শনিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে রসুল (সা.)-এর শিক্ষা

মুফতি মুহিউদ্দিন কাসেম : পেশ ইমাম ও ভারপ্রাপ্ত খতিব

জুলুম, নির্যাতন সবার ক্ষেত্রে, সব অবস্থায় হারাম। জুলুম, নির্যাতন ইসলাম সমর্থন করে না। সব ক্ষেত্রে সবার জন্য ন্যায়নিষ্ঠা ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা ও জুলুম, নির্যাতনের অন্ধকার থেকে সমাজকে মুক্ত রাখাই রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা। জুলুম, নির্যাতনের পরিণতি ও ভয়াবহতা বর্ণনা করে মহান আল্লাহ আল কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘তুমি কখনো এমন মনে করো না যে, জুলুমকারীরা যা করছে আল্লাহ সে বিষয়ে উদাস। তিনি তাদের সেদিন পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে যাচ্ছেন যেদিন তাদের চক্ষু আতঙ্কে স্থির দাঁড়িয়ে যাবে। তারা ভীতবিহ্বল চিত্তে আকাশের দিকে চোখ রেখে ছোটাছুটি করতে থাকবে। আতঙ্কে তাদের দৃষ্টি নিজেদের দিকেও ফিরবে না, তাদের অন্তর থাকবে উদাস।’ সূরা ইবরাহিম, আয়াত ৪২। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তবে অত্যাচারিত হওয়ার পর যারা প্রতিবিধান করে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কেবল তাদের বিরুদ্ধে যারা মানুষের ওপর অত্যাচার ও জোর-জুলুম চালায় এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে অরাজকতা সৃষ্টি করে বেড়ায়; তাদের জন্য আছে মর্মন্তুদ শাস্তি।’ সূরা শুরা, আয়াত ৪২।

জুলুমের ভয়াবহতা বর্ণনা করে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘জুলুমের পরিণতি হলো কিয়ামত দিবসের ঘোর অন্ধকার।’ মুসলিম, তিরমিজি। অন্য হাদিসে ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ বলেন, “হে আমার বান্দারা! জোর-জুলুম করাকে আমি আমার ওপর হারাম করেছি এবং একে আমি তোমাদের মধ্যে হারাম ঘোষণা করছি।” কাজেই তোমরা একে অন্যের প্রতি জুলুম করবে না।’ মুসলিম, তিরমিজি। অন্য হাদিসে ইরশাদ করেছেন, ‘কিয়ামত দিবসে সব পাওনাদারের প্রাপ্য পরিশোধ করা হবে। এমনকি শিংবিহীন বকরির ক্ষতিপূরণ শিংওয়ালা বকরি থেকে আদায় করা হবে।’ মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ। জুলুম, নির্যাতন সবার ক্ষেত্রেই হারাম বিশেষ করে নারী ও শিশুদের প্রতি কোনোভাবেই যাতে জুলুম না হয় এ বিষয়ে কোরআন ও হাদিসে বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। নারীর প্রতি ভালো ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে আল্ল­াহ কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ভাবে জীবনযাপন কর।’ সূরা নিসা, আয়াত ১৯।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘সাবধান! তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচার রক্ষা করে চলবে। কারণ তারা তোমাদের কাছে বন্দীদের মতো আবদ্ধ থাকে। তারা তোমাদের অবাধ্যতা অবলম্বনের আগে তাদের ওপর কঠোরতা আরোপের কোনো অধিকার তোমাদের নেই।’ তিরমিজি, ইবনে মাজাহ। অন্য হাদিসে ইরশাদ করেছেন, মুমিনদের মধ্যে ইমানের দিক দিয়ে সর্বাপেক্ষা পূর্ণতার অধিকারী হলো সেই ব্যক্তি যে তাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুন্দর চরিত্রের অধিকারী এবং যে নিজ স্ত্রীর সঙ্গে সবার তুলনায় অধিকতর কোমল আচরণকারী।’ তিরমিজি, মুসনাদে হাকিম। শিশুদের প্রতি ভালো ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান করে না সে আমার উম্মত নয়।’ আবু দাউদ, তিরমিজি। উল্লি­খিত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো জুলুম, নির্যাতন সবার ক্ষেত্রেই হারাম বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে অবশ্যই বর্জনীয়। সুতরাং আসুন আমরা নারী ও শিশুদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করি। সব ধরনের গুনাহ বর্জন করি। জুলুম, নির্যাতন পরিহার করি। তাদের প্রতি সদয় হই। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

সর্বশেষ খবর