রবিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

মানব জীবনে সুন্নাতের গুরুত্ব

মুফতি মুহাম্মদ এহছানুল হক মোজাদ্দেদী

মানব জীবনে সুন্নাতের গুরুত্ব

সুন্নাহ শব্দটি মুসলিম সমাজে একটি সুপরিচিত পরিভাষা। সুন্নাহর আভিধানিক অর্থ সম্পর্কে মিসবাহুল মুনীর গ্রন্থকার বলেন, সুন্নাহ শব্দটির আরবি আভিধানিক অর্থ পথ ও পদ্ধতি, আদর্শ ও রীতিনীতি। আল মুফরাদাত গ্রন্থের প্রণেতা বলেন, রসুলের (সা.) সুন্নাত, এ কথার অর্থ রসুল (সা.)-এর আদর্শ যা তিনি পালন করতেন। মহান আল্ল­াহর সুন্নাত এ কথার অর্থ, মহান আল্ল­াহ-তায়ালার সুমহান পথ ও পদ্ধতি, তাঁর হিকমত এবং তার আনুগত্যের নিয়মকানুন ও পদ্ধতি। ‘সুন্নাহ’ এ অর্থেই পবিত্র কোরআন ও হাদিস শরিফে বারবার ব্যবহৃত হয়েছে।

ওলামায়ে হক্কানিরা বলেন, ইসলামী শরিয়তে যখন সাধারণভাবে সুন্নাহ শব্দটি ব্যবহার করা হবে, তখন এর অর্থ দাঁড়াবে নবী (সা.)-এর আদেশ, নিষেধ কথা, কাজ ও সম্মতি ইত্যাদি। সুন্নাহ বিশ্লেøষক আলেমগণ বলেন, বিশেষ করে যেসব বিষয় পবিত্র কোরআনে বর্ণিত নয়, কেবল রসুল (সা.) থেকে বর্ণিত, নির্দেশিত শরিয়তের সেসব বিষয়কে সুন্নাত বলে। মহান আল্ল­াহতায়ালার পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাত লাভ করতে হলে জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে রসুলুল্ল­াহ (সা.)-এর সুন্নাহর অনুসরণ করতে হবে। রসুলুল্ল­াহ           সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­ামের আদর্শের পরিপন্থী যাবতীয় আইন-বিধি, নীতি-আদর্শ, পথ-মত, জাহিলিয়াত ও নাফসানিয়াত পরিহার করতে হবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে অনেক আলোচনা বিদ্যমান।

মহান আল্ল­াহতায়ালা বলেন, হে রসুল! (সা.) আপনি বলুন! যদি তোমরা     আল্ল­াহর ভালোবাসা পেতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর। তাহলে আল্ল­াহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহগুলো মাফ করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্ল­াহ ক্ষমাশীল ও দয়াময়। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ৩১) আল্ল­াহতায়ালা আরও বলেন, রসুল (সা.) তোমাদের যা আদেশ দেন, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে তোমরা বিরত থাক (সূরা হাশর : আয়াত ৭)। যে রসুলের (সা.) আনুগত্য করল, সে যেন                  আল্ল­াহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হলো, আমি আপনাকে তাদের ওপর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে প্রেরণ করিনি (সূরা নিসা : আয়াত ৮০)। তোমাদের জন্য আল্ল­াহর রসুল (সা.)-এর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে (সূরা আহযাব : আয়াত ২১)। এমনিভাবে পবিত্র কোরআনে সুন্নাহর অনুকরণ-অনুসরণের জন্য অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআন এ কথাও বলেছে, কেউ যদি সুন্নাহর অনুসরণ না করে, তবে তার ইমান যথাযথ হবে না। মহান আল্ল­াহ বলেন, তোমার পালনকর্তার কসম! সে লোক ইমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে অর্থাৎ নবী (সা.)-কে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা সন্তুষ্টিচিত্তে তা কবুল করে নেবে (সূরা নিসা : আয়াত ৬৫)। তিনি আরও বলেন,  আল্ল­াহ ও তাঁর রসুল (সা.) কোনো কাজের আদেশ করলে কোনো ইমানদার পুরুষ ও ইমানদার নারীর সে বিষয়ে অন্য কোনো এখতিয়ার থাকে না। যে ব্যক্তি মহান আল্ল­াহ ও তাঁর রসুলের (সা.) আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়। (সূরা আল-আহযাব : আয়াত ৩৬)। ইহ-পরকালীন নাজাত, কল্যাণ ও জান্নাতের পথ শুধু কোরআন ও রসুলুল্ল­াহ (সা.)-এর আদর্শের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং খোলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবায়ে কিরামগণের (রা.)-এর আদর্শে ও বিদ্যমান। রসুল (সা.)-এর আদর্শ সেভাবেই অনুসরণ করতে হবে যেভাবে সাহাবায়ে কেরাম বিশেষত মুহাজির ও আনসারগণ (রা.) অনুসরণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্ল­াহতায়ালা বলেন, মুহাজির ও আনসারদের অগ্রগামী দল আর যারা যথাযথভাবে তাদের অনুসারী, মহান আল্ল­াহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট আর তারাও মহান আল্ল­াহর প্রতি সন্তুষ্ট। তাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে এমন জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে নহরসমূহে প্রবাহিত। তারা সেখানে অনন্তকাল থাকবে। এটাই হলো মহান সফলতা (সূরা তাওবাহ : আয়াত ১০০)। রসুলুল্ল­াহ (সা.)-এর সুন্নাহ আঁকড়ে থাকার ব্যাপারে হুজুর (সা.) নিজেই বলেছেন, আমি তোমাদের কাছে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দুটি জিনিস আঁকড়ে থাকবে, ততক্ষণ পথভ্রষ্ট হবে না : আল্ল­াহর কিতাব ও আমার সুন্নাহ। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক : হাদিস নম্বর ৩৩৩৮)। খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত সম্পর্কে হযরত ইরবায বিন সারিয়াহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্ল­াহ (সা.) একদিন আমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করলেন। অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে বসলেন। অতঃপর আমাদের এমন মর্মস্পর্শী ভাষায় উপদেশ দিলেন যে, চক্ষু অশ্র“সজল হয়ে গেল এবং হৃদয় ভীত-বিহ্বল হয়ে পড়ল। এমন সময় একজন বলে উঠল, হে আল্ল­াহর রসুল! মনে হচ্ছে এটা যেন আপনার বিদায়ী ভাষণ। অতএব আপনি আমাদের আরও বেশি উপদেশ দিন। তখন রসুলুল্ল­াহ (সা.) বললেন, আমি তোমাদের আল্ল­াহভীতির উপদেশ দিচ্ছি। আমি তোমাদের আমিরের আদেশ শুনতে ও মান্য করতে উপদেশ দিচ্ছি যদিও তিনি একজন হাবশি গোলামও হন। কেননা আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে, তারা অতিসত্বর বহু মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাতকে এবং সুপথপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকেই আঁকড়ে ধরবে। তাকে কঠিনভাবে ধরবে এবং মাড়ির দাঁতগুলো দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে (মুসলিম : হাদিস নম্বর ১৭১৮; আবু দাউদ : হাদিস নম্বর ৪০৬৭)।

লেখক : এমফিল গবেষক, খতিব, মনিপুর বাইতুর রওশন জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর