বৃহস্পতিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

হজে বায়তুল্লাহর ফজিলত

মুফতি মাওলানা এহছানুল হক মুজাদ্দেদি

হজে বায়তুল্লাহর ফজিলত

‘মানুষের মধ্যে যার বায়তুল্লাহ পর্যন্ত যাওয়ার সামর্থ্য আছে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সেই ঘরের হজ করা তার ওপর ফরজ।’ সূরা আলে ইমরান : ৯৭। হজ ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ। ইবাদতের মধ্যে হজের এমন একটি বৈশিষ্ট্য আছে, যা অন্য কোনো ইবাদতে নেই। ফিকাহর পরিভাষায় ইবাদত দুই প্রকার। ইবাদতে বাদানিয়া ও ইবাদতে মালিয়া। অর্থাৎ শারীরিক ইবাদত ও আর্থিক ইবাদত। অনেক ইবাদত শারীরিকভাবে সম্পন্ন করতে হয়। এখানে আর্থিক কোনো বিষয় জড়িত থাকে না। যেমন নামাজ, রোজা, কোরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি। আরেক ধরনের ইবাদত আছে, যা অর্থ দিয়ে সম্পন্ন করতে হয়। যেমন দান-সদকাহ, জাকাত, ফিতরা ইত্যাদি। কিন্তু হজ এমন এক ইবাদত, এখানে যেমন অর্থ ব্যয় করতে হয়, তেমন শারীরিক শ্রমও দিতে হয়। যে কারণে এটি একই সঙ্গে শারীরিক ও আর্থিক ইবাদতের মধ্যে পড়ে। তাই প্রাপ্তির দিক থেকে, সওয়াবের দিক থেকে হজের মর্যাদা অনেক ওপরে। (ফিকহুল হজ ওয়াল উমরাহ)।

হজের ফজিলত অনেক। অফুরন্ত সওয়াব, রহমত, বরকত আর মর্যাদায় পরিপূর্ণ ইবাদত হজ। যাদের জীবনে একবার হজ পালন নসিব হয় তারা খুবই সৌভাগ্যবান। মুমিন জীবনে হজের চেয়ে মহান আর কোনো ইবাদত আছে কি? হজের মাধ্যমে মুমিনদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সৌভাগ্যের দুয়ার খুলে যায়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মাবরু হজের বিনিময় হলো জান্নাত।’ বুখারি ও মুসলিম। হজের ফজিলত এত বেশি যে, এ ইবাদত হাজীকে গুনাহমুক্ত পবিত্র নতুন জীবন এনে দেয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হজ করল এর মধ্যে কোনো অশ্লীল ও মন্দ কাজ করল না সে এমন নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফিরল যেমন তার মা তাকে নিষ্পাপ অবস্থায় প্রসব করেছেন।’ বুখারি ও মুসলিম। হজের ফজিলত এত বেশি যে, শয়তান তা দেখে হতাশ হয়ে পড়ে। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল (সা.) বলেন, ‘আরাফাতের দিনের চেয়ে বেশিসংখ্যক বান্দাহকে অন্য কোনো দিনই জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় না।’ মুসলিম। হজরত তালহা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আরাফাতের দিন (হজের দিন) শয়তানকে সর্বাধিক হীন, পেরেশান, ইতর ও ক্রোধান্বিত দেখা যায়। এটা এজন্য যে, এ দিন আল্লাহর অফুরন্ত রহমত বর্ষণ ও বান্দাহর বড় বড় গুনাহ মাফের বিষয়টি শয়তান দেখে থাকে।’

হজরত আবু মুসা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘একজন হাজী তার পরিবারের ৪০০ লোকের বিষয়ে সুপারিশ করতে পারবে। আর হাজী তার গুনাহরাশি থেকে এমনভাবে বের হয়ে নিষ্পাপ হয়ে যায় যেমন তার মা তাকে নিষ্পাপ অবস্থায় ভূমিষ্ঠ করেছিলেন।’ মুসনাদে বাজজার। হাজী যখন ইহরাম পরে এই ইবাদতে মশগুল হয় তখন তার সম্মানার্থে চারপাশের সৃষ্টিজগৎও অংশগ্রহণ করে। হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো মুসলিম ইহরাম পরে তালবিয়াহ পড়তে থাকে তখন ডান ও বামের পাথর, বৃক্ষ, মাটিকণা সবকিছু এমনকি জমিনের এ প্রান্ত থেকে নিম্নের সর্বশেষ অংশ পর্যন্ত তালবিয়াহ পড়তে থাকে।’ তিরমিজি।

হজরত বুরাইদা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (দ.) ইরশাদ করেন, ‘হজে অর্থ ব্যয় করা আল্লাহর পথে দীনের পথে জিহাদে ব্যয় করার সমান। এতে ৭০০ গুণ সওয়াব রয়েছে।’ আহমাদ। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা হজ ও উমরাহ একসঙ্গে আদায় কর। কেননা এ দুটি দরিদ্রতা ও পাপ দূর করে দেয়। যেমন রেত সোনা, রুপা ও লোহা থেকে মরিচা দূর করে দেয়।’ তিরমিজি। হজরত আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন হাজীর সঙ্গে তুমি সাক্ষাৎ কর তখন তাকে সালাম দাও ও মোসাফাহা কর। তার ঘরে প্রবেশ করার আগে তোমার গুনাহ মাফের জন্য তাকে দোয়া করতে বল। কেননা হাজী নিজে গুনাহমুক্ত হয়ে এসেছে।’ আহমাদ।

এভাবে অসংখ্য হাদিসে হজের ফজিলত বর্ণিত আছে। হজ সব দিক থেকে এক অনন্য ইবাদত। বান্দাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের আল্লাহভীরু ও সওয়াবের অধিকারী বানাতে হজের মতো আর কিছু নেই। তাই সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ না করা বা বিলম্ব করা বড়ই বোকামি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হজে বায়তুল্লাহ ও জিয়ারতে মদিনা নসিব করুন।

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন বেতার ও টিভির ইসলামবিষয়ক উপস্থাপক। প্রিন্সিপাল, মণিপুর বাইতুর রওশন মাদ্রাসা কমপ্লেক্স

মিরপুর, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর