বৃহস্পতিবার, ৯ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

যাচাই না করে সংবাদ প্রচার ইসলাম সমর্থন করে না

যুবায়ের আহমাদ

যাচাই না করে সংবাদ প্রচার ইসলাম সমর্থন করে না

মিথ্যা বলা ও প্রচার করা একটি মারাত্মক অন্যায়। সমাজ জীবনে অনেক বিশৃঙ্খলা ঘটে মিথ্যার ফলে, আবার পারলৌকিক জীবনও মারাত্মক ক্ষতির মুখোমুখি হয় মিথ্যার কারণে। তাই ইসলামে এ জাতীয় গুনাহর কাজকে বিশেষভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা মিথ্যাবাদীদের সতর্ক করেছেন।  ইরশাদ হয়েছে, ‘দুর্ভোগ প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপীর জন্য।’ (সূরা জাসিয়া : ৭)। কারও মিথ্যা বলা বা প্রচার করা প্রমাণ করে সে আর মুমিন নয় বরং সে হলো মুনাফিক। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি। ১. কথা বললে মিথ্যা বলে। ২. ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে। ৩. তার কাছে আমানত রাখা হলে সে এর খেয়ানত করে। (বুখারি ও মুসলিম)। ইন্টারনেট বিপ্লবের ফলে আমাদের সামাজিক যোগাযোগের বড় মাধ্যম ফেসবুক যেমন আমাদের যোগাযোগকে সহজ করেছে তেমনি ভুয়া সংবাদের অন্যতম উৎস হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে এটি। এখানে সবাই যেন ‘সাংবাদিক’। লাইক কমেন্ট পেতে অনেকেই যেমন ‘মক্কা শরিফের খাদেম স্বপ্নে দেখেছেন... শেয়ার করলে এ পুরস্কার।’ এ ধরনের ধর্মীয় আবেগপূর্ণ ভুয়া পোস্ট করেন তেমনি ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটানো বা বিশেষ স্বার্থ অর্জন করার জন্যও নিছক ফটোশপের কারসাজির মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা ছড়ানো হয়। এ ধরনের মিথ্যা বলা, লেখা, প্রচার করা ইসলামের দৃষ্টিতে ভয়াবহ কবিরা গুনাহ। একটি কবিরা গুনাহই একজন মানুষকে জাহান্নামে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। নবীজি (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহের কথা বলব না? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ‘আল্লাহতায়ালার সঙ্গে কাউকে শরিক করা, মাতা-পিতার অবাধ্যতা, এরপর তিনি ঠেস দিয়ে বসে বললেন, ও শোন! মিথ্যা কথা। তিনি (মিথ্যার কথা) বারবার বলতে লাগলেন। (বুখারি ও মুসলিম)।

মিথ্যা সংবাদ বলা বা পোস্ট করা যেমন গুনাহের কাজ তেমনি তা শেয়ার করে প্রচার করাও গুনাহ। একজন মুসলমানের জন্য কারও নিয়ে আসা এ ধরনের কোনো খবর যাচাই না করে বিশ্বাস ও প্রচারের কোনো সুযোগ নেই। সংবাদভিত্তিক পোস্টে লাইক/কমেন্ট করার আগে জেনে নিতে হবে সংবাদটির উৎস সঠিক কিনা। পবিত্র কোরআনুল কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মুমিনগণ! কোনো পাপাচারী ব্যক্তি যদি তোমাদের কাছে কোনো খবর নিয়ে আসে তাহলে তোমরা তা যাচাই করে দেখবে। যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও।’ (সূরা আহজাব : ৬)। যাচাই না করে কোনো সংবাদ বলে বেড়ানো বা শেয়ার করে প্রচার করা মিথ্যার শামিল। নবীজি (সা.) বলেন, কোনো ব্যক্তি মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যাই শুনবে (সত্যতা যাচাই না করে) তাই বর্ণনা করবে।’ (সহিহ মুসলিম)। মিথ্যা পোস্ট করা এবং তা শেয়ার করে ছড়ানো যেমন কবিরা গুনাহ তেমনি কোনো নির্দোষ লোককে বিপদে ফেলতে বা তার সম্মানহানি করতে তার নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে সে আইডি থেকে সমাজবিরোধী পোস্ট করা আরও মারাত্মক অন্যায়। কাউকে বিপদে ফেলার জন্য এহেন কাজ করার পর সে নিরপরাধ ব্যক্তিটি হয়রানির শিকার হোক বা না হোক, তার জীবন ও ক্যারিয়ার নষ্ট হোক বা না হোক, ষড়যন্ত্রকারী ব্যক্তিটি কিন্তু নিশ্চিতভাবে ক্ষতির মুখোমুখি হবেন। ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার দুনিয়া ও আখেরাত। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে এমন দোষে দোষারোপ করবে যা থেকে সে মুক্ত, আল্লাহ তাকে ‘রাদগাতুল খাবাল’ নামক জাহান্নামের (পুঁজ, রক্ত ও মলমূত্রের) গর্তে বাসস্থান করে দেবেন, যতক্ষণ সে অপবাদ থেকে ফিরে না আসে (অপবাদের প্রমাণ দিতে না পারে)।’  (আবু দাউদ)। আল্লাহ আমাদের এসব  গুনাহের কাজ থেকে হেফাজত করুন!

লেখক : জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কারি ও খতিব, বাইতুশ শফীক মসজিদ, বোর্ডবাজার, গাজীপুর।

সর্বশেষ খবর