শিরোনাম
সোমবার, ১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাহাবাদের মর্যাদা

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

সাহাবাদের মর্যাদা

সাহাবির সংজ্ঞায় বিজ্ঞ ওলামায়ে কিরামের বিভিন্ন মত পাওয়া যায়। তবে আল ইসাবা নামক কিতাবে আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.)-এর  যে সংজ্ঞাটি উল্লেখ করা হয়েছে তা অধিক গ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, সাহাবি বলা হয় যিনি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাক্ষাৎ লাভ করেছেন তাঁর প্রতি ইমান আনা অবস্থায় এবং ইসলামের ওপর অটল-অবিচল থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন (তিনি সাহাবি)। যুগে যুগে সব নবী-রসুলের সাহাবি ছিল। তবে সাহাবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম হলেন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিরা। তাঁরাই কিয়ামত পর্যন্ত শ্রেষ্ঠতম উম্মত হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে জ্বলজ্বল করতে থাকবেন। প্রত্যেক মুমিনের হৃদয়-গহিনে চিরস্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁরা এ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন বিশ্বাস, ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের মাধ্যমে। প্রিয় পাঠক! এই শ্রেষ্ঠতম জাতির সম্মান ও মর্যাদার ব্যাপারে আল কোরআনে কী বলা হয়েছে তা আমরা সংক্ষিপ্তভাবে জেনে নিই। এক. কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তাদের মধ্যে যারা ইমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে আল্লাহ তাদের মহাপুরস্কারের ওয়াদা দিয়েছেন।’ সূরা আল ফাতাহ, আয়াত ২৯। আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবি (রহ.) তাফসিরে কুরতুবির ৮ নম্বর খন্ডের ২৬৮ নম্বর পৃষ্ঠায় অত্যন্ত সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য একটি উক্তি উল্লেখ করেছেন, তা হলো, ‘আল্লাহতায়ালা ওইসব লোকের সঙ্গে ওই ওয়াদা করেছেন যারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলেন। তাঁরাই ওইসব মুমিন যাদের আমল সৎ ও পুণ্যময়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আলোচ্য আয়াতে “মিনহুম” বলে “আল্লাজিনা আমানু”-এর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এর দ্বারা সাহাবায়ে কিরামের সুমহান জামাতকে বোঝানো হয়েছে। এবং ওই আয়াতে  মাগফিরাত ও ক্ষমার ওয়াদা করা হয়েছে, যা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সব সাহাবির সঙ্গে নির্দিষ্ট করা হয়েছে তাঁদের সম্মানার্থে।’ দুই. অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা জেনে রাখো, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রয়েছেন। তিনি যদি অনেক বিষয়ে তোমাদের আবদার মেনে নেন তবে তোমরাই কষ্ট পাবে, কিন্তু আল্লাহতায়ালা তোমাদের অন্তরে ইমানের মহব্বত তৈরি করে দিয়েছেন এবং তা হৃদয়গ্রাহী করে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে কুফর, পাপাচার ও নাফরমানির প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তারাই সৎপথ অবলম্বনকারী।’ সূরা আল হুজুরাত, আয়াত ৭। এ আয়াতেও সাহাবায়ে কিরামের সম্মান ও মর্যাদার প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এখানে যাঁদের অন্তরে ইমানের প্রতি মহব্বতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তাঁরা হলেন সাহাবায়ে কিরামের সুমহান জামাত। কারণ  আল্লাহ জানেন কারা উল্লিখিত গুণ দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে পারবে এবং কারা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবি হওয়ার যোগ্য। এক কথায় তাঁরা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আদেশ পালনে নিজেদের উৎসর্গ করার ক্ষেত্রে ছিলেন অদ্বিতীয়। আত্মোৎসর্গের বহু দৃষ্টান্ত ইতিহাসের কিতাবে পাওয়া যায়। বহু সাহাবায়ে কিরাম ইমানের আলোয় আলোকিত হয়ে নিজেদের সহায়সম্বল সব এক আল্লাহর রাহে উৎসর্গ করে দিয়েছেন। কখনো তাঁরা ইমানের পথ থেকে ক্ষণিকের জন্যও পিছু হটেননি। যেমন হজরত খোবায়েব (রা.), হজরত বিলাল (রা.) প্রমুখ সাহাবি। তিন. রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরামের সম্মান ও মর্যাদার বয়ান দিয়ে অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, ‘কেননা কাফিররা তাদের অন্তরে মূর্খতা যুগের জিদ পোষণ করত, অতঃপর আল্লাহ তাঁর রসুল ও মুমিনদের ওপর স্বীয় প্রশান্তি নাজিল করলেন এবং তাদের জন্য সংযমের দায়িত্ব অপরিহার্য করে দিলেন। বস্তুত তারাই ছিল তার জন্য অধিকতর যোগ্য ও উপযুক্ত। আল্লাহ সর্ববিষয়ে জ্ঞাত।’ সূরা আল ফাতাহ, আয়াত ২৬। প্রিয় পাঠক!

লক্ষ্য করুন, এ আয়াতে রব্বুল আলামিন ওইসব নির্বাচিত লোককে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবি হওয়ার জন্য নির্বাচন করেছেন যাঁরা দীনের পথে এমন কঠিন থেকে কঠিনতর কাজ আনজাম দিয়েছেন যা অন্যদের জন্য মোটেই সম্ভব নয়। আর তাঁরাই হলেন নবী-রসুলদের পরে সর্বোত্তম ব্যক্তি। চার. অন্য আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর যখন তাদের বলা হয়, অন্যরা যেভাবে ইমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ইমান আনো। তখন তারা বলে, (কাফির ও মুনাফিক)। আমরাও কি ইমান আনব বোকাদের মতো! মনে রেখো, প্রকৃতপক্ষে তারাই বোকা, কিন্তু তারা তা বোঝে না।’ সূরা আল বাকারা, আয়াত ১৩। উল্লিখিত আয়াতে ‘আননাস’ শব্দ দ্বারা সাহাবায়ে কিরামকে বোঝানো হয়েছে। কেননা কোরআন অবতরণের যুগে তাঁরাই ইমান এনেছিলেন। মাআরিফুল কোরআন। পাঁচ. অন্যত্র রব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘কিন্তু রসুল এবং সেসব লোক ইমান এনেছে তার সঙ্গে তারা নিজেদের জান ও মালের দ্বারা জিহাদ করেছে, তাদের জন্যই নির্ধারিত রয়েছে কল্যাণসমূহে এবং তারাই সফলকাম। আল্লাহ তাদের জন্য তৈরি করে রেখেছেন কানন, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে প্রস্র্রবণ। তারা তাতে বাস করবে অনন্তকাল। এটাই হলো বিরাট           কৃতকার্যতা।’ সূরা আত তওবা, আয়াত ৮৮। প্রিয় পাঠক! সাহাবায়ে কিরামের সম্মান ও মর্যাদার কথা আল কোরআনের দ্বারা সংক্ষিপ্তভাবে জানতে পারলাম।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর