সড়কে সেই আগের চিত্র! বাসচালকদের মধ্যে যথেচ্ছতার যে মনোভাব মজ্জাগত অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে তা থেকে সরে আসার কোনো লক্ষণই মিলছে না। জাবালে নূর নামের ঘাতক পরিবহনের দুটি বাসের পাল্লাপাল্লির শিকার হয়ে দুই কলেজ শিক্ষার্থীর প্রাণহানি ঘটে গত ২৮ জুলাই। তারপর দেশে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন গড়ে ওঠে তা এ ভূখণ্ডের গত এক শতাব্দীর ইতিহাসের সবচেয়ে আলোড়িত ঘটনা হিসেবে অভিহিত হওয়ার যোগ্য। স্কুল-কলেজের তরুণ শিক্ষার্থীরা কার্যত কাঠগড়ায় দাঁড় করায় দেশের প্রশাসনকে। দেখিয়ে দেয় অনিয়ম আমাদের মধ্যে কতটা বাসা বেঁধেছে। তাদের জবাবদিহিতা থেকে বাদ যাননি মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, পদস্থ কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা, এমনকি বিচারব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাও। মনে হচ্ছিল ছাত্র বিক্ষোভের নামে এক ভয়াবহ টর্নেডো যেন দেশের সবকিছু উলট-পালট করে দিতে চাচ্ছে। সবচেয়ে বেকায়দায় পড়ে পরিবহন মালিক ও চালকরা। ভাবমূর্তির সংকটে পতিত পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার যে তাগিদ সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীরা, তার প্রতিক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে অনুভূত হবে— এমনটিই আশা করেছিল দেশের সচেতন মানুষ। কিন্তু নিজেদের নোংরা অভ্যাস যে চালকরা ত্যাগ করতে পারেননি তা গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের সড়ক নৈরাজ্যের ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে। রাস্তার মাঝখানে গাড়ি থামিয়ে চলেছে যাত্রী ওঠানো-নামানো। চলেছে পাল্লাপাল্লি। বেশরমের নাকি শরম থাকতে নেই সেই সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালিয়েছেন বাসচালকরা। পাশাপাশি চলছে যথেচ্ছভাবে রাস্তা পারাপার, ফুটওভার ব্রিজ থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহার না করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাস্তা পার হওয়ার কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সারা দেশ হঠাৎ করে যেভাবে জ্বলে উঠেছিল, আলো ছড়িয়েছিল, তাকে এখন আলেয়া বলেই মনে হচ্ছে। বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি না চাইলে সড়কশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সব মহলকেই যত্নবান হতে হবে।