছু অংশ তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।’ (বুখারি)।

উপরোক্ত হাদিসসমূহের আলোকে আমাদের সবারই উচিত অনুমাননির্ভর বক্তব্য তথা গীবত-অপবাদ থেকে মুক্ত থাকা।  আল্লাহ আমাদের এ পাপ থেকে দূরে থাকার  তৌফিক দান করুন।

 

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর