বুধবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মানবসেবার বিকল্প নেই

ইঞ্জিনিয়ার এম এ মান্নান

মানবসেবার বিকল্প নেই

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে যে ভালোবাসেন তা সাধারণ বিবেচনায়ও বোধগম্য। সেহেতু আমরা যদি অন্য মানুষের পাশে দাঁড়াই, সমাজ ও এলাকার মানুষের কল্যাণে কাজ করি তবে দুনিয়ার জীবনে যেমন মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যাবে তেমন পরকালের জীবনেও পুরস্কৃত হওয়ার সুযোগ থাকবে।

মানবসেবাকে সে কারণে দুনিয়ার সব ধর্মেই বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন সেই মহান আল্লাহ কারোর মুখাপেক্ষী নন। কারোর সহযোগিতা তাঁর প্রয়োজন হয় না। কিন্তু আমরা যদি তাঁর সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়াই তবে তিনি খুশি হন। স্রষ্টাকে সন্তুষ্ট করার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো মানবসেবা।

আমরা যদি আমাদের কর্মজীবনে, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে মানবসেবাকে লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিই, তবে আমাদের সমাজ সুন্দর হবে। আমাদের রাজনীতি কল্যাণের বাতিঘর হিসেবে বিবেচিত হবে।

আমাদের দেশ প্রতিদিনই এগিয়ে যাচ্ছে। যে বাংলাদেশ ছিল দুর্ভিক্ষ ও ক্ষুধার দেশ সে দেশের মানুষ তিন বেলা খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এটি সম্ভব হয়েছে স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশের কারণে। যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই কী দেখব আমরা। এই বাংলাদেশে শায়েস্তা খানের আমলে যখন টাকায় ৮ মণ চাল পাওয়া যেত তখনো দুর্ভিক্ষ হতো। মানুষ না খেয়ে থাকত। ব্রিটিশ আমলে দেশের এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ প্রতি  তিনজনের একজন মানুষ মরেছে ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে। পাকিস্তান আমলেও ক্ষুধা আর অনাহার ছিল আমাদের নিত্যসঙ্গী।

স্বাধীনতা আমাদের সে ইতিহাস ছুড়ে ফেলার সাহস জুগিয়েছে। আল্লাহ সেই জাতিকে সাহায্য করেন যে জাতি তার নিজের অবস্থার পরিবর্তন চায়। এ দেশ স্বাধীন হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মতো সৎ ও সাহসী নেতার আবির্ভাব ঘটেছিল বলে। এ দেশ স্বাধীন হয়েছে বঙ্গবন্ধু তাঁর পাশে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মনসুর আলী ও কামারুজ্জামানের মতো নিবেদিতপ্রাণ নেতাদের পেয়েছিলেন বলে।

আমরা দেশ থেকে দুর্ভিক্ষকে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলতে পেরেছি। তবে এতে সন্তুষ্ট থাকলে চলবে না। দেশের মানুষ যাতে সুখী-সমৃদ্ধিশালী জীবন গড়ার সুযোগ পায় সে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। এ লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজন সৎ নেতৃত্ব। মানবসেবাকে ইবাদতের অংশ হিসেবে যারা বেছে নিতে চান প্রতিটি পর্যায়ে তাদেরই বেছে নিতে হবে। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে গত এক দশকে যে নজরকাড়া সাফল্য অর্জিত হয়েছে, তা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার মতো সৎ ও হার না মানা নেতৃত্বের সুবাদে। এ লড়াইয়ের কারণে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশের সোপানে পা দিতে সক্ষম হয়েছে। উন্নত দেশের সোপানে পা দিতে আরও কঠিন লড়াই চালাতে হবে। এ লড়াইয়ে জিততে হলে সংসদের প্রতিটি আসনে যাতে সৎ ও নিবেদিতপ্রাণ নেতারা দলের মনোনয়ন পান তা নিশ্চিত করতে হবে। বসন্তের কোকিল ও কাউয়ারা যাতে থাবা বিস্তার না করতে পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

এ প্রসঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে চাই। আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে দলের জন্য ত্যাগ স্বীকারকে নিজের জীবনের ব্রত হিসেবে ভেবেছি। ২০০৬ সালে কিশোরগঞ্জ-২ আসনের বয়োবৃদ্ধ এমপি ডা. মান্নানের বদলে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আমি নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করি। নিজের পক্ষে কর্মীদের সংগঠিত ও জনমত গড়ে তুলতে সক্ষম হই। ডা. মান্নান মনোনয়ন না পাওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হন। সভানেত্রী শেখ হাসিনা তার প্রতি সহনুভূতিশীল হয়ে আমাকে ত্যাগ স্বীকারের পরামর্শ দেন এবং বলেন পরবর্তী নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। নেত্রীর ইচ্ছাকে সম্মান জানাতে তাঁর সিদ্ধান্ত মেনে নিই।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনেও নেতৃত্ব দিচ্ছে বঙ্গবন্ধুর দল। ফলে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে খুঁজে বের করতে হবে কোন এলাকায় কার সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক ভালো। সাধারণ মানুষের কল্যাণে যেসব নেতা-কর্মী নিবেদিতপ্রাণ ভূমিকা পালন করেছেন তাদের এগিয়ে নিতে হবে।

আজকের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের ফসল। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার বিশ্বাস, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে মুক্তিযুদ্ধের অপরাজেয় চেতনা সর্বক্ষেত্রে ধারণ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার কেউ যাতে সংসদে ঠাঁই না পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক আওয়ামী লীগে কোনো পরগাছা যেন ঠাঁই না পায় তা নিশ্চিত করা জরুরি। আগামী নির্বাচনকে সহজ চোখে দেখার সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে চলবে না নতজানু হয়ে চলার পথ বেছে নেবে, তা নির্ধারণ হবে আগামী নির্বাচনে। বিদেশি মদদে ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে অশুভ শক্তির ঐক্য। এনজিওগুলো অবতীর্ণ হয়েছে রহস্যজনক ভূমিকায়। তাদের ষড়যন্ত্র রুখতে সঠিক লোক বেছে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

 

লেখক : রাজনৈতিক

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর