শনিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নবী (সা.)-এর শান ও মান

মুফতি মাও. মো. এহছানুল হক মোজাদ্দেদী

নবী (সা.)-এর শান ও মান

মহান আল্লাহর যত সৃষ্টি আছে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, সবচেয়ে মর্যাদামন্ডিত সৃষ্টি হলেন হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার সুবহে সাদিকের সময় মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এসেছেন রহমাতুল্লিল আলামিন হিসেবে। এ আগমনে বিশ্বের বুকে উদ্‌যাপিত হয় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী। তাঁর ওপরই নাজিল হয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন। যদিও আগমন তাঁর সব নবীর পরে কিন্তু তাঁর নবুয়ত সবার আগে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবায়ে কিরাম আরজ করলেন ইয়া রসুলুল্লাহ! আপনার জন্য নবুয়ত কখন নির্ধারণ করা হয়েছে? তিনি বললেন, আদম (আ.)-এর যখন শরীর ও প্রাণ ভিন্ন স্থানে ছিল তখনো আমি নবী ছিলাম। তিরমিজি। তাঁর মর্যাদা সম্পর্কে আমরা যতই বলি, যতই লিখি, যতই শুনি তা কখনই শেষ হবে না, পরিপূর্ণ হবে না। কবি বলেন, ‘খোদা কি আজমত কিয়া হ্যায়, মুহাম্মদ মোস্তফা জানে মাকামে মোস্তফা কিয়া হ্যায়, মুহাম্মদ কা খোদা জানে।’

অর্থাৎ, ‘মহান আল্লাহর বড়ত্ব-মহত্ত্ব শুধু মুহাম্মদই (সা.) ভালো জানেন। আর মুহাম্মদের (সা.) শান-মানও আল্লাহতায়ালাই ভালো বোঝেন।’

আমাদের মতো স্বল্প জ্ঞানের মানুষের পক্ষে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রকৃত শান-মান বর্ণনা করা সম্ভব নয়। আর কতটুকুই বা আমরা বলব, তা মূলত মহাসমুদ্রের এক বিন্দু পানির চেয়ে অনেক কমই বলা হবে। তাই তো শেখ সাদি (রহ.) বলেছেন, ‘বাদ আজ খোদা বুজুর্গ, তুই কিস্্সা মুখতাসার’। অর্থাৎ, ‘হে সরকারে কায়েনাত, আপনার মর্যাদা আর কতটুকুই বলতে পারব, সংক্ষেপে এতটুকই বললাম, আল্লাহর পরেই আপনার স্থান।’ উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘একদিন জিবরাইল (আ.) এসে বললেন, হে মুহাম্মদ (সা.)! পূর্ব থেকে পশ্চিম, সমগ্র ভূখ- আমি তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি কিন্তু আপনার মতো মর্যাদাসম্পন্ন আর কাউকে পাইনি। আপনার সম্মানে আপনার বংশ হাশিমকে এত মর্যাদা দেওয়া হয়েছে যে, হাশিম বংশের পিতার চেয়ে কোনো মর্যাদাম-িত পিতা আমি পৃথিবীর বুকে পাইনি।’ মাদারিজুন নুবুওয়াত। একদিন হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শান ও মান বর্ণনা করছিলেন। তিনি বললেন, ‘আল্লাহতায়ালা অন্যসব নবী (আ.) থেকে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।’ একজন প্রশ্ন করল, ‘কীভাবে, ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিন।’। ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন, ‘অন্যসব নবী সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আমি কোনো রসুলকেই তাঁর স্বজাতির ভাষা ছাড়া পাঠাইনি।’ সূরা ইবরাহিম, আয়াত ৪। আর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বলেছেন, ‘আপনাকে সব মানুষ ও জাতির জন্যই রসুল করে পাঠিয়েছি।’ সূরা সাবা, আয়াত ২৮। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শান-মান সম্পর্কে আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুহাম্মদ! আপনি বলুন, (দুনিয়ার মানুষ) তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো তবে আমার অনুসরণ করে চল। তাহলে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহগুলো মাফ করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাকারী ও পরম দয়াময়।’ সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৩১। তাহলে দেখা যাচ্ছে, আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে এবং আমাদের জীবনকে সুন্দর করে নিতে চাইলে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য-অনুসরণ এবং ভালোবাসা একান্তই অপরিহার্য।

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন বেতার ও টিভির ইসলামবিষয়ক উপস্থাপক; খতিব, মণিপুর বাইতুর রওশন জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর