সোমবার, ২৫ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

রমজান-পরবর্তী করণীয়

যুবায়ের আহমাদ

রমজান-পরবর্তী করণীয়

আত্মশুদ্ধির মাস রমজান বিদায় নিয়েছে এই তো সেদিন। আমাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এনে দিতে প্রশিক্ষণ কোর্স হিসেবে এসেছিল রমজান। রমজানের সে প্রশিক্ষণ জীবনভর ধরে রেখে সব ধরনের গোনাহের কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখতে পারলেই সে প্রশিক্ষণ হবে স্বার্থক। রমজান চলে গেলেও রমজান-পরবর্তী কিছু কাজ রয়ে গেছে। সেগুলো হলো :

১. নেক কাজগুলো চলমান রাখা। রমজানে যেসব অতিরিক্ত নফল আমল আমরা শুরু করেছিলম, সেগুলো যেন রমজানের পরই বন্ধ না হয়ে যায় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি যেসব গোনাহের কাজ ও বদভ্যাস রমজানে আমরা ত্যাগ করেছিলাম সেগুলো যে রমজানের পর আবার চালু না হয়ে যায় সেদিকেও গুরুত্বের সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে। চাইলেই যে আমরা বদভ্যাস ছেড়ে দিতে পারি এর অনন্য এক প্রমাণ ছিল রোজা। যেমন একজন ধূমপায়ী কিন্তু রোজা রাখতে গিয়ে রোজার দিনে ধূমপান করেননি। তার মানে তিনি চাইলেই ধূমপান ছেড়ে দিতে পারেন। তাই রমজান-পরবর্তী আমাদের উচিত নেক কাজগুলো চালিয়ে যাওয়া এবং গোনাহের কাজগুলো থেকে দূরে থাকা।

২. ছুটে যাওয়া রোজাগুলোর কাজা আদায় করা। কাজা হলো বকেয়া আদায়। অসুস্থ ব্যক্তি ও মুসাফিরের জন্য রমজানের রোজা ছাড়ার অনুমতি আছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসটিতে (রমজানে) উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে ব্যক্তি অসুস্থ বা মুসাফির হয় সে অন্যদিনে সংখ্যা পূরণ করে নেবে, আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজটাই চান, কঠিন করতে চান না।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)। মুসাফির এবং অসুস্থ ব্যক্তির মতো হায়েজ ও নেফাসগ্রস্ত নারীর জন্যও রোজা ছাড়ার অনুমতি আছে। তেমনি নিজের অথবা সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারীরও রোজা ছাড়ার অনুমতি আছে। এসব কারণে যারা রমজানের রোজা ছেড়েছেন তাদের সেই ছুটে যাওয়া রোজাগুলো আদায় করে নেওয়ার সবচেয়ে উপযোগী সময় হলো রমজান-পরবর্তী শাওয়াল মাস। বিলম্বে আদায় জায়েজ হলেও যত সম্ভব তাড়াতাড়ি আদায় করে নেওয়া উচিত। কেননা প্রয়োজনীয় সময় পেয়েও তা আদায় না করলে এমতাবস্থায় মৃত্যু হলে রোজা ছেড়ে দেওয়ার জন্য গোনাহগার হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হবে।

৩. রমজানের কাফফারা আদায় করা। কাফফারা হলো জরিমানা। মুসাফির এবং অসুস্থ ব্যক্তির মতো যাদের ইসলাম রোজা ছাড়ার অনুমতি দিয়েছে, তারা ব্যতীত অন্য কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার বা স্ত্রী সম্ভোগের মাধ্যমে একটি রোজাও ছাড়েন তাহলে এর জন্য কাজা ও কাফফারা উভয়ই আদায় করতে হয়। রোজা কাফফারা হলো বিরতিহীনভাবে ৬০টি রোজা রাখা।

৪. শাওয়ালের ছয় রোজা। কাজা বা কাফফারা না থাকলে রমজানের পরপরই শাওয়ালের ছয় রোজা পালন করা মুস্তাহাব। কাজা থাকলে তা আদায় করে তারপর শাওয়ালের ছয় রোজা পালন করতে হবে। রসুলুল্লাহ  (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল অতঃপর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল। (মুসলিম ২/৮২২)।

লেখক : খতিব, বাইতুশ শফীক মসজিদ, বোর্ডবাজার গাজীপুর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর