বৃহস্পতিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
ইতিহাস

সুলতানি আমলের সমাজ ও সংস্কৃতি

দিল্লির সুলতানরা এ উপমহাদেশে উন্নততর শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন। এ শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে অনেকে মনে করেন, দিল্লির সালতানাত ছিল ধর্মভিত্তিক অর্থাৎ আল্লাহ তাঁর প্রতিনিধির মাধ্যমে রাজ্য শাসন করেন। এ কথা সত্য, শরিয়তই ছিল রাষ্ট্রীয় আইনের মূল উৎস এবং শাসনব্যবস্থা ও শাসননীতি প্রণয়নে ইসলামী অনুশাসনকে লঙ্ঘন করা হতো না। তথাপি এ আমলের শাসনব্যবস্থা পর্যালোচনা করলে একে ধর্মভিত্তিক শাসনব্যবস্থা বলা যায় না। প্রথমত, দিল্লির সুলতানরা আধ্যাত্মিক নেতার মর্যাদা লাভ করেননি। তাদের অনেকেই আব্বাসীয় খলিফাদের কাছ থেকে স্বীকৃতি লাভ করলেও অধিকাংশ সুলতান খলিফার অনুমতি ছাড়াই মুদ্রায় খলিফাদের নাম ব্যবহার করতেন। সাম্রাজ্যের জনগণের কাছে, রাজদরবার এবং আলেম ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের কাছে নিজেদের মর্যাদা ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধির জন্যই সুলতানরা আব্বাসীয় খলিফাদের স্বীকৃতি আদায় করতেন। অতএব, স্বীকৃতি আদায়ের ব্যাপারটি ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত। দ্বিতীয়ত, আলাউদ্দিন খলজির মতো অনেকেই রাজ্যশাসনকে ধর্মীয় নীতি থেকে পৃথক বলে মনে করতেন। তারা প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বেসামরিক ও রাজনৈতিক আইন-কানুন প্রণয়নের অধিকারী ছিলেন। তবে ‘শূরার প্রাধান্যকে তারা অবশ্যই মেনে চলতেন। সুলতানরা ইসলামী আইনের ব্যাখ্যা প্রদানের দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। কাজী ও মুফতিরাই এ দায়িত্ব পালন করতেন। তৃতীয়ত, সাম্রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রজা ছিল অমুসলিম। ইসলামী অনুশাসনকে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করে সুলতানরা তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে চাননি। সুলতান ইলতুতমিশের আমল থেকে অমুসলমানদের প্রতি যে উদারনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল, পরবর্তী সময়ে এটিই সুলতানি শাসনব্যবস্থার প্রকৃতি নির্ধারণ করে। আলেম ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ও তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির জটিলতা সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন বলে সুলতানদের এ নীতির বিরোধিতা করেননি।

সর্বশেষ খবর