বৃহস্পতিবার, ২ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

পবিত্র হজের মাসায়েল

মুফতি এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

পবিত্র হজের মাসায়েল

পবিত্র কোরআন মাজিদে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষের ওপর অবশ্য কর্তব্য হলো ওই পবিত্র ঘরের হজ করা, সে যেখানে পৌঁছতে  সক্ষম; আর যে কুফুরি করে, সে যেন জেনে রাখে, আল্লাহ জগত্বাসী থেকে অমুখাপেক্ষী।’ (সূরা আলে ইমরান : আয়াত- ৯৭)। পবিত্র হজ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ইসলাম ধর্ম পাঁচটি খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এ পাঁচটি খুঁটি হলো— আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও রসুল— এ সাক্ষ্য দেওয়া, সালাত কায়েম করা, জাকাত আদায় করা, হজ করা এবং রমজান মাসে সিয়াম পালন করা।’ (বুখারি : ৮, মুসলিম : ১৬।) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘হে আমার উম্মত! আল্লাহতায়ালা তোমাদের ওপর হজ ফরজ করেছেন। সুতরাং সামর্থ্য হলে তোমরা পবিত্র হজ আদায় কর। (মুসলিম : ৯৭৫)।

হজ সবার ওপর ফরজ নয়। হজ ফরজ হতে হলে এ শর্তগুলো থাকা জরুরি।

(১) মুসলমান হওয়া। কোনো অমুসলিমের জন্য হজ আদায় করার অনুমতি নেই। আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! নিশ্চয় মুশরিকরা অপবিত্র। তারা যেন মসজিদে হারামের কাছেও না আসে। (সূরা তাওবাহ : আয়াত- ২৮)। (২) প্রাপ্ত বয়স্ক ও সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন হওয়া। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও পাগলের ওপর হজ ফরজ নয়। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তি থেকে আমলনামার কলম উঠিয়ে রাখা হয়েছে। তারা হলো— পাগল, যতক্ষণ না তার মস্তিষ্ক সুস্থ হয়। ঘুমন্ত ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে জেগে ওঠে। শিশু, যতক্ষণ পর্যন্ত সে প্রাপ্তবয়স্ক না হয়। (মুসতাদরাক : ৯৮৮)। (৩) আজাদ বা স্বাধীন হওয়া। দাস-দাসীর ওপর হজ ফরজ নয়।  (৪) হজ আদায় করার সামর্থ্য থাকা। এ সামর্থ্য তিন দিক থেকে থাকা শর্ত, যথা— ১. দৈহিক সামর্থ্য। অর্থাৎ, কাবা শরিফ পর্যন্ত সফর করার শারীরিক যোগ্যতা থাকা। শারীরিকভাবে অক্ষম, অন্ধ, খোঁড়া, পক্ষাঘাতগ্রস্ত, জরাজীর্ণ বৃদ্ধ স্বয়ং চলাফেরায় অক্ষম এরূপ লোকের ওপর হজ ফরজ নয়। এমন ব্যক্তির যদি আর্থিক সামর্থ্য থাকে তাহলে বদলি হজ করানো ওয়াজিব। ২. আর্থিক সামর্থ্য। অর্থাৎ পরিবার-পরিজন, চাকর-বাকরদের ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করে কোনো ব্যক্তির কাছে পবিত্র হজে যাওয়া-আসা ও পাথেয় খরচ থাকলে তার ওপর হজ ফরজ হবে। ৩. নিরাপত্তা। যাতায়াতের পথ নিরাপদ থাকা এবং রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা না থাকা।

(৫) হজের সময় বা মৌসুম হওয়া। হজের মৌসুম বলতে শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনকে বুঝায় অথবা এমন সময়কে বুঝায় যখন থেকে রাষ্ট্রে পবিত্র হজের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

কোনো ব্যক্তির জীবনের কোনো একটি বছরে উপরোক্ত শর্তগুলোর সমন্বয় ঘটলে তার ওপর পবিত্র হজ ফরজ হয়ে যায়। সে যদি ওই বছর হজ আদায় না করে থাকে এবং পরবর্তীকালে যদি সামর্থ্য হারিয়েও ফেলে তবুও সে হজ ফরজের আদায়ের দায় থেকে মুক্ত হবে না।

মহিলাদের হজ ফরজ হওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আরও দুটি শর্ত রয়েছে। (১) মহিলাদের সঙ্গে স্বামী অথবা এমন কোনো মুহরিম পুরুষ থাকা। মুহরিম তারা যাদের সঙ্গে চিরস্থায়ীভাবে বিবাহ নিষিদ্ধ। কোনো নারী যদি মুহরিম সঙ্গী ব্যতীত হজ করে তার হজ আদায় হবে, কিন্তু মুহরিম ব্যতীত সফরজনিত কারণে গুনাহ হবে। এক্ষেত্রে বদলি হজ করানোই উত্তম। (২) স্বামীর মৃত্যুজনিত কারণে বা তালাকের কারণে ইদ্দত পালনকালে নারীগণ হজে গমন করবে না। (ফাতহুল বারি, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ১৪৩)।

হজ কখন আদায় করতে হয়— এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে দুটি মত আছে। একদল আলেম মনে করেন, কোনো ব্যক্তি যখন হজ করার সামর্থ্য লাভ করে তখন ওই বছরই হজ আদায় করা কর্তব্য। অন্যথায় বিলম্বজনিত কারণে গুনাহগার হবে। বিলম্ব করে পরবর্তী কোনো বছরে আদায় করলেও হজ হয়ে যাবে। কিন্তু অহেতুক বিলম্ব করা অনুচিত। কেননা হজ অনাদায়ী রেখে মৃত্যুবরণ করলে মারাত্মক গুনাহ হবে। হজ আদায়ের আগে অসুস্থ হয়ে পড়লে এবং সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে তার জীবদ্দশায়ই বদলি হজ করানো উচিত। আর এ সুযোগও না পেলে ওয়ারিশগণের উচিত উক্ত ব্যক্তির বদলি হজ আদায় করে তাকে দায়মুক্ত করা। কেননা হজ সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর মহান আল্লাহতায়ালার হক। আরেক দল আলেম বলেন, হজ ফরজ হওয়ার পর বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে বিলম্ব করলে দোষ নেই। কারণ, হজ ফরজ হয়েছে ষষ্ঠ হিজরিতে, রসুল (সা.) হজ আদায় করেছেন দশম হিজরিতে। তাই দেরি করে হজ করলে তাতে অসুবিধা নেই। তবে সব আলেম একমত, হজ ফরজ হলে বিনা কারণে দেরি করা উচিত নয়।  (তাফসিরে ইবনে কাসির, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৬৮)।  মহান আল্লাহতায়ালা নূর নবীজির উসিলায় সবাইকে মাবরুর হজ নসিব করুন।  আমিন।

লেখক : বেতার টিভির ইসলামী উপস্থাপক। খতিব, মনিপুর বাইতুর রওশন জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর