মঙ্গলবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
ইতিহাস

কোরআন সংকলন

কোরআন সংকলন

তৃতীয় খলিফা হজরত ওসমান (রা.) বিশ্ব মুসলিমের জন্য সব থেকে বড় যে অবদানটি রেখে গেছেন, তা হলো পবিত্র কোরআন সংকলন। তিনি বিভিন্ন অঞ্চলে কোরআন পাঠে ভিন্নতা লক্ষ্য করে একটি নির্ভুল সংস্করণ তৈরির উদ্যোগ নেন। একটি উপযুক্ত কমিটির তত্ত্বাবধানে হজরত হাফসার (রা.) কাছে সংরক্ষিত কোরআনের কপিকে মূল ধরে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে তা সম্পন্ন করে এর কপি মুসলিম সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং মানুষের কাছে থাকা কোরআনের বিচ্ছিন্ন অংশগুলো সংগ্রহ করে তা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

রসুল (সা.) এর কাছে কোন আয়াত বা সূরা নাজিলের পরপর সাহাবাদের মুখস্থ করতে ও লিখে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হতো। এটা বলা ভুল যে হজরত ওসমান (রা.) কোরআন সংকলন করেছেন              প্রকৃতপক্ষে রসুল (সা.)-এর জীবিতকালে কোরআন সংকলন ও সংরক্ষিত হয়েছিল। যখন কোনো আয়াত রসুল (সা.)-এর প্রতি নাজিল হতো তিনি অনতিবিলম্বে তা মুখস্থ করে নিতেন এবং সাহাবাদের শোনাতেন এবং তাঁদের মুখস্থ করতে ও লিখে রাখতে নির্দেশ দিতেন এবং তিনি সাহাবাদের পড়িয়ে শোনাতে বলতেন শুদ্ধতা যাচাই করতেন অর্থাৎ সাহাবিদের স্মরণ শক্তি পরীক্ষা করে দেখতেন। তিনি সাহাবাদের সূরার ধারাবাহিকতা বলে রাখতেন  যেমন-প্রথম যে সূরা নাজিল হয়েছে সূরা ইকরা যা পবিত্র কোরআনে ৯৬নং সূরা যা তিনি জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে জানতে পেরেছেন । বর্তমানে যে পর্যায় ক্রমিক সূরায় কোরআন সংকলিত আছে তার অনুরূপ ‘লাওহে মাহফুজে’ লিপিবদ্ধ রয়েছে। প্রতি রমজানে রসুল (সা.) জিবরাইল (আ.) দ্বারা পুনরাবৃত্তি করতেন। তাঁর মৃত্যুকালীন বছরে রমজানের সময় তিনি দুবার পুনরাবৃত্তি করছিলেন।

কোরআন একত্রীকরণ : কোরআন সংরক্ষিত হয়েছিল বিভিন্ন আঙ্গিকে-গাছের বাকলে, চমড়ায়, উটের হাড়ে, সমতল পাথরে, গাছের পাতায়। প্রথম খলিফা আবু বকর (রা.)-এর খিলাফতকালে ইয়ামামার যুদ্ধে বহু কোরআনে হাফেজ শহীদ হন। হজরত আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.) সাহাবিগণের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে যয়িদ-বিন-সাবিদ (রা.)-কে কোরআন সংকলনের জন্য দায়িত্ব প্রদান করেন। সব সাহাবিকে একসঙ্গে করে যয়িদ-বিন-সাবিদ (রা.) সব কোরআনের আয়াতকে একসঙ্গে করেন। এরপর তা দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.) এর তত্ত্বাবধানে আসলে তাঁর হাত থেকে হজরত হাফসা (রা.)-এর কাছে পৌঁছে।

তৃতীয় খলিফা হজরত ওসমান (রা.)-এর সময় ইসলাম যখন প্রসার লাভ করছিল। বিভিন্ন স্থানের মধ্যে উচ্চারণগত সমস্যা দেখা দেওয়ায় তিনি বিভিন্ন দেশের কোরআন হাফেজ এবং সংকলকদের ডেকে পাঠান ও হজরত হাফসা (রা.)-এর কাছ থেকে সংরক্ষিত কোরআন লিখে রাখতে বলেন ও তা সম্প্রচার করতে বলেন আর বাকি কোরআন তিনি পুড়িয়ে ফেলতে নির্দেশ দেন। কারণ সাহাবিদের সবার কাছে কোরআনের সব আয়াত সংরক্ষিত ছিল না, কারও কাছে ছিল ৫০০ আয়াত বা তার কম বা বেশি। কোরআনের আদি সংকলন হুবহু তুরস্কের ফাত্তাকি জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে ।

আলস্নাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, (সূরা হিজর-১৫, আয়াত-৯)

‘আমরা কোরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমরাই এর সংরক্ষণকারী।’

বিপুল ধন-ঐশ্বর্যের মালিক হজরত ওসমান (রা.) মুসলিম জাহানের খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পরও অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন। হজরত হাসান (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হজরত ওসমান (রা.) মসজিদে নববীতে মাথার নিচে চাদর দিয়ে শুয়ে থাকতেন। মানুষ তাঁর পাশে এসে বসত। তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলতেন। মনে হতো তিনি তাদেরই একজন। জুবাইর ইবনে আবদুলস্নাহ বর্ণনা করেন, ‘হজরত ওসমান সারা বছর রোজা রাখতেন এবং সারা রাত নামাজ পড়তেন। রাতের প্রথমার্ধে একটু ঘুমাতেন।’

হজরত ওসমান (রা.) তাঁর শাসনামলের প্রথমদিকে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সামরিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রভূত সাফল্য অর্জন করেন। তাঁর জনহিতকর কার্যাবলি সমাজের আদল পরিবর্তন করে দিয়েছিল। তিনি মদিনা শহর রক্ষাবাঁধ ‘মাহরু’ নির্মাণ করেন। খাল খনন করে কৃষিতে প্রভূত উন্নতি সাধন করেন। পয়ঃপ্রণালি ও রাস্তাঘাট নির্মাণ করে জনগণের অত্যন্ত প্রিয় খলিফায় পরিণত হন। মসজিদে নববীর আধুনিকায়ন করেন তিনি। তাঁর সময় অর্থনৈতিক সচ্ছলতা মদিনার ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছিল।

► শাকিলা জাহান

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর