সোমবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

জনগণের সরাসরি ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়

মেজর অব. মো. আখতারুজ্জামান

জনগণের সরাসরি ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়

সম্প্রতি নির্বাচন উপলক্ষে দেশের একজন পরিচিত অর্থনীতিবিদ অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, রাজনীতিবিদরা ব্যবসায়ী হয়ে গেছে এবং রাজনীতি এখন একটি বড় ব্যবসা। অর্থনীতিবিদ তো শতভাগ সত্য কথাই বলেছেন। তবে তার ক্ষোভের কারণটি বোঝা গেল না। ক্ষোভটি উনার ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে কিনা তাও বোধগম্য হলো না। অনেকে হয়তো আমার মতো একজন রাজনৈতিক ব্যবসায়ী হিসেবে ধরে নিতে পারেন যে, ব্যবসাটি অর্থনীতিবিদদের একচেটিয়া বিচরণ ক্ষেত্র সেখানে রাজনীতিবিদরা এসে ভাগ বসাবে এটি তাদের কাছে সুখকর নয়তাই হয়তো এই ক্ষোভ। দেশের ব্যবসায়ী অর্থনীতিবিদদের কামনা হলো বোকাসোকা রাজনীতিবিদরা রাস্তায় চুঙ্গা ফুঁকে নিজেদের ব্যস্ত রাখবে আর তারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে আরামে বসে বসে জাতিকে মূল্যবান জ্ঞান বিতরণ করে যাবেন! একজন অর্থনীতিবিদ সব কিছু জানেন এবং বোঝেন। উনারা রাষ্ট্র্র, ধর্ম, সমাজ, রাজনীতি, ইহলৌকিক, পারলৌকিক, মাটির ওপরে, গভীরে, আকাশে, অন্তরীক্ষে, অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সব কিছু বোঝেন, জানেন এবং জ্ঞান বিতরণ ও উপদেশ দিয়ে যান পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ দক্ষিণার বিনিময়ে। উনাদের প্রতিটি কাজের পেছনে অর্থ, পদ, পদবি, সুযোগ-সুবিধা, ক্ষমতার ভাগ ইত্যাদি সর্ববিধ নগদ প্রাপ্যের জন্য লোভে চিক চিক করা চেহারার মধ্যে লম্বা জিহ্বাটি যে বেরিয়ে থাকে, তা যে জনগণ বোঝে এই সরল তথ্যটি উনাদের জানা নাই!

বর্তমান বিশ্বে রাজনীতি অবশ্যই একটি ব্যবসায়ী বিষয়। দেশের জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করতে হলে দেশকে একটি সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, যার কোনো বিকল্প নাই। তবে এর জন্য প্রয়োজন একটি বিশাল অর্থনৈতিক যজ্ঞ যা ব্যবসায়ীরা পরিচালনা করবে। অর্থনীতিবিদদের পেশাগত দায়িত্ব হলো সেই যজ্ঞের হিসাব-নিকাশ ও মূল্যায়ন করা। রাষ্ট্রের এই অর্থনৈতিক যজ্ঞকে এককথায় বলা যায় রাষ্ট্র্রীয় ব্যবসা এবং অতি স্বাভাবিকভাবেই এই ব্যবসা পরিচালিত হবে রাষ্ট্র্র দ্বারা। এখন আরও অতি স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসবে রাষ্ট্র্র পরিচালনা করবে কে বা কারা? এই প্রশ্নের উত্তর কঠিন কোনো বিষয় নয়, যার জন্য আমাদের গবেষণা করে বের করতে হবে। আমাদের রাষ্ট্র্র একটি জাতিগত রাষ্ট্র্র যার একটি সংবিধান রয়েছে। এই সংবিধানের মধ্যে আমাদের রাষ্ট্র্র চলবে বা চলতে বাধ্য। আমাদের সংবিধানে পরিষ্কার করে লেখা আছে আমাদের রাষ্ট্র্রের গঠন, ধরন, স্বত্ব, পরিচালনা করার নির্দেশাবলি। সংবিধানের প্রথমেই আছে এর              প্রস্তাবনা যার প্রথমেই বলা হয়েছে “আমরা, বাংলাদেশের জনগণ, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করিয়া জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি।”

রাষ্ট্র্রটি যথাযথ প্রতিষ্ঠা করার পর তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে সংবিধানের প্রথমভাবে ১ অনুচ্ছেদে যেখানে স্পষ্ট করে বলা আছে “১। বাংলাদেশ একটি একক, স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র, যাহা “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” নামে পরিচিত হইবে”। কাজেই বাংলাদেশ একটি প্রজাতন্ত্র অর্থাৎ জনগণের রাষ্ট্র্র এবং এই রাষ্ট্র্রের মালিকানা সুস্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে সংবিধানের ৭(১) উপ-অনুচ্ছেদ যেখানে বলা হয়েছে “(১) প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে”। সংবিধান রাষ্ট্র্রগঠন, সংজ্ঞায়ন ও মালিকানা নির্ধারণ করার পর গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র্রটি কীভাবে পরিচালিত হবে তাও স্পষ্ট করে দেওয়া আছে সংবিধানের ২য় ভাগে “রাষ্ট্র্র পরিচালনার মূলনীতি” শিরোনামে। সেখানে ১১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে “১১। প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে”।

উল্লি­খিত সংবিধানের ধারাগুলো পর্যায়ক্রমে আলোচনা করে এটি সুস্পষ্ট যে, আমাদের রাষ্ট্র্রটি পরিচালিত হবে গণতান্ত্রিক কাঠামোতে যেখানে প্রশাসনের সব পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইতে হইবে। এখানে লক্ষণীয় যে সংবিধানের এই ধারায় বলা হয়েছে, “প্রশাসনের সকল পর্যায়ে” নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কথা বলা হয়েছে। এই “সকল পর্যায়” কথাটি সংবিধানে সুস্পষ্ট করা হয় নাই তবে প্রশাসনের কতগুলো ধাপ নির্ধারণ করা হয়েছে। সংবিধানের বিভিন্ন ভাগে যেমন চতুর্থ ভাগে নির্বাহী বিভাগ যেখানে রাষ্ট্র্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভা, স্থানীয় শাসন, প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ এবং অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ সম্বন্ধে বলা হয়েছে। তেমনি আইনসভা সম্বন্ধে বলা হয়েছে পঞ্চম ভাগে। ষষ্ঠ ভাগে বিচার বিভাগ, সপ্তম ভাগে নির্বাচন, অষ্টম ভাগে মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, নবম ভাগে বাংলাদেশের কর্মবিভাগ সম্বন্ধে বলা হয়েছে। বিষয়টি সংবিধানে আরও পরিষ্কার করা দরকার ছিল বলে অনেকের ধারণা। তবে সংবিধানে এটি সুস্পষ্ট যে গণতান্ত্রিক হবে যেখানে শুধুমাত্র এবং একমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই রাষ্ট্র্র পরিচালনা করবে। এই নির্বাচনে দেশের যে কেউ অংশগ্রহণ করতে পারে বা পারবে। এখানে শুধুমাত্র রাজনীতিবিদরাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নাই। তবে রাজনীতিবিদদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে রাষ্ট্র্রের অন্য সুবিধাভোগী গোষ্ঠী জ্ঞান দান করবে বা কটু মন্তব্য করবে, তাও গ্রহণযোগ্য নয়।

অর্থনীতি, সমাজনীতি, ভূগোল ইতিহাসের মতো রাজনীতিও একটি বিষয়। রাজনীতির মূল প্রতিপাদ্য হলো একটি জনগোষ্ঠী সম্মিলিতভাবে আলোচনা করে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে পৌঁছাবে। তাই অনেকে বলেন রাজনীতি হলো সিদ্ধান্ত নেওয়ার একটি প্রক্রিয়া, যে সিদ্ধান্তটি একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ওপর প্রযোজ্য হবে। অতীতে যেমন নগর রাষ্ট্র্র ছিল যেখানে নাগরিকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বা তাদের নিয়ন্ত্রণ বা শাসন প্রয়োজন হতো যেখানে সবাই বসে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হতো। তাই নগর রাষ্ট্র্রে সব জ্ঞানী-গুণীদের যেমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশগ্রহণ করার সুযোগ ছিল তেমনি পেশিশক্তির গু-া-পা-ারাও সেখানে সমভাবে বা কখনো কখনো ব্যাপক হারে উপস্থিত থেকে তাদের পক্ষেই সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করতে পারত। এখন আর পৃথিবীতে কোনো নগর রাষ্ট্র্র নাই। এখন রাষ্ট্র্র অনেক ব্যাপক। শুধু জাতি, ধর্ম, ভাষা বা অঞ্চলভিত্তিক নয়। এমনকী আদর্শগত ঐক্যের ভিত্তিতেও রাষ্ট্র্র সীমাবদ্ধ নয়। রাষ্ট্র্র এখন বহুমাত্রিক এবং বহু দল-মতের মানুষের এবং বিভিন্ন ধর্ম ও জাতির সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত একটি শাসন এবং বহুমাত্রিক জনগণকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা। বর্তমান বিশ্বে রাষ্ট্র্রের নিয়ম-নীতিও রাজনীতির বিবেচ্য নয়। বর্তমান রাষ্ট্র্র কাঠামোতে নিয়ন্ত্রণ ও শাসনই মুখ্য। এই বাস্তবতার পরও কল্যাণ রাষ্ট্র্র বা উন্নয়ন রাষ্ট্র্র এখন আধুনিক রাজনীতিবিদদের কাছে নতুন বিষয়। নিকট অতীতে বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর রাজনীতি ছিল গণতন্ত্র ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বিশ্বের একপক্ষ গণতন্ত্রের মাধ্যমে বহু মত ও দলের বিকাশের মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে শাসন করার কাঠামোর ভিত্তিতে রাষ্ট্র্রগঠনের চেষ্টা করে আসছিল। পাশাপাশি আরেকটি ব্যবস্থা জনগণকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে রাষ্ট্র্র প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছিল। তখন রাজনীতির নতুন সংজ্ঞা দাঁড়ায় যে রাজনীতি হলো ক্ষমতা অর্জন করা যার মাধ্যমে জনগোষ্ঠীকে সুশাসনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। রাজনীতির এই নতুন সংজ্ঞাটিকে সামনে নিয়ে এসে বিশ্বব্যাপী কিছু আন্তমহাদেশীয় কিছু প্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে রাজনীতিকে দেশীয় গ-ির মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে বিশ্বব্যাপী একটি উন্নয়ন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের পক্ষে বিশ্বব্যাপী নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরি করা যেখানে নিজেদের ব্যক্তিগত জ্ঞান-গরিমা ও আন্তর্জাতিক পরিপরিম-লে নিজেদের অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে বিশ্ব রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবে। এই পেশাভিত্তিক আন্তর্জাতিক রাজনীতিকরণের কারণে এক সময় পৃথিবী দুটি শিবিরে ভাগ হয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরে সমাজতন্ত্রী রাজনীতি অনেকটা মুখথুবড়ে পড়ে যার ফলে সারা বিশ্বে নিয়ন্ত্রণবাদী রাজনীতি হারিয়ে যেতে বসে। রাজনীতির এই শূন্যস্থান পূরণে সারা বিশ্বেই কোনো না কোনো রূপে উগ্র ধর্মীয় রাজনীতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে যা সারা বিশ্বে একটি সন্ত্রাসী অবস্থা সৃষ্টি করে। বর্তমান বিশ্ব তথা রাজনীতিবিদরা এখন সন্ত্রাস এবং সন্ত্রাস দমন এ দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। একই রাষ্ট্র্রে এখন যদি কোনো একটি রাজনৈতিক দল সন্ত্রাসের পক্ষে থাকে তাহলে আরেকটি পক্ষ থাকে সন্ত্রাসের বিপক্ষে। এ হলো বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক মেরুকরণ যার পূর্ণ সুযোগ নিচ্ছে রাষ্ট্র্রের প্রশাসন। বর্তমান বিশ্বে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ক্ষমতাসীনদের পক্ষে থাকে। বর্তমান বিশ্বে যে রাজনৈতিক দলই সরকারের বিরোধিতা করে তাদের সন্ত্রাসী বানিয়ে নির্মূল করে দেওয়ার চেষ্টা করাই এখন নতুন রাজনীতি।

গত ৫০ বছরে পৃথিবীর জনসংখ্যা বিপুল হারে বেড়েছে বিশেষ করে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। তাই জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করার এখন একটি নতুন রাজনীতির জম্ম  দিয়েছে। সন্ত্রাস দমন করে সরকার তাদের ক্ষমতা পুঞ্জীভূত করতে পারছে কিন্তু সেই সঙ্গে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন না হলে ক্ষমতাসীনদের জন্য নতুন হুমকির সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে। অনেক রাষ্ট্র্রই তাদের জনগোষ্ঠীকে নিজের সীমানার মধ্যে ধরে রাখতে পারছে না। ফলে উন্নত দেশগুলোর জন্য নতুন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এখন উন্নত বিশ্বের সামনে যে সমস্যা সেটি হলো যদি অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দারিদ্র্যপীড়িত মানুষগুলোকে তাদের নিজেদের দেশে ধরে রাখা না যায় তাহলে ভবিষ্যতে উন্নত দেশগুলোতে জনসংখ্যার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে তারা নিজেদের দেশেই ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। এই বিলুপ্তির আশঙ্কা থেকে যে রাজনীতির জম্ম  হয়েছে তার নাম উন্নয়নের রাজনীতি। রাজনীতিবিদরা এখন আর জাতিগত সমস্যার সমাধান করবে না, ভাষাগত, ধর্মগত বা অঞ্চলগত বিরোধ এখন আর রাজনৈতিক সমস্যা নয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ইত্যাদি আর রাজনৈতিক বিবেচনা নয়। এখন রাজনীতি একটিইতা হলো উন্নয়নের রাজনীতি। সারা দেশকে উন্নয়নযজ্ঞে নামিয়ে দিতে হবে। সারা দেশে সব মানুষের মাঝে অর্থের লিপ্সা জাগিয়ে দিতে হবে। সবাই অর্থের পেছনে ছুটবে। পুরনো আস্থা, বিশ্বাস তথা মূল্যবোধ ছেড়ে নতুন মূল্যবোধ তৈরি করার চেষ্টা করবে। চোর চুরি করে অর্থ আনবে- চোরকে ধরে আরেকজন অর্থ কামাবে আরেক জন চোরকে বিচার করে অর্থ কামাবে। কেউ কেউ এই চুরির অর্থের হিসাব রেখে অর্থ কামাবে কেউ এই চুরির অর্থ কীভাবে অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে তা বের করে অর্থ কামাবে কীভাবে আরও দক্ষতার সঙ্গে চুরি করা যায় তা শিক্ষা দিয়ে অর্থ কামাবে কীভাবে সব চুরির অর্থ নিরাপদ থাকে তা নিশ্চিত করে কেউ অর্থ কামাবে। চুরির অর্থ নিরাপদে জমা রেখে কেউ অর্থ কামাবে। চুরি করে কেউ যেন অর্থ নিয়ে পালাতে না পারে তা নিশ্চিত করে অর্থ কামাবে। বাহির থেকে কেউ যেন জোর করে ঢুকে চোরের সম্পদ না নিয়ে যেতে পারে তা নিশ্চিত করে অর্থ কামাবে। চুরির খবর যাতে কেউ না জানতে পারে এবং কোথায় কোথায় চুরি করার সুযোগ আছে তা আগাম জানিয়ে দিয়ে কেউ অর্থ কামাবে। চোরদের স্বাস্থ্য ঠিক রেখে অনেকে অর্থ কামাবে। এসব যজ্ঞ যাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে তারাই হবে এ দেশের রাজনীতিবিদ এবং এই রাজনীতিবিদরাই সারা দেশের জন্য উন্নয়নের মহাসড়ক তৈরি করে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কাজেই রাজনীতি এখন অবশ্যই ব্যবসা এবং রাজনীতিবিদেরা সফল ব্যবসায়ী।

রাজনীতিবিদদের মধ্যে কারা দেশ চালাবে তা নির্ধারিত হতে হবে নির্বাচনের মাধ্যমে; যা সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা আছে। নির্বাচন মানেই হলো প্রতিযোগিতা। জনগণের মাঝে প্রতিযোগিতায় যে ব্যক্তি নির্বাচিত হবেন তিনিই জনপ্রতিনিধি। নির্বাচনে যোগ্য কে তা সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলে দেওয়া হয়েছে। কাজেই সংবিধানের বাইরে কারও কিছু বলতে চাইলে আগে জনগণের প্রতিনিধি হতে হবে। তার পর সংবিধানে তার বা তাদের মনমতো করার দাবি তোলা সমীচীন হবে। রাজনীতিবিদদের নিয়ে কারও কোনো কথা বলতে হলে আগে রাজনীতিতে আসা উচিত। রাজনীতির উচ্ছিষ্ট খাওয়ার মানসে জনপ্রতিনিধিদের সম্বন্ধে অহেতুক মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা সংবিধানই বলে দিয়েছে। দেশ গণপ্রজাতন্ত্রী, দেশের মালিক জনগণ এবং দেশ পরিচালনা করবে জনপ্রতিনিধিগণ। এই জনপ্রতিনিধি নির্ধারণের জন্য নির্বাচন। তাই সবাইকে নির্বাচনে এসে দেশ নিয়ে জনগণ নিয়ে কথা বলবে এটাই জনগণের প্রত্যাশা।   

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য।

সর্বশেষ খবর