বৃহস্পতিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

হজের প্রস্তুতি

মুফতি ওলিউল্লাহ পাটোয়ারী

হজের প্রস্তুতি

যারা হজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রথমে নিয়ত পরিশুদ্ধ করুন। কেননা নিয়তের ওপরই আমল নির্ভরশীল। হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই নিয়তের ওপর আমল নির্ভরশীল।’ তাই লোক দেখানো হজ করলে সমাজে মানমর্যাদা বাড়বে, নামের সঙ্গে আলহাজ লেখা যাবে, নির্বাচনী লড়াইয়ে জনতাকে অধিক পরিমাণে প্রভাবিত করা যাবে ইত্যাদি ভাবনা থেকে নিজেকে পবিত্র করুন। এসব মনোবৃত্তিকে ‘রিয়া’ বলা হয়। রিয়া মারাত্মক অন্যায় যাকে হাদিসে ছোট শিরক বলা হয়েছে। ছোট শিরক বুকে ধারণ করে হজ করলে হজ কবুল হবে না কথাটি ভালোভাবে স্মরণ রাখুন। তাই রিয়া থেকে মুক্ত থাকুন ও আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন তিনি যেন রিয়ামুক্ত হজ পালনের তাওফিক দান করেন। রসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও এরূপ প্রার্থনা করতেন। এক বর্ণনায় এসেছে, রসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! এমন হজের তাওফিক দাও যা হবে রিয়া ও সুনাম কুড়ানোর মানসিকতা হতে মুক্ত।’

যেদিন হজ পালনের নিয়ত করেছেন সেদিন থেকেই মনে করবেন আপনার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। ইতিপূর্বে যদি আপনি আল্লাহর হক নষ্ট করে থাকেন, সালাত, সিয়াম, জাকাত আদায় ইত্যাদির কোনোটিতে অবজ্ঞা-অনীহা-অমনোযোগ দেখিয়ে থাকেন তাহলে ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে আসুন। হক্কুল্লাহ বিষয়ে সব জানা-অজানা গুনাহ থেকে মুক্তি কামনা করে আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করুন। কাঁদুন। মুক্তি কামনা করুন হৃদয় উজাড় করে, আল্লাহর সীমাহীন রহমত ও ক্ষমাশীল হওয়ার কথা খেয়াল রেখে।

এখন থেকে হক্কুল্লাহ বা আল্লাহর অধিকারের আওতাভুক্ত প্রতিটি বিষয়ই অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে আদায় করুন। বিগত পাপ-অন্যায়ের জন্য তওবা করুন। তওবার নিয়ম হলো— ক. সকল প্রকার গুনাহ থেকে ফিরে আসা ও তা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করা। খ. আগের সব পাপ-অন্যায়ের প্রতি অনুশোচনা ব্যক্ত করা। গ. এমন অপরাধে ভবিষ্যতে আর কখনো জড়াবেন না এই মর্মে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়া। অপরাধ যদি হক্কুল ইবাদ তথা বান্দার হকসংশ্লিষ্ট হয়, তাহলে তওবার আগে তা সমঝোতা করে নিতে হবে। ক্ষতিপূরণ দিয়ে হোক বা ক্ষমা চেয়ে হোক, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে সমঝোতায় আসার পর তওবা করতে হবে। এর অন্যথা হলে তওবার দ্বারা কোনো ফল পাওয়া যাবে না। মনে রাখবেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির সঙ্গে সুরাহা না করলে কিয়ামতের দিন আপনার সব নেক আমল তার আমলনামায় লিখে দেওয়া হবে। নেক আমলের অনুপস্থিতিতে ওই ব্যক্তির পাপের বোঝা আপনার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হবে। তাই এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। হজ করলেও হক্কুল ইবাদ ক্ষমা হয় না, যতক্ষণ না ক্ষতিপূরণ দিয়ে অথবা ক্ষমা চেয়ে ওই ব্যক্তিকে রাজি-খুশি করা হবে। কাউকে আর কোনো দিন অবৈধভাবে কষ্ট দেবেন না, কারও অর্থকড়ি বেহালালভাবে কখনো খাবেন না এই প্রতিজ্ঞা করুন। সঙ্গে সঙ্গে যাদের সঙ্গে আপনি অতীতে অসদাচরণ করেছেন বা যাদের অর্থসম্পদ হারামভাবে আপনার দখলে এসেছে তাদের কাছে ক্ষমা চান। তাদের প্রাপ্য-সম্পদ ফিরিয়ে দিন। তাদের ভালো চেয়ে দোয়া করুন। নিজের অন্যায়ের জন্যও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। ইস্তিগফার করুন।

লেখক : খতিব, বাইতুন নূর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ

দক্ষিণ পীরেরবাগ, ওলি মার্কেট, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর